এই ক্রিসমাসে ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে ১৮২৬ বন্দী

এমএফএ জামান: আজ ব্রিটেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রিসমাস ডে অর্থাৎ শুভ বড়দিন উদযাপিত হচ্ছে। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা তাদের পরিবার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এদিনটি উদযাপন করছেন। কিন্তু সবার জন্য ভাগ্য সুপ্রসন্ন নয়। এই ক্রিসমাসে ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে প্রায় ১৮২৬জন লোক আটক রয়েছেন। যাদের মধ্যে ১১৫২জন শুধু এসাইলাম আবেদন ব্যর্থ হওয়ার কারণে নিজ দেশে ফেরতের অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু তারা জানেনা কখন তাদের পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ক্রিসমাস ডে তে বন্দীর সংখ্যা ছিল ১৭৮৪জন। ডিটেনশন সেন্টারে বন্দীদের সংখ্যা সংকুলান না হওয়ায় প্রায় ৩০০জনকে স্থানীয় জেলে পাঠানো হয়েছে। তাদের এই মানবেতর জীবনের কথা হয়তো ব্রিটেনের অনেকেই জানে না। আজ তারা সমাজ পরবিার থেকে বিচ্ছিন্ন। কেউ হয়তো মাস কিংবা বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছেন। এই ১৮২৬জন বন্দীদের মধ্যে ১০জন গত ছয় মাস, ২৭জন গত এক বছরেরও বেশী এবং ৩জন গত দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে ডিটেনশন সেন্টারে পড়ে আছেন।

ব্রিটেনের রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি অভিবাসীদের প্রতি এই আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, এইসব লোকদের প্রতি সরকারের এই আচরণ সত্যিই অমানবিক এবং নির্মম। এসব লোকদের বছরের পর বছর আটকে না রেখে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের এই অবস্থার সুরাহা করার দাবি জানাচ্ছি। এসব ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টার গুলোর দেখবাল করতে আমাদের ট্যাক্সের টাকার অপব্যয় করা হচ্ছে।
লিবারেল পার্টির মুখপাত্র ক্রিষ্টিন জার্ডিন বলেন, প্রায় দুই হাজার লোক এই ক্রিসমাস ডে তে তাদের প্রিয়জন থেকে আজ অনেক দূরে আমাদের দেশের ডিটেনশন সেন্টারে অমানবিক মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। এই চিত্রটা হলো বর্তমান কনজার্ভেটিভ সরকারের বৈরী এবং বিদ্বেষী মনোভাবের একটি নির্মম উদাহরণ। এই হাজার কয়েক লোক যারা কোন কারণে আজ বিপদগ্রস্থ, গৃহহীন, দেশ ছাড়া তাদেরকে আমাদের জেলে দিনের পর দিন জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ করে আটকে রেখে এই ক্রিসমাসে কনজার্ভেটিভ পার্টি মানবতাকে কি উদাহরণ দিলো।
আমরা লিবারেল ডেমোক্রেট বিশ্বাস করি, সরকারকে মানবিক হতে হবে। ২৮ দিনের মধ্যে ডিটেনশন সেন্টারের বন্দীদের সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং অধিকাংশ ডিটেনশন সেন্টার গুলো বন্ধ করে ট্যাক্স এর টাকার অপব্যায় রোধ করতে হবে।
বিগত কয়েক বছর ধরে ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন ডিটেনশস সেন্টার গুলোতে বন্দীদের সংখ্যা ক্রমাগত হারে বেড়েই চলেছে। এসব সেন্টার গুলোর ব্যয়ভার বহন করতে প্রতি বছর জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে প্রায় ৮৯ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যায় হয়। গত বছর অন্যায় ভাবে জেলে আটকে রাখার কারণে হোম অফিস প্রায় ৮.২মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ প্রদান করে ৩১২জন লোককে। যা দিয়ে দেশের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা সম্ভব হতো।
গত মাসে ব্রিটেনের সুপ্রিমকোর্ট এসাইলাম বিষয়ে একটি মন্তব্যে বলেন, অন্যায়ভাবে ডিটেনশন সেন্টারে অনেককে আটকে রাখা হয়েছে। আর হোম অফিস তাদেরকে ক্ষতিপূরণ বাবদ জনগণের ট্যাক্সের টাকাকে শুধুই অপচয় করছে।
কনজার্ভেটিভ সরকার বিগত ১০ বছরে অভিবাসন আইন এবং উইন্ডরাস স্ক্যান্ডাল নিয়ে বেশ সমালোচনার সম্মূখীন হয়েছে। তৎকালীন হোম মিনিষ্টার থেরেসা মে এর বিভিন্ন পদক্ষেপ অভিবাসীদের মানবিক দাবি গুলোকে ক্ষুন্ন করেছে। অনেককে অন্যায় ভাবে ব্রিটেন থেকে বিতাড়িত করা হয়। তার পরবর্তী হোম মিনিষ্টার অ্যাম্বার রোড উইন্ডরাস স্ক্যান্ডাল ফাঁস হওয়ার কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে হোম অফিসের অমানবিক আচরণের প্রতিবাদে গত বছর একজন মহিলা বন্দী ব্রাডফোর্ডশায়ারের ইয়ার্লস উড ডিটেনশন সেন্টারে অনশনে যান।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button