জীবন এতো ছোট ক্যানে!

‘সেই তুমি কেন এতো অচেনা হলে, এই আমি কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম….’ এই গান শুনে বড় হয়েছি। বড় ভাইরা গান শুনতো বাসায় ক্যাসেট প্লেয়ারে অনেক সাউন্ড দিয়ে আর ছোট্ট আমারও মুখস্ত হয়ে যেতো গানের কথা, সুর।

হেন কোন গান নেই শোনা হয়নি, হেন এ্যালবাম নেই আইয়ুব বাচ্চু বা এলআরবির যা কেনা হতো না।

বড় হবার পর ইউনিভার্সিটি ভর্তি হলাম। পাখা গজালো। সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় জাহাঙ্গীরনগর থেকে ইয়ার লস দিয়ে ভর্তি হওয়া হলের বান্ধবি নিয়ে গেল জাহাঙ্গীরনগর রাতে থাকবো প্রীতিলতা হলে। কনসার্ট হবে জেমস, আইয়ুব বাচ্চুর।

আমি শিহরিত। জীবনে প্রথম সামনাসামনি দেখবো তাদের। বাসায় বললে জীবনেও পারমিশন পাবো না। কিন্তু মনে ভয় না বলে গেলে যদি কোন বিপদ হয়, এক্সিডেন্ট করে মরে গেলে আব্বা-আম্মা তো খোজও পাবে না। তাই বড় ভাইয়াকে ফোন করে জানালাম। রাতে থাকবো শুনে গাইগুই করলো প্রথমে কিন্তু যখন বুঝলো যে কনসার্ট শুরুই হবে রাতে তাই আর কিছু বলল না।
সেই যে শুরু আমার নিজস্ব মুগ্ধতা! এরপর প্রতিবছর ইউনিভার্সিটির কনসার্টে আসতেন তিনি।

তারপর অনেক বছর….

ভারতীয় হাইকমিশনারের বাসায় নিমন্ত্রণ। তিতলি তখন ৬ মাসের পেটে। শর্ট লিস্টেড গেস্ট কিন্তু তারকা ঝলমলে প্রোগ্রাম। দেখি উনি একটি চেয়ারে বসে আছেন। লোকজন আসছে, মৃদু হেসে কথা বলছেন। চোখ-মুখে ফোলা ভাব, চেহারায় ক্লান্তি।

কিছু না ভেবে কাছে গিয়ে বললাম আপনার সাথে ছবি তুলতে চাই।

পরিচয় হলো, সাংবাদিকতার অনেক কে নিয়ে কথা হলো। অনাগত সন্তানের জন্য উচ্ছ্বসিত হয়ে শুভকামনা জানালেন। অন্যদের মতো ঘরে বসে না থেকে এই সময়টায় স্বাভাবিক অনুষ্ঠানাদিতে যাচ্ছি বলে এপ্রিশিয়েট করলেন।

আমি একজন শিল্পীর উদারতার সাথে পরিচিত হলাম, শিখলাম অনেক কিছু।

অফিসে আসার আগেও জানতাম না উনি মারা গেছেন। আচমকা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। সেই রুপালী গীটার যেন ঝনঝন করে বেজে উঠলো মাথায়। হায় জীবন! জীবন এতো ছোট ক্যানে!

-ফারজানা প্রিয়দর্শিনী আফরিন এর টাইমলাইন থেকে

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button