ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের অশ্লীলতার পক্ষে অবস্থান

নিজাম উদ্দীন সালেহ: সমকামিতা ও ব্যাভিচারকে বৈধ আখ্যা দিয়ে রায় প্রদানের পর এবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পরকীয়া অর্থাৎ পরস্ত্রীর সাথে অবৈধ যৌনাচারকে বৈধ বলে রায় প্রদান করেছে। রায়ে সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় দন্ড বিধির পরকীয় সংক্রান্ত ৪৯৭ ধারাকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছে।

প্রদত্ত রায়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এই আইন স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর। এটা নারীদের স্বাতন্ত্র খর্ব করে। ইংরেজ শাসনামলে প্রণীত আইনকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একটি মামলার প্রেক্ষিতেই এই রায় দিয়েছে দেশটির শীর্ষ আদালত।

১৮৬০ সালের ওই আইনে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি কোনও নারী যৌন সম্পর্ক করলে এবং ওই স্বামীর অনুমতি না থাকলে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং জরিমানা অথবা উভয়ই হতে পারে। শীর্ষ আদালত সংশ্লিষ্ট রায়ে আরো বলেছে যে, নিছক পরকীয়া অপরাধ হতে পারে না। পরকীয়া সম্পর্কের কারণে জীবনসঙ্গী যদি আত্মহত্যা করেন এবং আদালতে যদি তার প্রমাণ দাখিল করা যায়, তবেই এটা অপরাধে প্ররোচনা হিসেবে গণ্য হবে।

একথা অনস্বীকার্য যে, প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিছু রীতিনীতি প্রথা ও সংস্কৃতি রয়েছে। রয়েছে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ। এদিক দিয়ে ভারতের দীর্ঘকালে গড়ে ওঠা কিছু নিজস্ব আদর্শ, রীতি নীতি ও মূল্যবোধ রয়েছে বলেই আমরা জানি। এই সংস্কৃতি ও মূূল্যবোধ বেদ উপনিষদের যুগ থেকে শুরু করে মুসলিম ও ব্রিটিশ শাসনকালে এবং পরবর্তী সময়ে স্বাধীন ভারতে গড়ে ওঠেছে।

ভারতের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ গঠন ও বিকাশে মুসলিম সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। মুসলিম সংস্কৃতি অখন্ড ভারতবর্ষের ভাষা, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ যেমন পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করেছে তেমনি বিকশিত ও সমৃদ্ধ করেছে। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওয়াহের লাল নেহেরুসহ আরো বহু মনিষীর বক্তব্য ও লেখা থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, সাম্প্রতিককালে দেশের এসব প্রতিষ্ঠিত আদর্শ সংস্কৃতি, রীতিনীতি ও মূল্যবোধ উড়িয়ে দিয়ে বিশেষভাবে দেশটির প্রায় ২০ কোটি মুসলিম ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর নীতি নৈতিকতা, আদর্শ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতি কোন তোয়াক্কা না করেই তাদের কোন মতামত ছাড়াই সমকামীতা, ব্যভিচার ও পরকীয়ার মতো অশ্লীল কাজকে বৈধতা প্রদান করেছে দেশটির সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্ট।

মানুষের রাজনৈতিক কিংবা ব্যক্তি স্বাধীনতা কখনো সীমাহীন ও অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। কারণ একজন মানুষের ইচ্ছা হলেই সে মানব ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু করার অনুমতি পেতে পারে না। ধূমপান বায়ূকে দূষিত করে বলেই প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ।

এতে শুধু ভারত নয় এ অঞ্চল জুড়ে যে অশ্লীলতার বিস্তার ঘটবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর এসবই করা হচ্ছে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাতনে্ত্রর দোহাই দিয়ে। মানুষের রাজনৈতিক কিংবা ব্যক্তি স্বাধীনতা কখনো সীমাহীন ও অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। কারণ একজন মানুষের ইচ্ছা হলেই সে মানব ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু করার অনুমতি পেতে পারে না। ধূমপান বায়ূকে দূষিত করে বলেই প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ।

একইভাবে নগ্নতা একটি অশ্লীল ও অশোভন কাজ এবং এতে সভ্যতা ও ভদ্রতা খর্ব হয়, তাই কারোর প্রকাশ্যে নগ্ন হয়ে চলাফেরা করার নিয়ম বা বিধি নেই। এসবই মানুষের স্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্রকে কিছুটা খর্ব ও নিয়ন্ত্রিত করলেও সভ্যতা, শালীনতা ও মানবিকতার স্বার্থে এগুলো মেনে চলা উচিত। কিন্তু ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড এর সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং আধুনিকতা ও সভ্যতার দাবিদার পাশ্চাত্যের কিছু দেশের অন্ধ অনুকরণ ছাড়া আর কিছু নয়।

বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী দেশ বলে আমরা এসব অশোভন ও অশ্লীল অপকর্ম এদেশেও সংক্রমিত হওয়ার আশংকা করছি। আশা করি সরকারসহ সচেতন জনগোষ্ঠী এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button