বদলে যাবে পুঁজিবাজার

চীনের কাছ থেকে প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

হাসান সোহেল: চীনের কাছ থেকে কৌশলগত অংশিদারের প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)। চীনের দুই প্রতিষ্ঠান সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামের (জোট) গতকাল ডিএসইর শেয়ার পেতে এই টাকা পরিশোধ করে। আজ মঙ্গলবার সকালে বোর্ড সভা করে জোটটির কাছে ২৫ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করবে। পরে রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করবে ডিএসই। ডিএসই’র নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ডিএসই’র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন জানান, সব বিষয় চুড়ান্ত। অর্থ হাতে পাওয়া গেছে। আজ চুক্তি অনুযায়ী অর্থের সমপরিমান শেয়ার হস্তান্তর করলেই শেষ। এর আগে টাকা হস্তান্তর ও শেয়ার নিতে গত রোববার রাতে চীনের দুই জোটের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসেন।

এদিকে চীনা কনসোর্টিয়ামের অর্থ এলে পুঁজিবাজারের চিত্র বদলে যাবে- এমনটি মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের অভিমত, এই অর্থ এলে বাজারে গতি ফেরার পাশাপাশি লেনদেন বাড়বে। একই সঙ্গে চীনের অর্থবাজার আসার মধ্য দিয়ে তারা পুরোপুরিভাবে ডিএসইর সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থার লেভেল বাড়বে। পাশাপাশি সুশাসন আরও শক্তিশালী হবে। ফলে পুঁজিবাজার আরও শক্তিশালী হবে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়া পুঁজিবাজার যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি দেশের অর্থনীতির জন্যও এটি কল্যাণ বয়ে আনবে। তাদের যুক্তি, চীনা কনসোর্টিয়াম দেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত হলে তারা মালিকানা পাবে। আর মালিকানা পেলে অবশ্যই তারা এ মার্কেটের উন্নয়নে কাজ করবে। মার্কেটে যুক্ত হবে নতুন নতুন পণ্য, আসবে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা।

অপরদিকে পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, ডিএসই’র চীনের কাছ থেকে কৌশলগত অংশিদারের অর্থ পাওয়া ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক। চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইতে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ বাড়বে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে তাদের বিনিয়োগ, যা পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখবে। চীনের টেকনোলজি যুক্ত হলে সার্ভিল্যান্স আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন তারা। তাদের অভিমত, এর ফলে পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতার জায়গাটি আরও পরিষ্কার হবে। চীনের পুঁজিবাজারে অসংখ্য বড় বিনিয়োগকারী রয়েছেন। তাদের কিছু অংশ যদি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন, তবে এ বাজার আরও শক্তিশালী হবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, চীনা কনসোর্টিয়াম হয়তো দ্রুত খুব বেশি পরিবর্তন করতে পারবে না। তবে এটা ভবিষ্যতের জন্য ভালো। তারা আসায় একই সঙ্গে আমাদের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতি দুটিই উর্বর হবে। তিনি বলেন, বাজারে এখন ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। তাই দ্রুত বাজারের চিত্র পাল্টাতে হলে ভালো কোম্পানি নিয়ে আসতে হবে।

সূত্রটি জানিয়েছে, চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ জোট কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ডিএসইর শেয়ারের অর্থ পরিশোধ করার পর আজ মঙ্গলবার বোর্ড সভা করবে ডিএসই। সকালে অনুষ্ঠিত ওই বোর্ড সভায় জোটটির একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন, যিনি পরবর্তীতে ডিএসইর পরিচালনা পরিষদের সদস্য হবেন। বোর্ড সভার মাধ্যমেই শেয়ার হন্তান্তরের সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এরপর দুপুরে হোটেল সোনারগাঁওয়ে শেয়ার হন্তান্তরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে গত ১৪ মে চীনা জোটের সঙ্গে চুক্তি সই করে ডিএসই। ওই চুক্তি অনুযায়ী, কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা জোট ডিএসইর ২৫ শতাংশ বা ৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১২৫টি শেয়ার কিনবে। এজন্য প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ২১ টাকা দরে মোট ৯৪৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা পরিশোধ করবে সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ জোট। ডিএসইর শেয়ারের বিপরীতে চীনা জোটের দেয়া অর্থ ডিএসইর সদস্য ব্রোকারদের ভাগ করে দেওয়া হবে। বর্তমানে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন ২৩৭ ব্রোকার। এ হিসাবে প্রত্যেক ব্রোকার কৌশলগত শেয়ার বিক্রি থেকে পাবেন প্রায় চার কোটি টাকা করে।

অবশ্য ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ২১ টাকা দরে বিক্রি করায় মূলধনী মুনাফার ওপর কর দিতে হবে। তবে ব্রোকাররা অন্তত তিন বছরের জন্য শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের শর্তে এ লেনদেনে কর ছাড় চেয়েছেন।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোঃ রুহুল আমীন আকন্দ চীনের এই টাকার অধিকাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। যা দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। বাজারে আস্থা ও তারল্য সঙ্কট দূর করবে বলে উল্লেখ করেন।

ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান বলেন, এই অর্থ বাজারে গতি আনবে-তা বলা মুশকিল। তবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। আর তাদের আস্থা বাড়লে নিশ্চয়ই পুঁজিবাজার তার গতি ফিরে পাবে।
ডিএসইর পরিচালক শরীফ আতাউর রহমান বলেন, অর্থ পাওয়ার পর আমরা ধীরে ধীরে তা পুঁজিবাজারের ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করব। এটা নিশ্চয়ই বাজারের জন্য ইতিবাচক হবে।

উল্লেখ্য, কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ভারতের প্রতিষ্ঠানকে নেয়ার চাপ ও নানা তালবাহানার পর চলতি বছরের ৩ মে চীনা জোটটিকে ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। অবশ্য এ অনুমোদনের সঙ্গে বেশকিছু শর্তও জুড়ে দেয় বিএসইসি। এর মধ্যে রয়েছে- কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সকল কার্যক্রম সিকিউরিটিজ আইন ও দেশের প্রযোজ্য অন্যান্য আইনসহ এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ এবং ডিএসই’র ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম অনুযায়ী পরিপালন করা। চুক্তির বাস্তাবায়ন প্রক্রিয়া চুক্তি সই’র পরবর্তী এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশনের পূর্ব অনুমোদন ব্যতীত চুক্তির শর্তাবলি ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় পরিবর্তন করা যাবে না। পরে ১৪ মে রাজধানীর একটি হোটেলে ডিএসই’র স্ট্রাটেজিক পার্টনার (কৌশলগত বিনিয়োগকারী) হিসেবে চীনা স্টক এক্সচেঞ্জ চুক্তি স্বাক্ষর করে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button