নেতাদের মুক্তির দাবিতে বার্সেলোনায় ব্যাপক বিক্ষোভ

Spaneরাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে স্পেনের কারাগারে আটক কাতালান নেতাদের মুক্তির দাবিতে বার্সেলোনায় বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে। গত শনিবার নেতাদের মুক্তির দাবিতে স্বাধীনতাপন্থি কয়েক লাখ আন্দোলনকারী রাস্তায় নেমে এলে বার্সেলোনার অন্যতম প্রধান একটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
‘রাজবন্দিদের মুক্তি দাও’ স্লোগানকে সামনে রেখে স্বাধীনতাপন্থি দুটি তৃণমূল সংগঠনের ডাকে বিক্ষোভটি অনুষ্ঠিত হয়।
কারাগারে বন্দি থাকা নেতাদের প্রতি সমর্থন জানানো আন্দোলনকারীরা হলুদ ফিতা পরে সমুদ্রসৈকত থেকে শুরু হয়ে বার্সেলোনার প্রতীকে পরিণত হওয়া সাগরাদা ফ্যামিলি চার্চ পর্যন্ত দীর্ঘ মেরিনা অ্যাভিনিউতে অবস্থান নেন; এই চার্চেই এদিন কারাবন্দি নেতাদের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন।
গত মাসের শুরুতে স্বাধীনতার প্রশ্নে অনুষ্ঠিত এক গণভোট নিয়ে মাদ্রিদের সঙ্গে কাতালুনিয়ার দ্বন্দ শুরু হয়। স্পেনের সরকার ও সাংবিধানিক আদালত ওই গণভোটকে অবৈধ বললেও কাতালান নেতারা ‘গণরায় মেনে স্বাধীনতার ঘোষণা’ দিলে টানাপোড়েন তীব্র হয়।
মাদ্রিদ কাতালুনিয়ার স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়ে সেখানকার সরকার ও পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করে এবং ডিসেম্বরে নতুন নির্বাচনের তারিখ দেয়। গণভোট আয়োজন ও আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ায় কাতালান নেতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, রাষ্ট্রদ্রোহীতা ও রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ের অভিযোগ আনে স্পেন।
ওই অভিযোগেই উচ্চ আদালত বরখাস্ত আট কাতালান মন্ত্রীকে জামিন না দিয়ে পুলিশি হেফাজতে পাঠায়। ব্রাসেলসে চলে যাওয়া কাতালান নেতা কার্লেস পুজদেমনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
শনিবারের বিক্ষোভকে আদালতের ওইসব সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া এবং স্বাধীনতার আন্দোলন যে এখনো দমে যায় নি তার চিত্র হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।
“দেখুন কত মানুষ এখানে স্বাধীনতার আন্দোলন এখনো প্রবল,” বলেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৬৩ বছর বয়সী পেপ মোরালেস।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরের নির্বাচনে স্বাধীনতাপন্থিরা বিপুল ব্যবধানে জয়ী হতে যাচ্ছেন। জরিপে বরখাস্ত হওয়া কাতালান প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদেমনের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বার্সেলোনার পুলিশ বলছে, শনিবারের বিক্ষোভে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ লোক অংশ নিয়েছে, যাদের অনেকে কাতালুনিয়ার বাইরে থেকেও এসেছে। বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল কারাবন্দি নেতাদের ছবি ও লাল-হলুদ কাতালান পতাকা। অন্ধকারে নিজেদের মোবাইল ফোনের আলো জ্বালিয়ে কারাবন্দি নেতাদের প্রতি সংহতি জানায় তারা।
“ওই আলো ব্রাসেলসেও এসে পৌঁছেছে এবং পথকে উজ্জ্বল করেছে, যে পথ আমরা অনুসরণ করে যাবো,” বিক্ষোভের সময় টুইটারে সংহতি জানিয়ে লেখেন পুজদেমন।
বৃহস্পতিবার স্পেনের সুপ্রিম কোর্ট কাতালান পার্লামেন্টের স্পিকার কারমে ফোরকাদেল ও আরও চার কর্মকর্তার জামিন মঞ্জুর করে; এ কর্মকর্তারা কাতালান পার্লামেন্টের ভোট ও স্বাধীনতার ঘোষণার তত্বাবধান করেছিলেন। এদিন আরও এক সাংসদকেও জামিন ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয়।
স্পেনের সংবিধানের বিরুদ্ধে গেছে এমন কিছু করার কথা অস্বীকারের পর শুক্রবার জেল থেকে ছাড়া পান ফোরকাদেল; তবে ডিসেম্বরের নির্বাচনী প্রচারণায় তার অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে স্বাধীনতাপন্থি দলগুলোর মধ্যেও মতভিন্নতা তৈরি হয়েছে।
পুজদেমনের দল পিদেক্যাট একজোট হয়ে নির্বাচন করতে চাইলেও স্বাধীনতাপন্থি অপর শক্তিশালী দল ইআরসি তাতে রাজি হয়নি। গত শনিবার এক বিবৃতিতে ইআরসি বলে, ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বরখাস্ত কাতালান ভাইস প্রেসিডেন্ট ওরিয়ল জাঙ্কুয়েরেস। তিনি প্রয়োজনে কারাগারের ভেতর থেকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। অবশ্য এতকিছু নিয়ে মাথাব্যাথা নেই তৃণমূলের আন্দোলনকারীদের। তাদের চাওয়া, সত্যিকারের স্বাধীনতা; ২৭ অক্টোবরের ঘোষণার মতো প্রতীকি নয়।
“তাদের (মাদ্রিদ) এখন বোঝা উচিত আমরা ঢং করছি না,” বলেন জনস্রোতে থাকা ৬১ বছর বয়সী পেনশনার পেপিতা সোল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button