এবার হাঙ্গেরিতে শরণার্থীর স্রোত

ইউরোপে আশ্রয়ের খোঁজে থাকা শরণার্থীদের স্রোত এবার ঢুকে পড়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র হাঙ্গেরিতে। দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, গত সোমবার রেকর্ড সংখ্যক দুই হাজার শরণার্থী সীমান্ত পেরিয়ে সার্বিয়া থেকে হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করেছে। দেশটি তাদের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শেষ করার মাত্র কয়েকদিন আগে শরণার্থী প্রবেশের এই ঘটনা ঘটল। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান প্রভৃতি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসা এসব শরণার্থীর অধিকাংশেরই লক্ষ্য জার্মানি এবং সুইডেনসহ উত্তর ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়া। ইইউ দেশগুলো এরই মধ্যে সাগরভাসা এসব শরণার্থীর দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিতে একটি সমঝোতায় পৌছেছে।
হাঙ্গেরির পুলিশ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানায়, গত সোমবার ২০৯৫ জন সম্ভাব্য অভিবাসনপ্রত্যাশী শরণার্থী হাঙ্গেরির রোসজকি শহর সংলগ্ন সীমান্ত দিয়ে দেশটিতে প্রবেশ করেছে। পুলিশ জানায়, এই সংখ্যাটা এখন পর্যন্ত এক দিনে শরণার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ। হাঙ্গেরি সরকার জানিয়েছে, তারা এ বছর এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি সংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীর নাম নিবন্ধন করিয়েছে। গত কয়েক বছরে এই সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। কারণ, ২০১২ সালেও সারা বছরে এই সংখ্যা ছিল মাত্র দুই হাজার। চলতি বছর আগস্ট মাসে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার করে শরণার্থী হাঙ্গেরিতে ঢুকেছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। তাই দেশটির রক্ষণশীল সরকার সার্বিয়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যেই এই বেড়ার নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সার্বিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্তের যেসব স্থানে এখনো কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়নি, সেসব এলাকা দিয়েই দেশটিতে ঢুকছে শরণার্থীরা। রোসজকি শহরের কাছের একটি রেললাইনের ওপর এখনো বেড়া দেয়া হয়নি। সেখান দিয়েই সোমবার দুই হাজারের বেশি শরণার্থী ঢুকে পড়ে। আল-জাজিরার স্থানীয় প্রতিনিধি জানান, সেখানে এখনো লোক আসছে; এবং এই স্রোত সহসা বন্ধ হচ্ছে না।
হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করেই অবশ্য থেমে থাকছে না এসব শরণার্থীর দীর্ঘ যাত্রা। তাদের অধিকাংশেরই গন্তব্য উত্তর ইউরোপের অধিকতর উন্নত দেশগুলো। তাদের পছন্দের তালিকায় জার্মানি এক নাম্বারে। হাঙ্গেরি সীমান্তে এক শরণার্থী বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘আমি ইরাক থেকে এসেছি, জার্মানি যেতে চাই।’ ওই এলাকা দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে প্রচ- ভিড় হচ্ছে। শরণার্থীদের অনেকে কয়েকবার চেষ্টা করেও ট্রেনে উঠতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। এর আগে এসব শরণার্থী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিস হয়ে মেসিডোনিয়ায় প্রবেশের সময় বাধা পায়। সেখানে সীমান্তে পুলিশি বাধায় দুই-তিন দিন আটকে থাকার পর এসব শরণার্থীকে সীমান্ত অতিক্রমের সুযোগ দেয় পুলিশ। তারা সেদিনই ট্রেনে চেপে সার্বিয়া অতিক্রম করে সোমবার হাঙ্গেরি সীমান্তে পৌছে।
এদিকে, ইউরোপে শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় নতুন প্রস্তাবনা রেখেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ। তারা আশ্রয়প্রার্থী এসব মানুষের জন্য একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া গ্রিস ও ইতালিতে ভূমধ্যসাগরের তীরে সাগরভাসা এসব অভিবাসীর জন্য অভ্যর্থনাকেন্দ্র খোলারও প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। আগামী বৃহস্পতিবার বলকান অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর একটি সম্মেলনে এটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হতে চলেছে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ওই সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button