রোহিঙ্গাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে এসেছি

দুদিনের সফরে ঢাকায় জাতিসংঘ মহাসচিব

guterresজাতিগত নির্মূল অভিযানের মুখে মিয়ানমার থকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থী ও বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
দুদিনের সফরে শনিবার রাতে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, এদেশের মানুষ বিশেষ করে কক্সবাজারের স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করছেন।
রাত ১টা ৪৫ মিনিটে কাতার এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিমানবন্দরে জাতিসংঘ মহাসচিবকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিমানবন্দর থেকে র‌্যাডিসন হোটেলে উঠেছেন আন্তোনিও গুতেরেস। দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে এই হোটেলেই থাকবেন তিনি।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। তিনিও র‌্যাডিসন হোটেলে উঠেছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংক প্রধান সোমবার কক্সবাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে। রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠক করবেন জাতিসংঘের মহাসচিব। বৈঠক শেষে ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা শীর্ষক অধিবেশনে যোগ দেবেন তিনি।
বিকালে হোটেল রেডিসনে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। একই হোটেলে ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসবেন জিম ইয়ং কিম।
এছাড়া জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তাদের এক পুনর্মিলনিতে অংশ নিবেন গুতেরেস। সন্ধ্যায় হোটেল প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁওয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্মানে ভোজের আয়োজন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার সকালে বিমান বাংলাদেশের একটি বিশেষ ফ্লাইটে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন গুতেরেস। এর পর ঢাকায় ফিরে ওই দিন সন্ধ্যায় হোটেল র‌্যাডিসনে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনের কথা রয়েছে তার।
জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) প্রেসিডেন্ট পিটার মাউরা।
একই সময়ে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
গুতেরেস এর আগেও ইউএনএইচসিআরের শীর্ষ পদে থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শনে এসেছিলেন। তখনকার তুলনায় রোহিঙ্গা সংকট শোচনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম সফর।
তবে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের এটি দ্বিতীয় সফর। বিশ্ব দারিদ্র্য নিরসন দিবস পালন উপলক্ষে অতিথি হিসেবে গত বছর ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।
তারা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে আগে থেকেই চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। গত বছরের আগস্ট থেকে নতুন করে নির্মূল অভিযানে তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছেন আরও সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে জাতিগত নির্মূল অভিযানের জ্বলন্ত উদহারণ বলে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ সংকটকে এশিয়ার এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বলে আসছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারেন এবং এই প্রত্যাবাসন যাতে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে হয়, মিয়ানমারকে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে জাতিসংঘ মহাসিচব গুতেরেসও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে ওই চুক্তি করার সময় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয় সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে সঙ্গে রাখা জরুরি ছিল।
এরমধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করেছে ইউএনএইচসিআর।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button