ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ বর্জিত নষ্ট ভ্রষ্ট সমাজের কুৎসিত চিত্র

মোবায়েদুর রহমান:
সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নৈতিক অবক্ষয় দেশের নীতি নৈতিকতা এবং মূল্যবোধকে ভয়াবহ রূপে গ্রাস করেছে। সম্প্রতি কতগুলো পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে যেগুলো থেকে দেখা যায় যে দেশ ক্রমশ: দ্রুত আইয়ামে জাহেলিয়াতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। একটি ছাত্রীকে বিয়ে না করলে তাকে হত্যা করা অথবা একটি চর দখল করার জন্য যদি একটি গ্রামের ১৫০ জন মেয়েকে ধর্ষণ করতে হয় তাহলে বাংলাদেশের ঐ সব এলাকায় সমাজ এবং সভ্যতা কত গভীর রসাতলে গেছে সেটা বুঝতে আর কষ্ট হয় না। একটি বেসরকারী চ্যানেলে গত  ৫ সেপ্টেম্বর একটি অতি উদ্বেগজনক ঘটনা সম্প্রচারিত হয়েছে। সম্প্রচারিত খবর তাদের ওয়েব সাইটে প্রচারিত হয়েছে নিম্মরূপ, “শুধু হত্যা, ভাঙচুর বা বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়াই নয়, একটি চর দখলে রাখতে একদল, প্রতিপক্ষ দলের সমর্থক অনুসারী নারীদের একের পর এক ধর্ষণ করে যাচ্ছে। এমন ভয়াবহ অভিযোগ ভোলার সদর উপজেলার ২ নং ইলিশা ইউনিয়নে অবস্থিত চর আনন্দকে ঘিরে। গেলো দুই বছরে ধর্ষণের সংখ্যা এক দেড়শো বলে জানা গেছে। এই কান্না, এই আর্তনাদ কেবলমাত্র চরে বসতি গড়ে বেঁচে থাকার অপরাধে। ভোলার সদর উপজেলার ২ নং ইলিশা ইউনিয়নে অবস্থিত চর আনন্দ দখল রাখতে সেখানে ঘটে চলেছে সভ্যতা থমকে যাওয়ার মতো পৈশাচিক ঘটনা। এক বাহিনী আরেক বাহিনীর সমর্থক সাধারণ পরিবারের নারীদের করে যাচ্ছে ধর্ষণ, এমন অভিযোগ অসংখ্য। নরপিশাচ ধর্ষকদের কাছে কিশোরী, যুবতী, বৃদ্ধা, কোন বাছ-বিচার নাই। রেহাই পাননি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীও। চরটি দখলে রাখতে এখানে তৎপর চারটি দল। বাইন্যা বাহিনী, তালুকদার বাহিনী, উকিল বাহিনী এবং চেয়ারম্যান সিরাজ বাহিনী নামে পরিচিত দলগুলো। এর মধ্যে বাইন্যা বাহিনীই এগিয়ে রয়েছে ধর্ষণ কান্ডে। একই ধরনের অভিযোগ চেয়ারম্যান সিরাজ বাহিনীর বিরুদ্ধেও। নিজের মেয়ের ওপর নির্যাতনের কথা মনে করতেই অনেকটা নির্বাক হয়ে ওঠেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুল মালেক।”
প্রেম ঘটিত ব্যাপারে ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা
ওপরের ঘটনাটি দেশের সবগুলো পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়েছে। তবুও তাৎক্ষণিক ভাবে স্মরণ করার জন্য এটি নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে উদ্ধৃত করা হলো, “বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাওদাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাসেল মাতুব্বর। প্রেমের সম্পর্কের অবনতি ঘটার জের ধরে গতকাল সকালে নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় সাওদাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে রাসেল মাতুব্বর। গুরুতর সাওদাকে প্রথমে শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, পরে অবস্থার অবনতি হলে এয়ার এম্বুলেন্স যোগে ঢাকায় পাঠানো হয়। হামলার সাত ঘন্টা পর সাওদা সন্ধ্যায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তার মৃত্যুর খবর বরিশালে পৌঁছলে বিশ্ববিদ্যালয় ও সাওদার গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে।” (ইত্তেফাক : ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩)
গৃহশিক্ষকের কুকীর্তি এবং ছাত্র হত্যা
গৃহশিক্ষকের কুকীর্তি দেখে ফেলার কারণে রাজধানীর কাফরুলে স্কুল ছাত্র সজল চন্দ্র মজুমদারকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে। এ অভিযোগ নিহত সজলের স্বজনদের। কাফরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র সজল চন্দ্র মজুমদার। আর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সজলের গৃহশিক্ষক সবুজ সূত্রধর ও তার কথিত বান্ধবী প্রীতি ওরফে মর্জিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে কাফরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল মানববন্ধন করেছেন। (ইত্তেফাক : ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩)
বখাটের হামলায় কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু
বখাটে সন্ত্রাসী হামলার শিকার কলেজ ছাত্রী আফসারি আক্তার স্বর্ণা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) টানা ছয়দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার দুপুরে মারা গেছে। গত ১ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেড়াতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় ময়মনসিংহ সরকারী আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী স্বর্ণা। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে শহরের নওমহল নন্দী বাড়ি এলাকার আব্দুস সালামের পুত্র বখাটে সন্ত্রাসী আব্দুস সামাদ রাজু। স্থানীয় সূত্র জানায়, শহরের নওমহল এলাকার আতাউর রহমানের কন্যা স্বর্ণা গত রবিবার দুপুরে বন্ধু আখলাছকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে যায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। কথিত প্রেমিক বখাটে রাজু এ সময় স্বর্ণাকে দেখতে পেয়ে ইট দিয়ে মুখ ও মাথা থেতলে দিয়ে সটকে পড়ে। রক্তাক্ত অবস্থায় স্বর্ণাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। এখানে ছয়দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শুক্রবার দুপুরে মারা যায় স্বর্ণা। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে শহরের নওমহলের বাসায় ¯¦র্ণার লাশ নিয়ে যাওয়া হলে পরিবার ও স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম সারোয়ার জানান, ঘটনার পর বখাটে রাজু বাসায় তালা দিয়ে পলাতক রয়েছে।
পিতার হাতে কন্যা খুন
ঐশী রহমান কর্তৃক পিতা ও মাতাকে একসাথে হত্যা করার কাহিনী সারাদেশে প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। কিন্তু এবার চট্টগ্রামে ঘটেছে তার উল্টো ঘটনা। এখানে পিতার হাতে খুন হয়েছে কন্যা। দৈনিক ‘ইনকিলাবের’ ৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত খবরে বলা হয়, “চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় পিতা মো. রায়হানের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে খুন হন কিশোরী কন্যা ফারজানা আকতার ফেনসি। চক বাজারের কাপাসগোলায় আইনজীবী অজিত দাশ ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনে স্ত্রী মিতা রায় খুন হওয়ার অভিযোগ ওঠে। মাস্টারপোলে স্ত্রী হোসনে আরা বেগমের হাতে খুন হন স্বামী আইয়ুব চৌধুরী। রাউজানের সুলতানপুরে ছোট দুই ভাই আবু সুফিয়ান ও আবু মোরশেদকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় বড় ভাই আবুল কালামকে। বাকলিয়ায় সাবেক পোস্ট মাস্টারের স্ত্রী লায়লা বেগমকে গলা কেটে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে একই ভবনের বাসিন্দা দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী মনোয়ারা বেগমকে। পাহাড়তলীর একটি আবাসিক হোটেলে স্ত্রী আজেদা বেগমকে গলা কেটে হত্যার পর আত্মহত্যা করে স্বামী সাইফুল ইসলাম। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এ ধরনের বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের ঘটনায় তোলপাড় চলছে বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম জুড়ে। হত্যাকান্ডের পাশাপাশি পারিবারিক কলহ বিরোধ আর দ্বন্দ্বে আত্মহত্যা এবং রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে ব্যাপকহারে। গেল মাসে বন্দর নগরীসহ পুরো চট্টগ্রাম জেলায় অন্তত ২৫টি অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পারিবারিক কলহে স্বজন ও প্রতিবেশীদের হাতে খুন হয়েছেন ৭ জন। আত্মহত্যা করেছেন ১১ জন। বাকিরা প্রাণ হারান সন্ত্রাসী ঘটনায়।
আমরা এখানে মাত্র কয়েকটি অপরাধ চিত্র তুলে ধরলাম। সারা বাংলাদেশে প্রতিদিন এই ধরনের অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। প্রতিটি ঘটনা তুলে ধরতে হলে মহাকাব্য রচনা করতে হবে। খুন, হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি প্রভৃতি অপরাধে ছেয়ে যাচ্ছে এই সমাজ। কেন এগুলো ঘটছে তার সঠিক কারণ অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা কোন মহল থেকেই লক্ষ্য করা যায় না। পুলিশ দম্পতিকে এক সাথে হত্যা করলো তাদেরই ১৮ বছরের মেয়ে ঐশী রহমান (অন্তত এখন পর্যন্ত পুলিশ যা বলছে)। ঘটনাটি তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করলেও এত বড় লোমহর্ষক ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে সেই গতানুগতিক এবং সনাতনী কায়দায়। ঐশী রহমান কর্তৃক হত্যা কান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকায় এবং এক্ষেত্রে নিহতরা হচ্ছেন একজন পুলিশ অফিসার এবং তার স্ত্রী। তাছাড়াও এটি ঘটেছে পুলিশ ক্যাম্পের পাশে চামেলিবাগে। তাই ঘটনাটি মিডিয়ায় ব্যাপক কাভারেজ পেয়েছে। কিন্তু এর উল্টোটি ঘটেছে চট্টগ্রামে। সেটি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় এত লেখালেখি হয়নি বা টেলিভিশনে এত টক শো হয় নি।
এক পেশে বিশ্লেষণ
এসব হত্যাকান্ড বা ধর্ষণ নিয়ে পত্রিকার পাতায় প্রবন্ধ লেখা হচ্ছে এবং টেলিভিশনের পর্দায় টক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সব ক্ষেত্রে বিশ্লেষণটা হচ্ছে গৎ বাঁধা বুলির মতো। বাপ মা উভয়েই চাকরি করেন। সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। তাই সন্তানরা অসৎ সংসর্গে বখে যাচ্ছে। অথবা বাবা মা ছেলে মেয়েদের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না। তাই চাহিদা পূরণের জন্য তারা অপরাধ কর্মে লিপ্ত হচ্ছে। পিতা মাতা কোন কারণে সন্তানকে বেশি বকে দিচ্ছেন অথবা কিছুটা মারধর করছেন। রাগে অভিমানে ছেলে বা মেয়ে উল্টো পথে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এগুলোই যেন প্রধান কারণ। এই ধরনের কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য টেলিভিশনের পর্দায় আনা হচ্ছে এক শ্রেণীর মনোবিজ্ঞানী এবং সাইকিয়াট্রিষ্টকে।  আনা হচ্ছে সমাজ বিজ্ঞানী পরিচয় দিয়ে কয়েক ব্যক্তিকে। ইদানিং দেখা যাচ্ছে যে, সিনেমা বা টেলিভিশনের অভিনেত্রীরাও ছেলে-মেয়েদের মনো জগতের বিশ্লেষণে নেমেছেন।
আমি অবাক হয়েছি এই বিষয়টি দেখে যে এসব অপরাধের প্রধান কারণ যে ধর্মীয় এবং নৈতিক মূল্যবোধের অভাব সেটি যেন এসব বিশ্লেষক এবং আলোচক সযত্নে এড়িয়ে যাচ্ছেন। এমনকি কোন কোন আলোচক যদিও বা বলছেন যে ধর্মীয় শিক্ষার অভাবেই এসব নৃশংস ও জঘন্য ঘটনা ঘটছে তখন এ্যাঙ্কর বা অপর কোন আলোচক ছুঁ মেরে তার কথাটি কেড়ে নিচ্ছেন এবং ধর্মীয় শিক্ষার আলোচনাটি চাপা দেওয়ার জন্য অকস্মাৎ ও অপ্রাসঙ্গিক ভাবে অন্য বিষয়ের অবতারণা করছেন।
ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন
বাংলাদেশে আজ ৪০ টিরও বেশী বিদেশী টেলিভিশন বিশেষ করে ভারতীয় টেলিভিশন দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে যে সব প্রোগ্রাম দর্শককে আকৃষ্ট করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সিরিয়াল বা ধারাবাহিক নাটক, ডান্স প্রোগ্রাম ইত্যাদি। ভারতের অধিকাংশ সিরিয়ালে রয়েছে পরকীয়ার ছড়াছড়ি। ক্ষেত্র বিশেষে পরকীয়াকে ব্যক্তি জীবনের সহজাত প্রবৃত্তি এবং সেই সুবাদে সমাজ জীবনেরও একটি স্বাভাবিক অনুষঙ্গ বলে সূক্ষ্মভাবে প্রচার করা হচ্ছে। এর বিষময় ফল ভারতীয় সমাজ জীবনকে কুরে কুরে তো খাচ্ছেই, বাংলাদেশের সমাজ ও পারিবারিক জীবনেও এসেছে তার বিষময় ফল। গভীরভাবে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের অনেক পরিবারেই পরকীয়া হানা দিয়েছে। একটি পরিবারে এক মহিলার মৃত্যু ঘটেছে। দেখা গেছে, সেই মৃত্যুর পেছনে রয়েছে দুই অভিনেত্রী এবং নিহত মহিলার স্বামীর ত্রিভুজ প্রেম। এখানে যদি নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত থাকতো এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ কাজ করতো তাহলে পরকীয়া বা ত্রিভুজ প্রেমের অঙ্কুরোদ্গম ঘটতো না।
প্রিয় পাঠক, তথাকথিত গুলশান বনানী বা হাই সোসাইটির কালচার, টেলিভিশনে নাচের নামে কুৎসিত অঙ্গ ভঙ্গি সম্পন্ন নর্তন কুর্দন, মাদকাসক্তি, টেলিভিশনে সুফি ও মুসল্লি চরিত্রের বিকৃত উপস্থাপনা, মাদ্রাসা ছাত্রদের এসব অপরাধ থেকে মুক্ত থাকা- ইত্যাদি বিষয় এই একটি সংবাদ ভাষ্যে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তাই পরবর্তী ভাষ্যে এসব নিয়ে আলোচনার ইচ্ছে রইলো।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button