বেলজিয়ামে ৭৫০ মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার পাচারের তথ্য

সংসদে জিয়া পরিবারের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ

PMবহুল আলোচিত প্যারাডাইস পেপারে প্রকাশিত ‘জিয়া পরিবারে’র দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ তালিকায় রয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, আরাফাত রহমান কোকো ও তার স্ত্রী শর্মিলা রহমান। ওই পরিবার বেলজিয়ামে ৭৫০ ও মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে বলেও নতুন তথ্য তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ-বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের অর্থ পাচারের তালিকাও তুলে ধরেন তিনি।
এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির স্বেতপত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের জনগণের সম্পদ আর লুটপাট ও পাচার করতে দেয়া হবে না। এ ধরনের অপকর্ম তদন্ত্মের মাধ্যমে উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরম্নদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জনগণের পয়সা জনগণকে ফেরত দেয়ার যেসব আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে তার সব ব্যবস্থাই নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজ কাটিং তুলে ধরেন। এবারই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে ২৫৬ পৃষ্ঠার প্রশ্নের জবাবে ১৫৩ পৃষ্ঠাতেই স্থান পেয়েছে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থের বিবরণ।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশি এবং বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি বা অন্য কোনো অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদেশে পাচারকারীদের বিরম্নদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে সরকারের সকল সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এরই মধ্যে ২০১২ সালে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর পাচারকৃত ২০ লাখ ৪১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৮৮ সিঙ্গাপুরি ডলার সে দেশ থেকে ফেরত আনা হয়েছে। তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশের বাইরে প্রচুর অর্থ পাচার করেছেন। তারেক এবং তার ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুন যৌথভাবে একটি বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেয়ার বিনিময়ে প্রায় ২১ কোটি টাকার মতো সিঙ্গাপুরে সিটিএনএ ব্যাংকে পাচার করেছেন। এ ব্যাপারে শুধু বাংলাদেশ নয়, আমেরিকার এফবিআইও তদন্ত্ম করেছে। এর সূত্র ধরে এফবিআই এর ফিল্ড এজেন্ট ডেব্রা ল্যাপ্রিভোট ২০১২ সালে ঢাকায় বিশেষ আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। এ মামলায় হাইকোর্টে তারেক রহমানের ৭ বছরের সাজা হয়। একইভাবে লন্ডনের ন্যাট ওয়েস্ট ব্যাংকেও প্রায় ৬ কোটি টাকা পাওয়া গেছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, এছাড়াও বিশ্বের আরও অনেক দেশে খালেদা জিয়ার ছেলেদের টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে যা এখনো তদন্ত্মাধীন। এর মধ্যে অন্যতম হলো- বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, দুবাইতে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়ি, সৌদি আরবে মার্কেটসহ অন্যান্য সম্পত্তি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর দুর্নীতিগ্রস্ত্ম ব্যক্তিদের তালিকায় খালেদা জিয়া তিন নম্বর হিসেবে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়াতে এ-সংক্রান্ত্ম তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। খালেদা জিয়া প্রকাশিত এসব সংবাদের কোনো প্রতিবাদ জানাননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারাডাইস পেপারসে নতুন করে প্রকাশিত নামের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের নাম। প্রকাশিত এ নথিতে তালিকায় শীর্ষেই আছে খালেদা পুত্রদের নাম। এছাড়া নতুন প্রকাশিত ২৫ হাজার নথিতে বের হয়ে আসছে আরও রাঘব বোয়ালদের নাম ও তাদের অর্থ পাচারের নানান তথ্য।
তিনি বলেন, প্যারাডাইস পেপারসে দেখা যায়, তারেক জিয়া ২০০৪ এবং ২০০৫ সালে কেইম্যান আইসল্যান্ড এবং বারমুডায় ২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন। এছাড়াও তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ওয়ান গ্রম্নপের তিনটি কোম্পানি খোলা হয় ট্যাক্স হেভেনে। তারেক জিয়ার প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো বারমুডার বিভিন্ন কোম্পানিতে ২০০৫ সালে প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। কোকোর মৃতু্যর পর এই বিনিয়োগ তার স্ত্রী শর্মিলা রহমানের নামে স্থানাস্ত্মরিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধৈভাবে ট্যাক্স হেভেনে জিয়া পরিবারের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
জিয়া পরিবারের সদস্য ছাড়াও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির একাধিক নেতাসহ প্রায় অর্ধ শত প্রতিষ্ঠান এবং এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরা হলের ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা আব্দুল আওয়াল মিন্টু, তার স্ত্রী নাসরিন ফাতেমা আওয়াল, দুই ছেলে মোহাম্মদ তাবিথ আওয়াল, মোহাম্মদ তাফসির আওয়াল, পথ ফাইন্ডার ফাইন্যান্স ও হ্যান্সিয়াটিক লিমিটেডেটের প্রধান আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জাফরম্নলস্নাহ। তার স্ত্রী নিলুফার জাফরম্নলস্না, ছেলে ইল্ডেস্টার লিমিটেডের কাজী রায়হান জাফর।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button