শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা

ঘুষ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রীর বক্তব্যে দেশব্যাপী তোলপাড়

Nahidঘুষ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বক্তব্য নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়েছে। গত রোববার মন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে কর্মকর্তাদের ‘সহনশীল মাত্রা’য় ঘুষ  খেতে পরামর্শ দেন। এ নিয়ে সোমবার দেয়া ব্যাখ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রকাশিত সংবাদে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ রয়েছে।
এ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে বর্তমান সরকার আত্মস্বীকৃত চোর ও দুর্নীতিবাজ। এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন ‘মন্ত্রীরা দুর্নীতি করে, শুধু যে অফিসার চোর তাই না মন্ত্রীরাও চোর, আমিও চোর, তাই ঘুষ না নিতে বলার সাহস আমার নাই’।
তিনি বলেন, দেশের শিক্ষামন্ত্রীর যদি বক্তব্য এই হয়, তাহলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সততা, নৈতিকতার পাঠ কোথায় নেবে? শিক্ষামন্ত্রী এক ভয়ঙ্কর বার্তা পাঠালেন শিক্ষাঙ্গনে, তার বক্তব্যে এটাই ফুটে উঠছে যে, ছাত্র-ছাত্রীরা তোমরা নীতি, নৈতিকতা, আদর্শ এবং ন্যায়বোধের বিবেকশাসিত উন্নত মানুষ হওয়ার বদলে সহনীয় মাত্রায় দুর্নীতির পাঠ নিতে শিখো, তাহলেই তোমাদের সাফল্য আসবে।
ঘুষ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া বিকেলে শহীদ মিনারে অনশনরত প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দেখতে গিয়ে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, চোরের নৌকার মাঝি হচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ যে মন্ত্রীরা দুর্নীতিকে সমর্থন করে, তাদের নেতা হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তার উচিত শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া। কারণ ঘুষ নিতে মানা করার দুঃসাহস উনার (শিক্ষামন্ত্রী) নেই। মানে তিনি তা সমর্থন করেন। এই দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীরা আপনাকে চোরের নৌকার মাঝি বানিয়েছে।
এ দিকে সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আফরাজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা দেন। এতে বলা হয়েছে, প্রকাশিত সংবাদগুলোতে ডিআইএ’র অতীত বিষয়ক বক্তব্য বা তুলনাকে বর্তমানের কথা ধরে নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে; যা দুঃখজনক, বিভ্রান্তিকর ও শিক্ষামন্ত্রীর মূল বক্তব্যের বিপরীত এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান নীতির পরিপন্থি।
মন্ত্রণালয় বলছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করে প্রকাশিত সংবাদে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ রয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ল্যাপটপ ও প্রশিক্ষণ সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এসময় বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী এ অধিদপ্তরের অতীতের আট বছর আগের উদাহরণ দিতে গিয়ে ডিআইএ’র কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিনি (মন্ত্রী) বলেন, বর্তমানে পিয়ার ইনস্পেকশন ও ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থা চালুর ফলে এ অবস্থার অনেক পরিবর্তন ও উন্নতি হয়েছে। ডিআইএ’র কর্মকর্তাদের কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি সহ্য করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি ডিআইএ’র একজন কর্মকর্তাকে দুর্নীতির প্রমাণসহ দুদকের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মন্ত্রী ঘুষ-দুর্নীতি বিষয়ে ডিআইসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি স্মরণ করিয়ে দেন।
যা বলেছিলেন মন্ত্রী: গত রোববার শিক্ষামন্ত্রী পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ল্যাপটপ ও প্রশিক্ষণ সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় মন্ত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে বিভিন্ন বিষয়ে যারা প্রতিবেদন দেন, সেই কর্মকর্তাদের ‘সহনশীল মাত্রা’য় ঘুষ খেতে পরামর্শ দেন। শিক্ষা ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় মন্ত্রী বলেন, “সব জায়গায় যে বলেছি অপচয়-দুর্নীতি আমরা কঠোর অবস্থান নেব এবং দুর্নীতির ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স। এটা আমাদের বলতে হবেৃ কিন্তু আমি ইডির (ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট) সভায় বলছি, আপনারা দয়া করে ভালো কাজ করবেন। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা ঘুষ খাবেন, তবে সহনশীল হইয়্যা খাবেন। অসহনীয় হয়ে বলা যায় আপনারা ঘুষ খাইয়েন না, এটা অবাস্তবিক কথা হবে।”
তিনি বলেন, “নানা জায়গায় এ রকম হইছে, সব জায়গাতেই এ রকম হইছে। খালি যে অফিসার চোর, তা না, মন্ত্রীরাও চোর, আমিও চোর। এই জগতে এ রকমই চলে আসতেছে। সবাইকে আমাদের পরিবর্তন করতে হবে।”
এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমরা এর আগের মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল ও ডিআইএ কর্মকর্তাদের ঘুষ নেবেন না সে কথাটি বলতে পারতাম না, আমরা বলতাম ঘুষ খান কিন্তু সহনশীল মাত্রায়। এখন সেই অবস্থা পাল্টেছে, শিক্ষা প্রকৌশলের বদনাম অনেকটাই কমে গেছে। তবে ডিআইএ কর্মকর্তাদের নিয়ে বদনাম আছে।”

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button