আমরা কোথায় আছি?

forid-ahmed-rezaফরীদ আহমদ রেজা: ঘরে ঘরে আগুন লেগেছে। প্রতিবেশী দেখছে। আমরাও ‎দেখছি। প্রবল ‎ঝড় ধেয়ে ‎আসছে। আমরা বালিয়াড়িতে ‎‎উটপাখির মতো মাথা গুঁজে ‎ভাবছি, কোথায় ঝড়? এতো ‎‎সামান্য বাতাস। না, সামান্য নয়। ঘরের ‎ছাউনি উড়ে যাবে। ‎‎ভিটেমাটি ধ্বংস হয়ে ‎যাবে। ভিটেমাটিতে শেয়াল-‎কুকুর চরে ‎বেড়াবে। ‎
কোথায় ঝড়? না আবহাওয়া অফিসের কাছে এর খবর নেই। ‎গুগল ‎ওয়েদারে তা ‎পাওয়া যাবে না। ছদ্মবেশে হাঁটুন ‎বাঙালি ‎অধ্যুষিত ‎এলাকায়। যেখানে তরুণরা বসে ‎আড্ডা দেয় ‎সেখানে যান। কান পেতে ‎শুনুন তাদের কথা। বাংলা, ‎সিলেটী, ‎ককনি ‎এবং নিজস্ব সাঙ্কেতিক ভাষা ‎মিলিয়ে তারা কথা বলে। ‎তাদের ভাষা বুঝলে অনেক ‎কিছু জানতে ‎‎পারবেন। কথা বলুন ‎আপনার সন্তানের সাথে। কথা বলুন উঠতি বয়সী ‎‎‎ছেলে এবং ‎মেয়ের সাথে। জানার চেষ্টা করুন, ‎কে তাদের হিরো এবং ‎‎কারা তাদের ‎কাছে ঘৃণ্য। তাদের ‘রোল মডেল’ কী আপনি? ‎আপনার প্রিয় ‎নেতা-নেত্রী? না ‎‎গ্যাংস্টার? জানুন তাদের ‎আকাঙ্খা এবং স্বপ্ন।‎
আপনি হয়তো বলবেন, আমাদের সোনার ছেলেমেয়ে কত বড় বড় ‎পাশ ‎দিচ্ছে। ‎ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে। উচ্চ বেতনে চাকরি ‎‎করছে। বাড়ি ‎কিনছে, দামি গাড়ি ‎হাঁকাচ্ছে। এ সব কি মিথ্যে? ‎না মিথ্যে নয়। বিত্ত আর ‎ডিগ্রি থাকলেই মানুষ হওয়া যায় ‎না, সে প্রশ্ন না হয় উহ্য থাক। আপনার ‎বিচারে যারা সফল এর শতকরা হিসেবটা ‎করুন। বিলাতের ‎‎অধিকাংশ ‎বাঙালি বয়সের বিচারে তরুণ। অন্ততঃ শতকরা ‎৫০ ‎ভাগের বয়স ‎তিরিশের নিচে। তাদের কয়জন পাশ ‎দিচ্ছে? কয়জন ‎চাকরি করছে? ‎‎কয়জন জেলে আছে? ‎কয়জন যৌনঅপরাধী হিসেবে তালিকাভুক্ত? ‎কয়জনের ‎পায়ে ‎বিপজ্জনক যৌনঅপরাধী হিসেবে ট্যাগ লাগানো ‎আছে? ‎‎আপনার ছেলে বা আপনার ‎পরিচিত তরুণদের কেউ কি এ ‎রকম? ‎পুলিশের খাতায় দাগি আসামী হিসেবে ‎‎কয়জনের নাম ‎আছে? কয়জন ‎পথে পথে ঘুরে বেড়ায়? কয়জন ড্রাগ খেয়ে ‎বুদ হয়ে ‎পড়ে থাকে? কয়জন ‎ড্রাগ বিপণনের সাথে ‎জড়িত? দামি গাড়ি আর বিত্তের যে জৌলস ‎আপনি ‎দেখছেন এর উৎস সম্পর্কে কি আপনার ধারণা আছে? এ সকল ‎হিসেব ‎কি ‎আপনার কাছে আছে?‎
ভিজিট করুন ফ্যামিটি কোর্টে। জানবেন, আমাদের তরুণ ‎দম্পতিদের ‎হাঁড়ির খবর। ‎জানলে চমকে উঠবেন। ‎‎পরিসংখ্যান সংগ্রহ করলে আঁতকে ‎উঠবেন। আমাদের মধ্যে ‎‎সিঙ্গল মাদারের সংখ্যা কতো? তরুণ দম্পতিদের ‎মধ্যে ‎কয়টা ‎বাড়িতে শান্তি আছে? ‎তরুণ কেন, আমরা বয়স্কদের পরিবারে ‎সুখি সংসার কয়টা আছে? অবৈধ অর্থ এবং ‎‎বেনিফিট জালিয়াতি থেকে ‎অর্জিত সম্পদ দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। মায়ের অশ্রুপাত ‎এবং পিতার ‎দীর্ঘশ্বাসের খবর কি আপনার কাছে পৌঁছে? আপনি কি জানেন, কয়জন ‎‎বাঙালি ‎তরুণ বলৎকারের কারণে জেলে আছে? পত্র-পত্রিকার খবর, এ ‎সকল ‎অপরাধীর মাঝে ‎মধ্যবয়সী ‎লোকও আছে। আপনি কি জানেন, ‎আমাদের কয়জন তরুণ ‎‎নিজের স্ত্রীকে ধর্ষণের দায়ে জেল খাটছে? ‎‎কয়জন নিজ ‎স্ত্রীকে বা নিজের সন্তানকে ‎নির্যাতনের দায়ে জেল খাটছে? ‎এ ‎সকল অভিযোগ মাথায় নিয়ে কয়জন পুরুষ ‎নিজের ‎বাড়ি ছেড়ে বন্ধু ‎বা ‎আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে থাকছে?‎ এ সকল খবর তো ‎আপনার ‎কানে যায় না। গেলেও আপনি গা করেন না। আপনি তো শুধু সে খবরই ‎‎পাঠ করেন যেখানে আপনার ছবি বা নাম ছাপা হয়।‎
আপনি হয়তো আরো বলবেন, এ দেশে এতো মসজিদ, এতো আলেম-‎উলামা, এতো ‎নমাজি, এতো ওয়াজ-নসিহত! ঠিক বলেছেন, এ সব ‎এখানে আছে এবং দিনে দিনে ‎বাড়ছে। কিন্তু মসজিদ আর ওয়াজ-নসিহত ‎কি ড্রাগ আর ক্রাইম বন্ধ করতে পারছে? ‎জালিয়াতি কমাতে পারছে? ‎যৌন অপরাধ সীমিত করতে পারছে? কেন পারছে না? ‎আপনার চোখটা ‎একটু খুলুন। মাথায় টুপি এবং মুখে দাড়ি দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। ‎‎কিছু সময় তাদের অনুসরণ করলেই এর হাকিকত বুঝতে পারবেন। ছুটি বা ‎বিরতির ‎সময় সেকেন্ডারি স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। জুমার নামাজের ‎পর বড় কোন শপিং ‎মলে গিয়ে কিছু সময় কাটান। ড্রাগ-ডিলার বা ‎যৌনঅপরাধী পেতে আপনার বিলম্ব ‎হবে না।‎
আরো জানতে চান? জেনে লাভ কী? কেউ কেউ তো মদ ‎খেয়ে মাতাল ‎হয়ে বসে ‎‎থাকেন। কেউ আবার জুয়ার ‎ঘরে ‎গিয়ে রাত কাটান। এর চেয়ে ‎বরং মসজিদে গিয়ে ‎পড়ে ‎থাকুন। দেশে গিয়ে মসজিদ-মাদ্রাসা বা ‎এতিমখানা তৈরি ‎‎করুন। উমরা করতে ‎প্রতি বছর মক্কায় চলে যান। না ‎‎পারলে, তাবলিগের চিল্লায় সময় দিন। স্বদেশ উন্নয়ন ‎সমিতি ‎‎করুন। ‎দেশে গিয়ে জনসেবা ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করুন ‎‎(দ্রষ্টব্য: আবুল ‎মনসুর ‎আহমদ’র বই ‘ফুড কনফারেন্স’) স্বদেশী ‎‎রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ‎গোটা ‎‎গ্রেট বৃটেন ঘুরে বেড়ান। ‎দেশে গিয়ে মন্ত্রী-এমপি হওয়ার চেষ্টা ‎করুন। নিদেনপক্ষে ‎‎মেম্বার-চেয়ারম্যান তো হতে পারবেন। চাইলে দেশে ‎‎‎গিয়ে আরেকটা বিয়েও করে ‎নিতে পারেন। ‎
আমরা যে আগ্রাসনের শিকার হচ্ছি এর মোকাবেলার জন্যে ‎লন্ডন বা ‎বৃটেনেবাসীর কী ‎‎কোন করণীয় আছে? প্রতিরোধ ‎না করতে পারি ‎গণসচেতনতা তৈরিতে কি আমরা ‎ভূমিকা ‎রাখতে পারি না? যারা হারিয়ে ‎যাচ্ছে তাদের জন্যে কিছু ‎করতে না পারলেও ‎যারা এখনো এ সবের ‎ছোঁয়া থেকে ‎হেফাজতে আছে তাদের তো আমরা রক্ষা করতে ‎পারি অথবা ‎কমপক্ষে ‎রক্ষার চেষ্টা করতে পারি। যারা চলে গেছে বা পঁচে ‎গেছে ‎তাদের ‎মাঝেও অনেক মানিক রতন আছে। গল্পের সেই ‎নিজাম ডাকাত ‎সেখানেও লুকিয়ে ‎‎থাকতে পারে। আমার ‎বিশ্বাস, আমরা যদি ভালোবাসা ‎নিয়ে এগিয়ে যাই তা হলে ‎তারা ‎আমাদের ভালোবাসাকে উপেক্ষা করতে ‎পারবে না।‎
লন্ডন, ১২ নবেম্বর ২০১৭‎

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button