ঘূর্ণিঝড় পাইলিনে লন্ডভন্ড উড়িষ্যা : নিহত ২৫, লাখো ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত

Phalinপাইলিনের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। প্রায় ৯০ লাখ মানুষের ঘরবাড়ির ওপর আঘাত এনেছে এ ঘূর্ণিঝড়টি। এই তাণ্ডবে প্রায় লাখো ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। রবিবার ভোর থেকে কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কাজ শুরু করেছেন। শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে বঙ্গোপসাগের সৃষ্ট ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় পাইলিন উড়িষ্যার গোপালপুরে প্রথম আঘাত হানে। সেখানে ৭ জন নিহত হয়েছেন। ঝড়ের কারণে ভুবনেশ্বরসহ বহু জায়গাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের মতে, বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ভারতে এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়ের আঘাত।
ভারতের আবহাওয়া দফতরের প্রধান এল এস রাঠোর জানান, ঘূর্ণিঝড়টি যখন গোপালপুরে আঘাত হানে তখন এর আওতায় বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ২০০ থেকে ২১০ কিলোমিটার।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র পাইলিনকে সুপার সাইক্লোন বা সর্বোচ্চ মাত্রার সাইক্লোন বলে বর্ণনা করেছে যার আওতায় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৯৬ মাইল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তবে ভারতের আবহাওয়া দফতর বলছে এটি ক্যাটাগরি চার সাইক্লোন।
এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ভারতের পূর্ব উপকূলজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে। অন্তত ৫ লাখ মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলো থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় পাইলিন উড়িষ্যা রাজ্যের গোপালপুর দিয়ে প্রথম স্থলভাগে আঘাত হানে। উড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশের প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার উপকূল রেখাজুড়ে ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতের উপদ্রুত এলাকার বন্দরগুলোকে আবহাওয়া দফতর থেকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়।
সামরিক বাহিনী মোতায়েন : ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ভারত সরকার সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনী সদস্যদের মোতায়েন করে।
সেই সঙ্গে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনীর প্রায় ২ হাজার ৩০০ সদস্যকে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
১৯৯৯ সালে এক ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের নিহত হয়েছিলেন। সেবার ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সরকারের যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল না বলে সমালোচনা হয়েছিল। সে কারণে এবার আগে থেকেই ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার জন্য সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
সারা রাত ধরে অভিযান চালিয়ে উপকূল থেকে হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়।
জনশূন্য গোপালপুর : ঘূর্ণিঝড় পাইলিন উড়িষ্যার যে জায়গায় প্রথম আঘাত হানে। ঝড় আঘাত হানার ঘণ্টাখানেক আগে সেখানে তখনই প্রচ- হাওয়ায় বাড়ি ঘরের টিনের চাল উড়ে যেতে শুরু করে।
সুপার সাইক্লোন : যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ‘টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার’এই ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে যে পূর্বাভাস দিচ্ছে, তার সঙ্গে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের পূর্বাভাসের কিছুটা তফাৎ দেখা যাচ্ছে।
ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের হিসেবে ‘পাইলিন’ হচ্ছে ক্যাটাগরি ফোর বা চার মাত্রার ঘূর্ণিঝড়। এই ঘূর্ণিঝড়ের আওতার মধ্যে ঝড়ো বাতাসের সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১৩৬ মাইল থেকে ১৫০ মাইল পর্যন্ত। এর সঙ্গে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের হিসেবে এই ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৬১ মাইল হতে বেড়ে ১৯৬ মাইল পর্যন্ত হতে পারে। যা ক্যাটাগরি ফাইভ ঘূর্ণিঝড়ের সমতুল্য।
সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ক্যাটাগরি ফাইভ হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী। এই ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপারে ভারতীয় কর্মকর্তারা যে ধারণা দিচ্ছেন তার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা কিন্তু অনেক বেশি।
নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলছে, বঙ্গোপসাগরে এ পর্যন্ত যতো ঘূর্ণিঝড়ের রেকর্ড তাদের কাছে আছে, পাইলিন হতে যাচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়গুলোর একটি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button