জাতীয় কবির ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী মঙ্গলবার

Nazrul Islamমঙ্গলবার ১২ই ভাদ্র। দ্রোহ ও স্পন্দনের প্রতিচ্ছবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের এই দিনে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তিকাল করেন। বাংলা তথা বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম উজ্জ¦ল জ্যোতিষ্ক দীর্ঘ চার দশক অসুস্থ, বাকরুদ্ধ ছিলেন। সকল মানুষের এই কবিকে তার নিজের লেখা ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’ গানের মতোই ভোলা যায় না। যখনই কোনো উপলক্ষ আসে তখনই তাকে খুব বেশি মনে পড়ে। অসাম্য, উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার এই কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্মসূচি নিয়েছে। এ উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন, সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বাণী দিয়েছেন।
বাংলাদেশের জাতিসত্ত্বা ও সামগ্রিক ইসলামী চেতনার সাথে কাজী নজরুলের নামটি জড়িয়ে আছে অবিচ্ছিন্নভাবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্ম নিলেও নানা আনুকূল্যে তিনি এ দেশকে ভাবেন নিজের দ্বিতীয় জন্মভূমি। নজরুল চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। মৃত্যুর আগে নিজেই বলে গিয়েছিলেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই/যেন গোর থেকে মোয়াযযিনের আযান শুনতে পাই’। ইসলামের ঝা-া ও তাওহীদবাদের মধ্যদিয়ে নজরুল মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের পাশে তিনি সব সময় ছিলেন ছায়াবৃক্ষের মতো। নজরুল বেড়ে উঠেছিলেন দারিদ্র্যের সাথে আজন্ম সংগ্রাম করে। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’।
মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে লেখা ‘বিদ্রোহী’ কবিতা বিশ্ব সাহিত্যের অনন্য সৃষ্টি। বিশ্ব কাঁপানো কবিতা ছাড়াও তিনি লিখেছেন অজ¯্র গল্প, উপন্যাস, নাটক, গান এবং প্রবন্ধ। সাংবাদিকতা, চলচ্চিত্র নির্মাণ, এমনকি চিত্রাঙ্কনেও নজরুল ছিলেন সাবলীল। যে নজরুল আমাদের জাতীয় চেতনার উৎস, শুধু ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত সাহিত্য রচনার কারণে সেই নজরুলকে সহজেই ভুলে যেতে চায় তথাকথিত প্রগতিবাদী, সেক্যুলারপন্থীরা। কাজী নজরুল নিজেই তাদের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছেনÑ ‘উহারা প্রচার করুন হিংসা-বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ/আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ’।
বেগম জিয়ার বাণী : বিএনপি চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া তার বাণীতে বলেন, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ, মানবতা ও সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার ক্ষুরধার লেখনীর দ্বারা সকল রকম অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার আর জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তার অনন্য দৃষ্টিতে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে। সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিভার স্পর্শ পায়নি। তিনি জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমকে বিদ্রোহ করার প্রেরণা যুগিয়েছেন। তার রচিত কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির ভা-ারকে করেছে সমৃদ্ধ। শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে আপোষহীন অবস্থান তাকে ‘বিদ্রোহী কবির খ্যাতি এনে দিয়েছে।
তিনি বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের সামনে চলার অন্তহীন প্রেরণার উৎস। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার কবিতা ও গান যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধা ও এ দেশের মুক্তিকামী মানুষকে সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে, উজ্জীবিত করেছে। আজো আন্দোলন সংগ্রামে তার কবিতা ও গান আমাদেরকে শক্তি ও সাহস জোগায়। বেগম জিয়া বলেন, মানব প্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত কবি কাজী নজরুল ইসলাম। মানুষকে ভালোবেসে তাদের কল্যাণে আত্মনিবেদিত হতে তার রচনা আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। তার সাহিত্যকর্ম আমাদেরকে চিরকাল স্বদেশ প্রেমে অনুপ্রাণিত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
এছাড়া ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আলাদা বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচি : জাতীয় কবির ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নজরুল ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। নজরুল ইনস্টিটিউটের নেয়া তিন দিনের কর্মসূচির আজ শেষ ও মূল দিবসে জাতীয় জাদুঘরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। বাদ ফজর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে কুরআনখানি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সকাল ৭টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ জমায়েত হবেন। সেখান থেকে তারা সকাল ৭টা তারা ১৫ মিনিটে ভিসির নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির মাজারে গমন, পুষ্প অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। পরে কবির মাজার প্রাঙ্গণে ভিসির সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button