ত্রিদলীয় কোয়ালিশনের পথে হাঁটছে ব্রিটেনের নির্বাচন

যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে লেবার এবং কনজারভেটিভ কেউই জনমত জরিপে একে অন্যের কাছ থেকে বেশ ব্যবধানে এগিয়ে নেই। মিলিব্যান্ড কিংবা ডেভিড ক্যামেরন জনমতের দিক থেকে কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত নির্বাচনী দৌড়ে ক্যামেরন কিংবা মিলিব্যান্ডের ভাগ্য অনিশ্চিত এক পথের যাত্রী হয়ে আছেন এখন পর্যন্ত। তবে গত দুই সপ্তাহের নির্বাচনী প্রচার আর ক্যাম্পেইনে ব্রিটেনের টপ জরিপ পন্ডিতদের মধ্যে মিলিব্যান্ড ওভারাল মেজরিটি না পেলেও কিছুটা এগিয়ে আছেন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রীটের দৌড়ে।
এদিকে প্রভাবশালী পত্রিকা গার্ডিয়ান বলছে, তারা এ মাসের শুরুর দিকে প্রধান প্রধান জনমত জরিপ সংস্থাগুলোকে বলেছিলেন নির্বাচনী জরিপে কে এগিয়ে আছেন- তথ্য, ডাটা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে জানাতে। এক মাসের পরে তারা সকলেই জানিয়েছেন নির্বাচনী দৌড়ে এখন পর্যন্ত কেউই তেমন এগিয়ে নেই। উভয়ের মধ্যে নেক এন্ড নেক তারতম্য। তথাপি এই নেক এন্ড নেক ব্যবধানের মধ্যে মিলিব্যান্ড ক্যামেরন থেকে অল্প কিছু এগিয়ে। কিন্তু তাদেরকে যখন বলা হলো- কে হতে যাচ্ছেন ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী, যেহেতু নির্বাচনের মাত্র আর দুসপ্তাহের মতো সময় আছে, তখন তারা বললেন, মিলিব্যান্ডের পাল্লায় বলা যায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা প্রবল, তবে নির্বাচন যতোই এগিয়ে আসছে, সেই সম্ভাবনা ততোই অনিশ্চিত হচ্ছে।
এ পর্যন্ত নির্বাচনী সকল জনমত জরিপ বিশেষ করে ইউগভ, আইসিএম, মরি, কমরেস, টিএনএস, অপিনিয়াম, পপুলাস এবং সার্ভেশন- এই প্রধান প্রধান জনমত জরিপের ভিত্তিতে ব্রিটেন যে আগামীতে এককতো নয়, দ্বিদলীয় কোয়ালিশনও নয় বরং ত্রিদলীয় কোয়ালিশনের পথে হাঁটছে- সেটা স্পৃষ্ট হওয়ার পরে আমরা দেখবো, কার সম্ভাবনা প্রবল ১০ নং ডাউনিং স্ট্রীটের চাবির অধিকারী হতে।
ইউগভ : বৃহৎ জনমত জরিপকারী সংস্থা ইউগভ মূলত, প্রতিদিনই নির্বাচনী জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। নির্বাচনের দুই সপ্তাহ থাকলেও নির্বাচনী প্রচার শুরু থেকে, এমনকি বছর খানেক আগে থেকেই এই সংস্থা প্রতিদিনই এর ডাটা বিশ্লেষণ, তথ্য, উপাত্ত সংগ্রহ, নানা পন্থায় জনগণের মতামত নিয়ে পুলের কাজ পরিচালিত করে আসছে। ইউগভের জনমত জরিপে এখন পর্যন্ত দুই পার্টিই একেবারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলা জানা গেছে। কেউই মেজরিটি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এদের মতে উভয় দল বৃহৎ জনগণকে তাদের ক্যাম্পেইনে শরিক করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে জন্যে ইউগভের হেড অব পলিটিক্যাল এন্ড রিসার্চ জো থাইম্যানের মতে, এই মে মাস হবে কনজারভেটিভের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যদি কনজারভেটিভ দল ২৯০ আসন পেয়েও যায়, লিব ডেম ২৫ আসন ম্যানেজ করতে সক্ষম হয়, তারপরেও এই কোয়ালিশন- সরকার গঠনের জন্য আরো আসনের দরকার হবে। কিন্তু তাতেওতো টোরি-লিবডেম দমে যাবে না। তাদের হাতে এখনো বিকল্প আছে ইউকিপ এন্ড ডিইউপি কে সঙ্গে নিয়ে বহুদলীয় কোয়ালিশন সরকার গঠন। আর বিপরীত পক্ষে লেবার দল যদিও ২০টি আসন বেশি নিয়ে এগিয়ে যায়, তারপরেও তাদের প্রয়োজন পড়বে ঐতিহাসিকভাবে তাদের বাজে সঙ্গী লিবডেম এবং এসএনপিকে নিয়ে ত্রিদলীয় কোয়ালিশন সরকার গঠনের। ইউগভের এই এনালাইসিসের দিকে আলোকপাত করলে দেখা যাবে, ক্যামেরনের জন্য কোয়ালিশন গঠন যতোটানা কঠিন, ততোটা না হলেও আপাত: কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন মিলিব্যান্ড এবং এই হিসেবে মিলিব্যান্ডের সরকার গঠনের সম্ভাবনা কিছুটা প্রবল।
আইসিএম: জনমত জরিপের অন্যতম প্রভাবশালী সংস্থা আইসিএমের ফলাফলেও একই চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। অর্থাৎ এদের জরিপে লেবার এবং কনজারভেটিভ উভয়ের মধ্যে নেক এন্ড নেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আইসিএম ডিরেক্টর মার্টিন বোন অবশ্য মনে করেন না এক্ষেত্রে খুব একটা কম পরিবর্তন হবে। তবে যেহেতু হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সর্বশেষ পুল হিসেবে কিছুটা এগিয়ে মিলিব্যান্ড- তাই বলা যায় মিলিব্যান্ডের সম্ভাবনা একটু বেশি।
মোরি: অন্যতম জনমত জরিপ সংস্থা ইপসোস মোরিসের চীফ এক্সিকিউটিভ বেন পেজের মতে, গত সপ্তাহে মিলিব্যান্ড ব্যক্তিগতভাবে বেশ খানিকটা এগিয়ে রয়েছেন এবং লেবার দল দলগতভাবে একটু এগিয়ে এখন পর্যন্ত কিন্তু সেটা খুব একটা আশাব্যঞ্জকও নয়। ডেভিড ক্যামেরন কিন্তু সুইং ভোটারদের নিজের লাইনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বেশ দক্ষ এক নাবিক এবং সেভাবেই চেস্টা অব্যাহত রাখবেন নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত। আর সেই সূচকে ক্যামেরন হাউস অব কমন্সে তিনি ডাউনিং স্ট্রীটের দৌড়ে একেবারে খুব কাছাকাছি থাকছেন বা থাকবেন বা এগিয়েও যেতে পারেন।
কমরেস: জনমত জরিপ কমরেস এর মতামত প্রায় কাছাকাছি উপরের জরিপকারী সংস্থা বা গ্রুপগুলোর মতো এবং তাদের মতামতের থেকে খুব একটা তারতম্য নয়।
টিএনএস: এই পুলের মতামতও প্রায় একই রকম হলেও এই পুলের মিশেল হ্যারিসন অবশ্য একটু ভিন্ন আঙ্গিকে দেখছেন। তার মতে, লেবার দলের জন্য গত সপ্তাহ থেকে মিলিব্যান্ডের ব্যক্তিগত পারফর্ম্যান্স ভালো হলেও এসএনপির স্ট্রুজেন মিলিব্যান্ড ও লেবার দলের জন্য মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে, যেমন করে একই ধারায় ক্যামেরন ও টোরির জন্য নাইজেল ফারাজও তাদের ডেমেজের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছেন।
ওপিনিয়াম: পুল যদিও সাজেস্ট করছে উভয় দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না, তথাপি তারা প্রশ্ন রেখেছেন, ঝুলন্ত পার্লামেন্ট যাই হউক উভয় দলকেই সেই পার্লামেন্টারি সরকারে ছোট ছোট দলকেই নিয়েই করতে হবে। তবে প্রশ্ন হলো- দুদলেরই বিরাট সমর্থক ও ভোট ব্যাংক থাকা সত্যেও সেই সমর্থক ভোটার গেলেন কোথায়? তারা কি তাদের সম্মানিত ভোটারদের মতামত একে অন্যকে শেয়ার করবেন? তাদের মতে কনজারভেটিভ ভোট শেয়ার করে জয়ী হলেও মূলতঃ ন্যাশনাল ভোট শেয়ার এবং আসনের মধ্যকার সম্পর্ক হেরে যাবে। ফ্লটিং ভোটের হিসেবে তাদের মতে কনজারভেটিভ কিছুটা এগিয়ে। কনজারভেটিভ বেশি আসনে এগিয়ে গেলেও ছোট ছোট দল নিয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হবে।
পপুলাস: তাদের মতেও দুই দল হাডাহাড্ডি লড়াই এবং তারা বলছে যদি কনজারভেটিভ কিংবা লেবার যারাই মেজরিটি হোন না কেন সরকার গঠনে অন্যদের সহযোগিতা লাগবে, সেক্ষেত্রে কোয়ালিশনের কনফিডেন্স, টার্মস ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়।
সারভেশন: পুলে প্রায় একই দৃশ্য কিন্তু ইলেক্ট্রোরাল বাউন্ডারিতে লেবার ভালো অবস্থানে আছে যদিও কনজারভেটিভ নির্বাচনে সুইং ভোট টানার দৌড়ে এগিয়ে কিন্তু সেক্ষেত্রেও মেজরিটি নিতে হবে তাদের। আর সেক্ষেত্রেও ঝুলন্ত পার্লামেন্ট বৈ কিছু নেই। এই পর্যন্ত সকল অবস্থাতেই দেখা যাচ্ছে ব্রিটেনের আগামীর সরকার বহুদলীয় কোয়ালিশন সরকার হতে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো সেই দৌড়ে ৭ তারিখ কে বাজিমাত করবেন এবং হাউস কমন্সে আসন ভাগাভাগিতে কে বেশি অন্যদের সমর্থন লাভে সক্ষম হবেন- নানা হিসেব নিকেশ আর দরকষাকষিতে সেই দৃশ্য দেখার জন্য ৭ মে’র নির্বাচনসহ নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সিনারিও পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button