‘আসুন আমরা মানুষ হই’

স্টালিন সরকার: পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যপট। অপসংস্কৃতিই যেন হয়ে উঠেছে দেশে সংস্কৃতি। পহেলা বৈশাখ এখন হয়ে উঠেছে তরুণ-তরুণীর উলঙ্গ উন্মাদনা। পুরনো দিনকে মুছে ফেলতে গিয়ে আবহমান বাংলার কৃষ্টি-কালচার, জারি-সারি-ভাটিয়ালি-মুর্শিদীকে বিদায় করা হচ্ছে। পাশ্চাত্য ব্যান্ড সংগীত আর কলকাতার মঙ্গল প্রদীপ-মঙ্গল শোভাযাত্রা-হোলি খেলা-ভাইফোঁটা হয়ে যাচ্ছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতির নাম যেন শিশু-কিশোর, স্কুল পড়ুয়া তরুণ তরুণীদের কাছে পহেলা বৈশাখে রমনা-সোহরাওয়ার্দী-ওসমানী উদ্যানে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে জোড়ায় জোড়ায় বসে আড্ডা দেয়া, পুরুষের শরীরে মহিলাদের উল্কি আঁকা, মেয়েদের গালে ছেলেদের উল্কি আকার প্রতিযোগিতা। প্রেমিক-প্রেমিকা জোড়া মিলিয়ে রিকশার হুড ফেলে ঘুরাঘুরি। পান্তার সঙ্গে ৫শ’ টাকায় এক টুকরা ইলিশ খাওয়া আর নারী-পুরুষে মিলে এক ধরনের নোংরামি করে স্মরণীয় করে রাখা। মিথ্যা না বলা, অন্যায় না করা, গুরুজন-মুরুব্বীদের সম্মান করার শপথ নেয়ার পরিবর্তে বাধাহীন অনৈতিকতা আর নোংরামি করাই যেন হয়ে গেছে পহেলা বৈশাখের মাজেজা। মুসলিম-হিন্দুর সম্প্রীতির এই বাংলাদেশের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে পাশ কাটিয়ে বাঙলা সংস্কৃতির চর্চার নামে মূল সংস্কৃতিকে বিসর্জন দেয়া হচ্ছে। হাজার বছরের সংস্কৃতির বিসর্জনে অপসংস্কৃতিই হয়ে উঠেছে বরণীয়। কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছা পূরণই যেন সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসিমুখী গেইটের সামনে পহেলা বৈশাখে তরুণীর বস্ত্রহরণ এবং কয়েকজন নারীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তোলপাড় চলছে। দোষীদের বিচারের দাবি, পুলিশ বাহিনীকে দোষারোপসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের তল্পিবাহক বুদ্ধিজীবীরা ‘নীরবতা’ পালন করলেও অনেক বিশিষ্টজন, শিক্ষাবিদ এ ঘটনার প্রতিবাদ করে দৈনিক পত্রিকায় কলাম লিখেছেন। অধ্যাপক এম আনিসুজ্জামান, রাশেদা কে চৌধুরী, মাহফুজা খানম, আনিসুল হক, নায়িকা শাওনসহ কয়েকজন ঘৃণা জানিয়েছেন। শাওন ২২ বছর আগের তার জীবনের যন্ত্রণা তুলে ধরেছেন। সকলেরই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। অধিকাংশ লেখাই যা ফুটে উঠেছে ‘আমরা পুরুষ অথচ মানুষ হইনি’। ‘আমরা কি মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছি’ ইত্যাদি। কিন্তু ছেলেমেয়েদের নৈতিকতা, শালীনতা, সামাজিকতা, মুসলিম-হিন্দুসহ সব ধর্মের ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষার মাধ্যমে এসব বন্ধ হতে পারে সে কথা কোনো বিশিষ্টজন উচ্চারণ করেননি। পারিবারিক আচার-আচরণ এবং শিশুকালে বাবা-মায়ের কাছে নৈতিকতা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেননি। তাদের ভাবখানা সাংস্কৃতি চর্চার নামে বেহায়াপনা চলছে চলুক। পথে প্রান্তরে প্রগতিশীলতার নামে উলঙ্গপনা চলছে সেটা বাড়তে দাও। নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে সকলকে পথে নামতে দাও। কিন্তু অপ্রীতিকর কিছু করো না। ছেলেমেয়ে প্রেম করো, পার্কে গায়ে গায়ে লেগে বসো, গলাগালি-জড়াজড়ি করে প্রগতিশীল সাংস্কৃতির চর্চা করো, কিন্তু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিও না। এক সাহিত্যিক দুঃখ করে লিখেছেন, প্রচন্ড গরমের রাতে হাওয়া খেতে ছেলেরা খালি গায়ে রাস্তায় হাটাহাটি করার সুযোগ পায় অথচ মেয়েদের বেলায় সেটা কল্পনাও করা যায় না। কেন এই বৈষম্য !
এবার পহেলা বৈশাখে কোথাও যাওয়া হয়নি। বিকালে এক অধ্যাপক বন্ধুর ফোন। গুলিস্তানে আসো তোমার বাসায় যাব। গুলিস্তানের ওসমানী উদ্যানে বন্ধুর সঙ্গে দেখা হতেই পহেলা বৈশাখের উল্কিচিত্র নিয়ে নানা কথা শোনালেন। রমনা-সোহরাওয়ার্দী পার্কে কেন্দ্র করে পান্তা-ইলিশ আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে ঢলাঢলি চলছে। শাহবাগে যা হচ্ছে তা সভ্যতা ভব্যতা বিবর্জিত। সর্বত্র লোকে লোকারণ্য। দুপুরের প্রখর রোদে অনেকেই ওসমানী উদ্যানে গাছের নিচে বসেছেন। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সবার মাঝে একটা নতুন নতুন ভাব। গায়ে পাঞ্জাবি-পায়জামা, কেউ লাল-সাদা শাড়ি আবার কেউ সালোয়ার-কামিজ পরেছে। হাতে ফুল মাথায় ফুলের বেণী। হিন্দুধর্মের মহিলার শাঁখা সিঁদূর পরেছেন। অনেকে এসেছেন ছেলেমেয়েদের নিয়ে। অধিকাংশের মুখে উল্কি। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সবধর্মের মানুষ ও অভিভাবকরা ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েকে নিয়ে এসেছেন বর্ষবরণে কিছু দেখানোর জন্য, কিছু শেখানোর জন্য। কিন্তু আমরা কী দেখালাম আর কী শেখাচ্ছি আমাদের সন্তানদের? আমরা শিশুদের দেখাচ্ছি প্রেম-ভালোবাসার নামে বর্ষবরণের দিনেও কীভাবে মুম্বাই সিনেমার নায়ক-নায়িকার মতো অঙ্গভঙ্গি করতে হয়। গাছের নিচে জোড়ায় জোড়ায় বসে আড্ডা দিতে হয়। কীভাবে ছেলেমেয়ে প্রেম করতে হয়। হাজার মানুষের সামনে ঢলাঢলি করতে হয়। প্রেম করলে কীভাবে গাছের নিচে প্রেমিকার কোলে মাথা দিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে খুনসুঁটি করতে হয়। কীভাবে হাজার হাজার মানুষের সামনে প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরকে জড়িয়ে ধরতে হয়। কীভাবে পর পুরুষ হয়েও যুবতী মেয়েদের দিয়ে নিজের শরীরে উল্কি আঁকিয়ে নিতে হয়। রাস্তায় ছেলেমেয়ে বন্ধু মিলে দৃষ্টিকটূ হৈহুল্লোড় করতে হয়। নারীর শরীর তার; অধিকার সবার। রিকশায় করে কীভাবে জোড়া মিলিয়ে ঘোরাঘুরি করতে হয়। পান্তা-ইলিশের নামে কীভাবে গ্রামের অভাবি গরিব সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করতে হয়। কীভাবে ভাই ফোঁটা, ভালোবাসা দিবস পালন, হোলি খেলার নামে রং মাখামাখি করে ছেলেমেয়ের মধ্যে ছোঁয়াছুয়িতে মেতে উঠতে হয়। পহেলা বৈশাখে দেখা গেল উল্কি আর রং মাখামাখিতে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে মেয়েরা। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েরা রংয়ের কৌটা আর তুলি নিয়ে আছেন। সামন দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে তার শরীরে রং মাখিয়ে দিচ্ছেন, মুখে-শরীরে উল্কি এঁকে দিচ্ছেন। কারো কাছ থেকে ১০/২০ টাকা নিচ্ছেন। ছেলেরা অতি উৎসাহে একশ’/দুইশ’ টাকা দিয়ে মেয়েদের কাছ থেকে উল্কি এঁকে নিচ্ছেন। এধরনের ঘটনায় কী সমাজে অনৈতিকতার চর্চা বেড়ে যাচ্ছে না? এসব কী প্রগতিশীলতার নমুনা ! শাহবাগ-টিএসটি-মৎস্যভবন এলাকার বিভিন্ন স্পটে গানের আসরে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে গান শুনছেন-হুড়োহুড়ি করছেন। এটাই কী আধুনিকতা ? মঙ্গল শোভাযাত্রার মিছিলের ব্যানারের সামনে একজন মন্ত্রীকে দেখা গেল নর্তকির মতো নাচছেন। টিভি পর্দায়ও সে চিত্র দেখানো হয়। মন্ত্রী নর্তকির মতো নাচন কী কোনো ভদ্র রুচির মধ্যে পড়ে ? মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে হিংস্র জানোয়ারের ছবি, কার্টুন, ঢোল, তবলা, বাঁশিই কী মূল সংস্কৃতি ! হিংস্র জানোয়ারের মুখোশ পরলে মানুষের মধ্যেতো হিংস্রতা জন্ম নিতেই পারে।
শৈশবে পহেলা বৈশাখ পালনে গ্রামে আমরা দেখেছি ঠিক উল্টো চিত্র। নতুন বছর বরণে মানুষের মধ্যে ছিল ভিন্ন আমেজ। এইদিনে সকালে মা বোনেরা কোরআন পড়তেন। দিনটি ভালোভাবে পার করার চিন্তা করতেন এবং ভালো খাবার খেতেন। সকলে পণ করতেন সারাদিন কারো সাথে কোনো খারাপ আচরণ করবেন না। কেউ কেউ ছেলেমেয়েদের মঙ্গল কামনায় রোজা পর্যন্ত রাখতেন। রাত জেগে নামাজ পড়ার রেওয়াজও ছিল। নতুন বছরের প্রথম দিনে প্রতিজ্ঞা করতেন গেল বছরে জেনে না জেনে যে অন্যায় করেছি, মিথ্যা বলেছি, মানুষের অধিকার নষ্ট করেছি, তা থেকে মুক্ত হব। এজন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন, প্রতিজ্ঞা করতেন নতুন বছরে মিথ্যা-অন্যায় এড়িয়ে চলার। মসজিদগুলোতেও দোয়ার আয়োজন করা হতো। ছেলেমেয়েদের নৈতিক শিক্ষা দেয়া হতো, মদনমোহন তার্কালঙ্কার ‘শিশুর পণ’ পড়ানো হতো। ব্যবসায়ীরা হালখাতা করতেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও নতুন কাপড় পরতেন। চৈত্র সংক্রান্তি পূজা করতেন। নতুন জামা পরতেন। গরিব আত্মীয়-স্বজনদের জামা-কাপড় দিতেন। মেয়েরা শাঁখা নতুন শাড়ি পরে ঘুরতেন। ভালো খাওয়ার চেষ্টা করতেন। গ্রাম-বাংলায় বসবাসরত খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনও নিজেদের মতো করে পহেলা বৈশাখ পালন করতেন। পান্তা-ইলিশ খাওয়া বা মঙ্গল শোভাযাত্রা সম্পর্কে মানুষ কিছুই জানতেন না।
বন্ধু অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান দু’দিন আগে হঠাৎ বাসায় এসে খাটে শুইয়েই দু’টি ফ্যান চালিয়ে দিলেন। টেনশনে শরীর ঘামছে তার। জানালেন মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছে সকালে। দুপুর থেকে ফোন বন্ধ, যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। মেয়ের জন্য মা-বাবা অস্থির বাসায় খাওয়া বন্ধ। মাগরিবের আগে মেয়ে ফোন করে জানান তার মোবাইল হারিয়ে গেছে; বাসার পথে রয়েছেন। স্বস্তি আসে পরিবারে। মেয়েরা বাইরে গেলে বাবা-মায়ের এই উদ্বেগ চিরাচরিত। অথচ যেসব মেয়ে সংস্কৃতি চর্চার নামে উল্কা আঁকছেন, ছেলেদের সঙ্গে ঢলাঢলি করছেন, প্রেমের নামে রমনা আর সোহরাওয়ার্দী পার্কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিচ্ছেন তাদের বাবা-মায়েদের চিন্তা হয় না? নাকি প্রগতিশীলতা চর্চার জন্য তারা মেয়েদের যাচ্ছেতাই করার সার্টিফিকেট দিয়েছেন? এখন প্রগতিশীলতা আর সংস্কৃতিমনা মানেই যেন নোংরামি-নষ্টামি। নারীর সমান অধিকারের নামে আমরা যেন এক নোংরা খেলায় মেতে উঠেছি। অতীত ঐতিহ্য, নৈতিকতা হারিয়ে অনৈতিকতার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। পরিবর্তন আর উন্নতি সবাই চায়। আমরাও চাই। তবে পরিবর্তনের নামে নোংরামি নয়। রাস্তা-ঘাটে-পার্কে বেলেল্লাপনা দেখতে চাই না, নারীপুরুষে বৈষম্য চাই না, অনৈতিকতা চাই না। হায়েনার হাতে মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন দেখতে চাই না। সংস্কৃতির নামে অসুস্থতা দেখতে চাই না। রাশেদা কে চৌধুরী লিখেছেন, নববর্ষের দিন বৈশাখী উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নারী ও শিশু নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছে। তাহলে আমরা কি মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছি? বিশিষ্টজন, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী যারা নারীর বস্ত্রহরণের ঘটনায় ঘৃণা জানিয়ে লিখেছেন তারা প্রায় সকলের বক্তব্যÑ ‘মুক্তমনা হও, আধুনিক হও, প্রগতিশীল হও, সাংস্কৃতিমনা হও’ ইত্যাদি। কিন্তু এধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য যে মুক্তমনার নামে বেলেল্লাপনা, উগ্রতা, সামাজিক ও নৈতিকতা বিবর্জিত আচরণ দায়ী সেটা তারা বলেন না। সমাজে নৈতিক শিক্ষার অভাব, ধর্মীয়-সামাজিক মূল্যবোধের অভাবে যে এসব অপ্রীতিকর ঘটনা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে সে প্রসঙ্গ কেউ তোলেননি। তবে ব্যারিস্টার সারা হোসেন গতকাল একুশে টিভিতে বলেছেন, নারীর বস্ত্রহরণের ঘটনার পর পরই কর্তৃপক্ষ ঘটনা অস্বীকার করে। কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করলে পুলিশের ক্ষমতা আছে তারা অনুসন্ধান করবে? কারণ তাকে তো পার্বত্য জেলায় বদলি করা হবে। তবে আশার কথা এবার ‘এ ঘটনার জন্য জঙ্গিরা দায়ি এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকানোর জন্য এ ঘটনা হয়েছে’ এই পুরনো রেকর্ড সরকার প্রচার করেনি। সমাজে যারা পথ দেখাবেন সেই বিশিষ্টজনেরা ছেলেমেয়েদের ‘মুক্তমনা, আধুনিক, প্রগতিশীল, সাংস্কৃতিকমনা হওয়ার আহ্বান জানান; অথচ বাস্তবে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রকৃত মানুষ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন না। সব ধর্মেই নৈতিক শিক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ। বিশিষ্টজনদের সেøাগান হওয়া উচিত রাজপথে নারীর বস্ত্রহরণ করে পশুত্ব প্রদর্শন নয়; আসুন, আমরা আগে সবাই মানুষ হই। শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজনেরা কী নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মানুষ হওয়ার ডাক দেবেন না ?

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button