ঐতিহ্য ভেঙ্গে এশিয়ার চার দল কোয়ার্টার ফাইনালে

ICCযৌথ আয়োজক অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড বরাবরের মতই এবারের আসরেও নিজেদের আধিপত্য দেখালেও অনেকটা আকস্মিক ভাবেই এশিয়ার চারটি দেশই কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গিয়ে উপ-মহাদেশের মান রক্ষা করেছে।
ঐতিহ্যগতভাবেই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেটে এশিয়ান ক্রিকেটাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারবে না, এটাই বিশ্বকাপের আগে মূল আলোচনা ছিল। কিন্তু সবকিছুকে পিছনে ফেলে গ্রুপ পর্বের বাঁধা পেরিয়ে ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ এখন শেষ আটে। আর মাত্র তিনটি জয় এই দলগুলোর যেকোন একটিকে হয়তবা বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দিতে পারে। ঠিক যেমনটি হয়েছিল ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে। সেই আসরে অনেকটা ছিটকে যাওয়া পাকিস্তানই শেষ পর্যন্ত শিরোপা জয় করে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল। এবারো এশিয়ান দেশগুলোকে সবাই সমীহই করছে। ৯২’র বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য কিংবদন্তী ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম বলেছেন, এশিয়ান একটি দলের এবারো শিরোপা জয়ের দারুন সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের শিরোপা জয় না করার কোন কারনই নেই। তারা ভাল খেলছে এবং যোগ্যতর দল হিসেবেই শেষ আটে পৌঁছে গেছে। নক আউট পর্বে অতীত ফর্ম কোন ব্যপার নয়, নির্দিষ্ট ঐ দিনে যারা ভাল খেলবে তারাই ম্যাচে জয়ী হবে।
বিশ্বকাপের ঠিক আগে অস্ট্রেলিয়ায় বাজে একটি সফর কাটিয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত এবারের আসরে লড়াইয়ে নামে। গ্রুপ পর্বের ছয়টি ম্যাচেই শতভাগ জয় নিয়ে তারা পরের রাউন্ডে উঠে। এটা অনেককেই বিস্মিত করলেও দলীয় পরিচালক রবি শাস্ত্রী মোটেই অবাক হননি। সাবেক এই অল রাউন্ডার উইজডেন ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে বলেছেন, আমি মোটেই বিস্মিত হইনি। এখন আমাদের ভাল ক্রিকেট খেলে সামনে এগিয়ে যাবার পালা। এখানে চাপের কিছু নেই, শুধুমাত্র ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই মূল দায়িত্ব।
বৃহস্পতিবার ভারত ঐতিহ্যবাহী মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দিয়ে ইতোমধ্যেই নিজেদের যোগ্যতার জানান দিয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর প্রায় পুরোটা সময়ই টেস্ট এবং ওয়ানডেতে বাংলাদেশ নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। কিন্তু শ্রীলংকান কোচ চান্ডিকা হাতুরুসিংহের অধীনে এবং বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিকের পরামর্শে দলের চেহারা আমুল বদলে গেছে। বছরের শেষে এসে ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডেতে শতভাগ সাফল্য পায় মুশফিকুর রহিমের দল। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে মাহমুদুল্লাহ রিয়ারের টানা দুই সেঞ্চুরি নতুন করে আশা জাগিয়েছে বিশ্বকাপ দলে। এছাড়া টাইগারদের হয়ে ফাস্ট বোলার রুবেল হোসেন ও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তজা ছাড়াও তরুন তাসকিন আহমেদও নিজেকে প্রমান করেছেন। ২০০৭ সালের ক্যারিবীয়ান বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে ভারতকে বিদায় করেছিল বাংলাদেশ। সেই স্মৃতি এখনো উজ্জ্বল পুরো বাংলাদেশ শিবিরে। আত্মবিশ্বাসী দলীয় অধিনায়ক মাশরাফি বলেছেন, ‘আমরা সাফল্যের জন্য মুখিয়ে আছি এবং আমি আশাবাদী আমরা নতুন একটি উচ্চতায় উঠতে পারবো।’
মাশরাফি আরো বলেছেন দলের মধ্যে নতুন করে যে উদ্দীপনা তৈরী হয়েছে সেটা ধরে রাখাই এখন তার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ। এই প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা এবং একইসাথে ৯০ হাজার ধারনক্ষমতা সম্পন্ন মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে খেলতে নামা এসবই এখন বাংলাদেশের সামনে নতুন অভিজ্ঞতা। বিষয়গুলো নিয়ে দলের সবাই দারুন উজ্জীবিত। কিন্তু পেশাদার মনোভাবের দিক থেকে এসব ভুলে নিজেদের খেলার উপরই গুরুত্ব দেবার আহবান জানিয়েছেন দলীয় অধিনায়ক। বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছে বিশ্বের শীর্ষ দলগুলোর পাশে নিজেদের নাম লেখানোর।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়ের একটি বিষয় অন্তত নিশ্চিত সেমিফাইনালে যেকোন একটি এশিয়ান দল অবশ্যই যাচ্ছে। শেষ চারের জন্য শ্রীলংকা এবং পাকিস্তানও সমান দাবীদার। শ্রীংলকা বুধবার প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে। এই ম্যাচের আগে অভিজ্ঞ কুমার সাঙ্গাকারার ফর্ম নিয়ে গর্ব করতেই পারে লংকানরা। ৩৭ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের হাত ধরেই বিশ্বকাপে টানা চারটি সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছে শ্রীলংকা। ছয় ম্যাচে ৪৯৬ রান করে ব্যাটসম্যানদের তালিকায় সবার আগে অবস্থান করছেন অভিজ্ঞ সাঙ্গা। ৩৮ বছর বয়সী তিলকেরতেœ দিলশান দুটি সেঞ্চুরিসহ ৩৯৫ রান করেছেন। আর ইন-ফর্ম এই ব্যাটসম্যানদের সাথে প্রোটিয়া বোলার ডেল স্টেইন, মর্নে মরকেলদের গতির যে দারুন একটি লড়াই হবে তা সহজেই অনুমেয়।
কোচ মারভান আতাপাত্তুও দলের সাফল্যের ব্যপারে আশাবাদী। ১৯৯৬ সালের চ্যাম্পিয়ন এবং শেষ দুই আসরের ফাইনালিষ্টরা এবার আর সমর্থকদের হতাশ করবেন না বলেই তিনি মন্তব্য করেছেন।
এদিকে শুক্রবার আরেক কোয়ার্টার ফাইনালে এ্যাডিলেড ওভালে মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। এই ম্যাচ জেতার পাশাপাশি ১৯৯২ সালের স্মৃতি আবারো জাগিয়ে তোলারই আত্মবিশ্বাস জানিয়েছেন পাক অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button