আইটিভি প্রোগ্রামের ব্যাখ্যায় গ্লোবাল এইড ট্রাস্টের বিবৃতি

Global Aidব্রিটিশ বাংলাদেশী উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত চ্যারিটি গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট-নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারনার ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। ১৮ ফ্রেব্রুয়ারী আইটিভিতে এক্সপোজার প্রোগ্রামে চ্যারিটিস বিহেভিং বেডলি-শিরোনামে প্রচারিত ডকুম্যান্টারীতে গ্লোবাল এইডসহ আরো দুটি চ্যারিটির কিছু কর্মকান্ড উপস্থাপন করা হয়। একটি খৃস্টান চ্যারিটি দিয়ে সূচিত প্রোগ্রামের ২য় উপস্থাপনা ছিলো একটি হিন্দু চ্যারিটি নিয়ে। সবশেষে মুসলিম চ্যারিটি হিসেবে গ্লোবাল এইডের উপর আন্ডার কোভার ফিল্মের ভিত্তিতে কিছু চিত্র তুলে ধরা হয়। খন্ডকালিন কর্মী ও দুজন ভলেন্টিয়ারের বিচিছন্ন মন্তব্য এবং বাহির থেকে আসা একজন বক্তার মন্তব্যের ভিত্তিতে প্রচারিত প্রোগ্রামের সামগ্রিক বক্তব্যকে গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট তাদের নিজেদের বক্তব্য মনে করেনা। তবে বিতর্কের প্রেক্ষিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ও চ্যারিটি কমিশনের পরামর্শ গুরুত্বসহ বিবেচনা করা হচেছ এবং কিছু নির্দেশনা সাথে সাথে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এমনকি গ্লোবাল এইডের সিইও ব্যারিস্টার রেজওয়ার হোসেন তদন্তের স্বার্থে তার পদ থেকে সরে দাড়িয়েছেন।
ট্রাস্ট-এর বিবৃতিতে বলা হয়, আইটিভিতে দুজন ভলেন্টিয়ার এবং বিশেষ করে বাইর থেকে আসা একজন তরুন বক্তার মন্তব্যের সূত্র ধরে পুরো চ্যারিটিকে উগ্রপন্থি হিসেবে চিহ্নিত করা করার প্রয়াস চালানো হয়েছে। আইটিভির প্রোগ্রামের মাধ্যমে গ্লোবাল এইড উগ্রপন্থি বক্তাদের উতসাহিত করে-এমনটি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরোপুরি অস্বীকার করে চ্যারিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমাদের নিজস্ব প্রিভেনটিং এক্সট্রিমিজম( উগ্রপন্থা) পলিসি রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা উগ্রপন্থা কে প্রশ্রয় দেইনা এবং এ ধরনের কোনো বক্তাকেও উতসাহিত করিনা। আইটিভিতে একজন ভলেন্টিয়ার (যে আন্ডার কোভার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছে) যেভাবে অন্য দুজন ভলেন্টিয়ারের সাথে কথাবার্তার ভিত্তিতে কিছু চিত্র উপস্থাপন করেছেন-সেইসব অপেশাদার কথা বা মন্তব্যের কোনো অংশই গ্লোবাল এইড ধারন করেনা। এছাড়া ঐ রিপোর্টার এবং অন্য ভলেন্টিয়ারদের কেউই আমাদের ট্রাস্ট-এর স্থায়ী কর্মী নয়। তারা রামাদান ফান্ডরেইজিং-এর ব্যস্ত সময়ে খন্ডকালিন ভলেন্টিয়ার/কর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের কেউই এখন চ্যারিটিতে নেই। এছাড়া ইমরান ইবনে মানসুর নামের তরুন বৃটিশ মুসলিম বক্তার কিছু খন্ড বক্তব্য তুলে ধরে তাকে উগ্রপন্থি এবং এন্টি সেমিটিক (ইহুদী বিরোধী) হিসেবে উপস্থাপিত করার প্রয়াস চালানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে গ্লোবাল এইডের বক্তব্য হলো, গত রামাদানে যখন ইমারানকে দাওয়াত দেয়া হয়, তখন কিংবা এখনো তিনি বৃটেনের কোনো সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কালো তালিকাভূক্ত হননি। এছাড়া গ্লোবাল এইডের সিইও ব্যারিস্টার রেজওয়ানও ইমরানের বক্তৃতা প্রদান কালিন ইফতার চ্যারিটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। এদিকে খোদ ইমরান আইটিভিতেই তার মন্তব্যের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, তিনি ইহুদী ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বরং বুঝাতে চেষ্টা করেছেন যে, যায়নিজম মতবাদের নামে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে ইসরাইলি আদিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে সংঘাত চলছে, তার বিরুদ্ধে শুধু মুসলমান নয়, খোদ মানবতাবাদী ইহুদী ও খৃষ্টানরাও রয়েছেন। তারপরও গ্লোবাল এইড-ইমরান মানসুরকে নিয়ে এই বিতর্কের প্রেক্ষিতে তাকে ভবিষ্যতে আর আমন্ত্রন না জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট এর ট্রাষ্টি বৃন্দ জরুরী সভায় মিলিত হয়ে একটি স্বাধীন তদন্তের ব্যবস্থা করেছেন। আর এই তদন্তের যথার্থতার স্বার্থে খোদ ট্রাস্ট-এর সিইও এবং ট্রাস্টি পদ থেকে সরে দাড়িয়েছেন ব্যারিস্টার রেজওয়ান হোসেন। এছাড়া আইটিভিতে আন্ডার কোভার রিপোর্টারের সাথে আলাপের সূত্র ধরে যে মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে-তাতেও রেজওয়ান কোনো ইহুদী ধর্ম বিরোধী মন্তব্যে করেননি বলে উল্লেখ করেন।
আইটিভিতে দেখানো হয়েছে, রেজওয়ান কে প্রশ্ন করা হয়, ফিলিস্তিনের গাজায় কী ভাবে চ্যারিটির এইড প্রবেশ করে, তাতে তিনি ভিন্ন এক বৃটিশ চ্যারিটির মাধ্যমে ফিলিস্তিনে প্রবেশের স্মৃতি তুলে ধরেন। যদিও এই চ্যারিটির সাথে গ্লোবাল এইডের কোনো সম্পর্ক নেই। রেজওয়ান আবেগের সাথে বলেন, গাজার সাথে আমার প্রানের সম্পর্ক। তারপর তিনি বলেন, অনেক সময় ইহুদীরা টানেল গুলো নিয়ন্ত্রন করে এবং অর্থের বিনিময়ে ফিলিস্তিনে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। তবে আইটিভি দাবী করেছে, এভাবে অর্থের বিনিময়ে হহুদীরা টানেল পরিচালিত করে এর প্রমান পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য টেলিভিশন প্রেজেন্টার রেজওয়ান হোসেন গ্লোবাল এইড ছাড়া বেশ কিছু বৃটিশ মুসলিম চ্যারিটির ও মানবিক সংস্থার জন্য লাইভ ফান্ডরেইজ করে থাকেন। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ব্যক্তিত্ব বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্থে চ্যারিটির জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন এবং মানবিকতার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।
গ্লোবাল এইডের চেয়ারম্যান ড: আখতারুজ্জামান এক বিবৃতিতে গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট-এর সকল ডোনার এবং শুভাকাংখিদের বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য বিশেষ ভাবে আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মাত্র ৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত একটি ছোট চ্যারিটি নানা বাস্তবতার মধ্যে দিন দিন এগিয়ে যাচেছ। মূলত ভলেন্টিয়ার নির্ভর এই চ্যারিটির মাধ্যমে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের অসহায় বিপন্ন মানুষেরা সেবা পাচেছন। গরীব ও এতিমদের শিক্ষা কার্যক্রমে প্রাধান্য দিচিছ আমরা। আমাদের আর্থিক বিষয়াদি অত্যন্ত স্বচছতার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয় এবং সাধারন দাতাদের মাধ্যমে আমরা বছরে হাফ মিলিয়ন পাউন্ডেরেও বেশী অর্থ কালেকশন করে থাকি। ড: আখতার গ্লোবাল এইডের জন্য সকলের দোয়া ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button