বুধবার জামায়াতের ২৪ ঘন্টার হরতাল

আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদন্ড বহাল

Mujahidমানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশ  জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ ছিদ্দিকী।
গত ২৭শে মে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের আপিলের শুনানি শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে, আসামিপক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান।
এখন পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি মামলায় রায় ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যে আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয় মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং আবদুল কাদের মোল্লার। আমৃত্যু কারাদন্ডের রায় ভোগ করছেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। মৃত্যুর কারণে আপিল পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় গোলাম আযম ও আবদুল আলিমের মামলায়।
২০১৩ সালের ১৭ই জুলাই মুজাহিদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। একই বছর ১১ই আগস্ট ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন তিনি। গত ২৯শে এপ্রিল থেকে আপিলের শুনানি শুরু হয়। মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটির প্রমাণ পান ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ১, ৩, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি। প্রমাণিত ১ নম্বর অভিযোগকে ৬-এর সঙ্গে সংযুক্ত করে এ দুটি অভিযোগে সমন্বিতভাবে ও ৭ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদকে মৃত্যুদন্ড, ৫ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ৫ বছরের কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়।
বুধবার জামায়াতের ২৪ ঘন্টার হরতাল
মৃত্যুদন্ড প্রদানের রায় বহাল রাখার প্রতিবাদে ২৪ ঘন্টার হরতাল ডেকেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বুধবার সকাল ৬টা থেকে ১৮ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী এ হরতাল কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার দলটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
বিবৃতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ বলেন, সরকার জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করে। সরকারী ষড়যন্ত্রের শিকার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। তার আপোষহীন নেতৃত্বে দিশেহারা হয়ে সরকার তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তথাকথিত মানবতা বিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করে।
মুজাহিদ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল জনাব মুজাহিদকে ১, ৬, এবং ৭ নং অভিযোগে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত  করেন। জনাব মুজাহিদ এ রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে আপীল করেন। মাননীয় আপীল বিভাগ জনাব মুজাহিদের আপীল খারিজ করে ৬ নং অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল প্রদত্ত মৃত্যুদ- বহাল রাখেন। এ রায়ে জনাব মুজাহিদ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দেশের জনগণ এ রায়ে হতাশ হয়েছে।
মামলা ষড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, সরকারের দায়ের করা মামলাটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত মুজাহিদের বিরুদ্ধে ফরিদপুর জেলাধীন কোন থানায় বা বাংলাদেশের অন্য কোন থানায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সংঘটিত কোন অপরাধের জন্য কোন মামলা হয়েছে, এমন কোন তথ্য তিনি তার তদন্তে পাননি। মামলার আইও এটাও স্বীকার করেছেন যে, জনাব মুজাহিদ আল বদর, শান্তি কমিটি, রাজাকার বা আল শামস বা এই ধরনের কোন সহযোগী বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, এমন কোন তথ্য তিনি তার তদন্তকালে পাননি। এর পরও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে সরকারের সাজানো মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হলো। তিনি জুলুমের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, মুজাহিদ এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ দায়ের করবেন। রিভিউ আবেদনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে মুজাহিদ খালাস পাবেন বলে আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি।
বুদ্ধিজীবি হত্যা প্রসঙ্গে মকবুল আহমদ বলেন, ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের বিচারের কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। স্বাধীনতা উত্তর আওয়ামী সরকারের আমলে বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রমাণসহ জহির রায়হানকে অপহরণ করা হয়। তার রহস্য আওয়ামী সরকার উন্মোচন করেনি।
তিনি বলেন, অত্যন্ত সুকৌশলে তদানীন্তন আওয়ামী সরকার বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-টি এড়িয়ে গিয়েছে। সেই বুদ্ধিজীবী হত্যার মিথ্যা অভিযোগ জনাব মুজাহিদের ঘাড়ে চাপিয়ে সরকার তার অতীতের কূটকৌশল বাস্তবায়ন করলো মাত্র। ভবিষ্যত প্রজন্ম ও সত্যানুসন্ধিৎসু ইতিহাস গবেষকদের নিকট বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল রহস্য অবশ্যই উন্মোচিত হবে ইনশাআল্লাহ্‌।
এদিকে, রায়ের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মগবাজার চৌরাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এসময় জামায়াত ঢাকা মহানগরীর মজলিশে শুরা সদস্য আ.জ.ম কামাল উদ্দিন ও ড. আহসান হাবিবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন – রমনা থানা জামায়াতের সেক্রেটারী জিল্লুর রহমান, বনানী থানা সেক্রেটারী সাইফুল ইসলাম,জামায়াত নেতা ইউসুফ আলী, আতাউর রহমান সরকার, শিবির নেতা জামিল মাহমুদ,আশ্রাফ উদ্দিন প্রমুখ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button