২৬ দিক থেকে আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে চীন

Chainaমাইকেল স্নাইডার ‘দি ইকোনমিক কলাপস’ ব্লগের প্রকাশক। তিনি ‘দি বিগিনিং অব দ্য ইন্ড’ বইয়েরও লেখক।দীর্ঘদিন ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাটর্নি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার লেখায় উঠে এসেছে ২৬ দিক থেকে আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে আছে চীন।
আইএমএফ আমেরিকা ও চীনের জিডিপির বিষয়টি অর্থনৈতিক ক্ষমতার বদলের ভিত্তি বলে পরিমাপ করেছে। সার্বিক ক্ষমতার পালাবদলের ভিত্তিতে চীন এখন আমেরিকাকে ছাড়িয়ে গেছে। দেশটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। যখন আমি বিষয়টা প্রথম জানতে পারলাম, আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।আমি দেখছি, চীনের অর্থনীতি এখন গর্জন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি, সবকিছুর উপরে আমেরিকানদের উচিত কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাওয়া।
দুভার্গ্যজনক হলেও সত্য যে, মানুষ যা চিন্তা করছে তার চেয়ে অধিক দ্রুত সব কিছু বদলে যাচ্ছে। আমেরিকাকে ২৬ টি দিক দিয়ে চীন ছাড়িয়ে গেছে। আর এগুলো হলো:
১. আমেরিকার চেয়ে চীন এখন বিশ্বে বেশি পরিমাণ বাণিজ্য বিস্তার করেছে।
২. আমেরিকার চেয়ে চীনের অধিক বাণিজ্যিক ঋণ সুবিধা রয়েছে।
৩. ২০১৩ সালে আমেরিকা ১২১ বিলিয়ন ডলারের পুরনো জিনিসপত্র চীনের কাছে বিক্রি করেছে। কিন্তু চীন আমাদের কাছে বিক্রি করেছে ৪৪০ বিলিয়ন ডলারের জিনিসপত্র। এটা এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের বাণিজ্যের বিশাল ঘাটতি। যেটি বিশ্বের জন্য রীতিমতো ইতিহাস।
৪. চীন এখন পুরো বিশ্বের মধ্যে প্রধান পণ্য উৎপাদনকারী দেশ।
৫. ১৯৯৮ সালে বিশ্বের প্রযুক্তি বাজারে আমেরিকা ২৫ শতাংশ রফতানি করতো, আর চীন রফতানি করতো ১০ শতাংশ। কিন্তু আজ চীনের এই রফতানি আমেরিকার চেয়েও দুই গুণ বেশি হয়ে গেছে।
৬. গত ১০০ বছর ধরে ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রধান শক্তি ছিলো আমেরিকা। কিন্তু চীন এ জায়গাটা দখল করে ১ নম্বর অবস্থানে চলে এসেছে।
৭. পুরো বিশ্বের নতুন গাড়ির সবচেয়ে বড় বাজার এখন চীনের।
৮. বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চীনের।
৯. চীন বিশ্বের এক নম্বর স্বর্ণ উৎপাদনকারী দেশ।
১০. বিশ্বের এক নম্বর স্বর্ণ আমদানিকারক দেশ চীন।
১১. ১৫ বছর আগে বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশে চীনের অবস্থান ছিলো বিশ্বে ১৪ তম। কিন্তু এখন আমেরিকাকেও ছাড়িয়ে যাবে চীন এবং খুব কম সময়েই দেশটি এক নম্বর অবস্থানে চলে আসবে।
১২. আশা করা যাচ্ছে চীন খুব দ্রুতই পেটেন্ট ফিলিংয়ে বিশ্ব নেতৃত্বে চলে আসবে।
১৩. চীন প্রতি বছরই আমেরিকার চেয়ে বেশি লোকদের প্রকৌশলে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করছে।
১৪. চীনের রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম ট্রেন এবং সবচেয়ে দ্রুতগতির রেল নেটওয়ার্ক।
১৫. পুরো বিশ্বে যে পরিমাণ সিমেন্ট ব্যবহার হয়, চীনে ব্যবহার হয় তার চেয়েও বেশি।
১৬. আমেরিকার চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ মদ উৎপাদন করে চীন।
১৭. বিশ্বে কৃত্রিম ক্রিসমাস ট্রির ৮৫ শতাংশই চীনে তৈরি হয়ে থাকে।
১৮. বিশ্বের শূকরের মাংস উৎপাদনকারী ৪৩ টি দেশের চেয়েও বেশি শূকর রয়েছে চীনে।
১৯. বাতাস ও সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্বে এক নম্বরে রয়েছে চীন।
২০. আমেরিকায় যে পরিমাণ তুলা উৎপাদন হয়, তার দ্বিগুণেরও বেশি উৎপাদন হয় চীনে।
২১. আমেরিকায় যে পরিমাণ কয়লা উৎপাদন হয়, তার তিনগুণের বেশি উৎপাদন হয় চীনে।
২২. আমেরিকার চেয়ে ১১ গুণ বেশি স্টিল উৎপাদন হয়ে চীনে।
২৩. বিশ্বের দুর্লভ উপাদানগুলোর ৯০ ভাগই নিয়ন্ত্রণ করে চীন।
২৪. আমেরিকার সিনেটের এক তদন্তে দেখা যায়, আমেরিকার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে সরঞ্জামের মধ্যে ১ মিলিয়নেরও বেশি চাইনিজ নকল যন্ত্র রয়েছে।
২৫. লেখক ক্লাইড প্রেস্টোউয়িজ এর তথ্য মতে, আমেরিকায় চীনের রফতানির মধ্যে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ এক নম্বরে। আমেরিকান নিউজ ও ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট অনুসারে, আমেরিকা চীনে যা রফতানি করে তার মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে লোহার সরঞ্জাম ও মূল্যহীন বস্তু।
২৬. শিকাগো ইউনিভার্সিটির নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ রবার্ট ডব্লিউ ফগেল বলেছেন, ‘‘যদি বর্তমান ধারা চলতে থাকে তাহলে ২০৪০ সালের মধ্যে চীনের অর্থনীতি আমেরিকার তিন গুণের বেশি হয়ে যাবে।’’
চীনারা তাদের সম্পদ দিয়ে আমেরিকায় জমি কিনছে, ব্যবসা করছে। আরেকদিন হয়তো আমরা শুনবো নিউইয়র্ক সিটির ওয়াল্ডরফ এস্টোরিয়া হোটেল কিনে নিচ্ছে দেশটি। যেদিকেই আপনি থাকাবেন, দেখবেন চীনের প্রাধান্য আর আমেরিকার অবনতি। এটা যদি বাচ্চাদের কোনো খেলা হতো তবে তাদের মাফ করে শুধরে দেয়া যেতো। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনীতির মঞ্চে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। চীন আমেরিকার লেজে পা নাড়াচ্ছে, আমরা এটা জানি।
এক জরিপে দেখা গেছে চীনের ৭৫ ভাগ মানুষ মনে করে, তারা সঠিক লা্ইনেই রয়েছে। অপরদিকে আমেরিকানরা ততটা আশাবাদী নয়। এক জরিপে দেখা যায়, ২৮ শতাংশ আমেরিকান মনে করে যে, তারা ঠিক লাইনে রয়েছে।
আমি মনে করি দুটি জরিপই অনেক কিছু বলে দিচ্ছে। আমরা আমেরিকানরা কিছুটা সময় অবনতির দিকে এগিয়েছি। এখন আমাদের নেতাদের উচিত সমাধানের খোঁজে শিগগিরই বসে যাওয়া। না হলে আমরা সময়ের বাইরে চলে যাব।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button