এক নওমুসলিমের জীবনের গল্প

Amenaজাকারিয়া পলাশ: আমেনা বেগম (৩৫)। বাবা-মার দেয়া নাম ছিল কৃষ্ণা ব্যানর্জি। সনাতন ধর্মবলম্বী ব্রাহ্মন হিসেবেই বেড়ে উঠেছেন মানিকগঞ্জের এক পাড়াগাঁয়। ১৯৮৯ সালে তার বয়স ছিল ১১ বছর। তখন তার মৃত দাদীকে চিতায় পোঁড়ানোর দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে ঘর ছাড়েন। এক মুসলমান বান্ধবীর ঘরে উঠে গ্রহণ করেন ইসলাম। তখনও বুঝতেন না ইসলাম গ্রহণের আসল তাৎপর্য কী। অনেকটা না বুঝেই শুধুমাত্র নিজ ধর্মের সৎকার রীতির ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতেই ইসলামের দিকে ধাবিত হন তিনি। পৈত্রিক সম্পত্তি, আত্মীয়-স্বজন সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে আসেন। আলাপকালে বললেন, আর পেছনে ফিরে তাকাতে পারবো না। এরপর ওই বান্ধবীর পরিবারের সহায়তায় চলে যান ঢাকার কামরাঙ্গীরচর মহিলা মাদ্রাসায়। মাদ্রাসার হুজুরাইনদের পাশে থেকে নওমুসলিম আমেনা বেগম কুরআনের হাফেজ হন। হুজুরদের মধ্যস্থতায়ই বিয়ে হয় অপর এক মাদ্রাসার থেকে পাশ করা নোয়াখালি সন্দ্বীপের হাফেজ বদিউল আলমের সঙ্গে। ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে সুখের সংসার ছিল তাদের। সংসারে অভাব ছিল শুধুই সন্তানের। নিসঃন্তান এই দম্পতির সুখের সংসারে হঠাৎ ভাঙন আসে স্বামীর মৃত্যুতে। ২০০৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় স্বামী বদিউল আলমের। বিধবা নওমুসলিম আবারও একা হয়ে পড়েন। কোথায় থাকবেন, কার কাছে যাবেন এ নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। এমতাবস্থায় ঢাকা বাইতুল মোকাররম এলাকায় তার সঙ্গে পরিচয় হয় গুলশানের অভিযাত এলাকার এক ধনাঢ্য বৃদ্ধার সঙ্গে। তার বাসার পারিচারিকা হিসেবে নিযুক্ত হন আমেনা বেগম। প্রায় সাড়ে তিন বছর ওই বৃদ্ধাকে আপন মায়ের মতোন সেবা শশ্রুষা করেন। দেড় বছর হলো তিনিও ইনতেকাল করেন। বৃদ্ধার ইনতেকালের পর তার সন্তানেরা এই স্বজনহারা হাফেজা নওমুসলিমের আর খোঁজ নেননি।
অবলম্বনহীন এই পর্দানশীন হাফেজা নারী তাবলীগ জামায়াতের এক মুরব্বির সহায়তায় চলে যান সাভারের রাজ ফুলবাড়িয়া এলাকায়। সেখানে এক বাড়ির শিশুদের কুরআন শেখানো ও গৃহস্থলির কাজের বিনিময় আশ্রয় মেলে তার। সেখানেই আছেন তিনি। প্রায় দুই যুগ আগে সেচ্ছায় ধর্মান্তরিত মুসলিম আমেনা বেগম বলেন, কারও সঙ্গে প্রেম করে মুসলমান হইনি। আল্লাহই আমাকে মুসলমান বানিয়েছেন। আমার মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ছেড়ে এসেছি আমি। ২৪ বছর ধরে মুসলমান সমাজেই কেটেছে আমার জীবন। এখন এটাই আমরা সব। ২০১১ সালে নওমুসলিমদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রকল্প থেকে সোয়া দুই শতক জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার নামে। সাভারের রাজ ফুলবাড়িয়ার পানপাড়া এলাকায় ওই জমিনটুকু অনাবাদি ভাবে পড়ে আছে। অর্থাভাবে সেখানে একখানা ঘর বানিয়ে বসবাসের ব্যবস্থা করতে পারেননি। আমেনা বলেন, বাসায় বাসায় প্রাইভেট পড়িয়ে আমি জীবীকা নির্বাহ করছি। অন্যের বাসায় থাকি। অনাত্মীয় কারও বাসায় থেকে পর্দা পালন করা কষ্টকর হচ্ছে। অথচ মুসলমান হওয়ার পর থেকে আমি কখনও পর্দা লঙ্ঘন করিনি। তার একটি ছবি তুলতে চাইলে তিনি বললেন আপনার সামনে মুখ খুলতে পারবো না। ছবি তোলাকে গোনাহের কাজ বলেই বিশ্বাস করেন তিনি। অপরের অধীনে মানবেতর জীবন থেকে মুক্ত হয়ে আত্মনিভরশীল হতে চান তিনি। বলেন, একটু সহযোগিতা পেলে আমি ওই জমিতে ছোট একটি ঘর তুলতে চাই। সেখানেই গড়ে তুলতে চান আপন ভুবন। থাকতে চান নিরাপদে, নিজ আবাসে। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে তার হিসাব নম্বরটি তিনি জানিয়েছেন। একাউন্ট নম্বর: ০৮১১১২০০২১০৮৫ (কেরানীগঞ্জ শাখায়)। এ ব্যাপারে কারওয়ান বাজার জামেয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়ার প্রধান মুফতি হাফেজ মাওলানা খাইরুল্লাহ বলেন, নওমুসলিমকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা সকল মুসলমানদের দায়িত্ব। যাকাতেও তাদের অধিকার নির্ধারিত রয়েছে ইসলামী শরিয়াতে। সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা সমমূল্যের অব্যবহার্য গচ্ছিত সম্পদ যদি তার না থাকে তাহলে যাকাতের খাত থেকে তাকে সকলে মিলে সহায়তা করা উচিত। যাকাত ছাড়াও তাকে সহযোগিতা করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button