ব্রিটিশ চেম্বারস অব কমার্সের প্রতিবেদন

২০১৯ সালের শেষেও স্থবির ছিল ব্রিটেনের অর্থনীতি

স্থবিরতার মধ্য দিয়েই ২০১৯ সাল শেষ করেছে ব্রিটেনের অর্থনীতি। ব্রিটিশ চেম্বারস অব কমার্সের (বিসিসি) সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুসারে, দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তার সম্ভাবনায় সৃষ্ট চাপ, বড় হারে ব্যবসায়িক ব্যয় বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথগতির কারণে গত বছরের শেষটা মোটেই ভালো কাটেনি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির। নভেম্বরে ব্রিটেনের বিভিন্ন স্থানের সাড়ে ছয় হাজার কোম্পানি বিসিসি পরিচালিত জরিপে অংশ নিয়েছিল। জরিপ ফলাফলে গত দশক শেষে ব্রিটেনের অর্থনীতির হতাশাজনক চিত্রই উঠে এসেছে।

ব্রিটেনের অর্থনীতির প্রায় ৮০ শতাংশ সেবা খাত। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে খাতটির অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। কারখানা রফতানি ও স্থানীয় আদেশ নির্দেশকগুলো এক দশকের মধ্যে প্রথমবার পরপর দুই মাস ঋণাত্মকে ছিল এবং ম্যানুফ্যাকচারে বিনিয়োগকারীদের পরিকল্পনা আট বছরের নিম্নে নেমে আসে। ব্যবসা পরিস্থিতি বোঝার অন্যতম নির্দেশ অর্থপ্রবাহ আট বছরের সর্বনিম্ন অবস্থা থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তবে ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবা খাত এখনো দুর্বল রয়েছে।

বিসিসির অর্থনীতি বিভাগের প্রধান সুরেন থিরু বলেন, ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকজুড়ে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে স্থবিরতা বজায় ছিল। তিনি বলেন, চতুর্থ প্রান্তিকে সেবা খাতে বড় ধরনের শ্লথগতি দেখা গেছে। এছাড়া অন্যান্য প্রধান খাতের অবস্থাও মোটেও ভালো ছিল না। স্থানীয় চাহিদা কমায় এবং ব্যবসায়িক ব্যয় বাড়ায় স্থবিরতা আরো জেঁকে বসেছিল।

সুরেন থিরু আরো বলেন, কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি ছাড়া ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের নির্দেশকগুলো খুবই দুর্বল ছিল। সংশয়ে কম্পমান সেবা খাতের সঙ্গে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের দুর্বল কার্যক্রম ২০১৯ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বিসিসি বলছে, ২০১৯ সালের শেষ তিন মাসে ব্রিটেনের প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ, তৃতীয় প্রান্তিকে যা ছিল শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড মনে করছে, চতুর্থ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। এ সময়টায় দেশটিতে খুচরা বিক্রিতে বড় পতন দেখা গিয়েছিল, সাধারণ নির্বাচন ও ব্রেক্সিট সংশ্লিষ্ট অনিশ্চয়তার কারণে অনেক কোম্পানি বিনিয়োগ পরিকল্পনা স্থগিত রেখেছিল।

বিসিসি অনুমান করছে, ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি করবে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। সংস্থাটি পূর্বাভাস দিচ্ছে ২০২০ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ১ শতাংশ। আর এমনটা হলে তা হবে ২০০৯ সালের পর সবচেয়ে দুর্বল অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স।

বিসিসি বলছে, ইতিহাসের গড় থেকেও বেশ নিচে রয়েছে ব্রিটেনের সেবা খাতের প্রধান নির্দেশকগুলো রয়েছে। যেসব কোম্পানির স্থানীয় বিক্রি তৃতীয় প্রান্তিকে ১৫ শতাংশ বেড়েছিল, তাদের বিক্রি অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে কমে হয়েছে ১১ শতাংশ। আর যারা বলেছিল তৃতীয় প্রান্তিকে স্থানীয় বিক্রয় আদেশ বেড়েছিল ৯ শতাংশ, কিন্তু চতুর্থ প্রান্তিকে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ শতাংশে। উভয়ের অবস্থান ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর সর্বনিম্নে নেমেছে।

অল্প কিছু কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের অর্থপ্রবাহ বেড়েছে এবং তৃতীয় প্রান্তিকে যেসব কোম্পানি বলেছিল তারা বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, তাদের সংখ্যাও কমেছে।

বিসিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাডাম মার্শাল নিজেদের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অ্যাডাম মার্শাল বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে গেলে ব্যবসায়িক আস্থা ফেরাতে এবং অর্থনীতির স্থবিরতা কাটাতে নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে। এ কারণগুলো যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির বড় ক্ষতি করছে। সরকার যদি ব্যবসায়িক ব্যয় কমাতে, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পগুলো সম্পন্নে গতি আনতে এবং প্রশিক্ষণ দিতে ব্যবসায়ীদের সাহায্য করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে দেখা যাবে তারাও বড় অংকে বিনিয়োগ করছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button