এবারের ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে অনলাইনে রেকর্ড বিক্রি

বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে কেনাকাটার উৎসবের নাম ব্ল্যাক ফ্রাইডে। প্রতি বছরের মতো এবারও ব্ল্যাক ফ্রাইডে উপলক্ষে দোকান, মার্কেট, শপিং মল ও অনলাইনে কেনাবেচার সাইটগুলোতে প্রচুর ভিড় থাকলেও এবারের অনলাইনে বিক্রি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গড়েছে নতুন রেকর্ড। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পুরনো অভ্যাস ভেঙে তৈরি হচ্ছে নতুন অভ্যাস। যুক্তরাষ্ট্রের এবারের ব্ল্যাক ফ্রাইডের কেনাকাটায় এর প্রভাব সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা গেছে। এ মৌসুমে জমকালো দোকানপাট বা শপিংমলের চেয়ে দেশটির অনলাইন লেনদেন এ ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে রেকর্ড গড়েছে। দেশটিতে এবারের ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে ৭৪০ কোটি ডলার অনলাইন লেনদেন হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাডব অ্যানালিটিকস। ফোনসেট, কম্পিউটার বা ট্যাবলেটের মাধ্যমে এসব লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে গত বছর সাইবার মানডে তথা থ্যাংকসগিভিং ডের পরবর্তী সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইনে ৭৯০ কোটি ডলার কেনাকাটা হয়েছিল বলে জানিয়েছে অ্যাডব। অ্যাডব দেশটির শীর্ষ ১০০টি খুচরা অনলাইন প্রতিষ্ঠানের ৮০টি নিয়ে নিজেদের সমীক্ষা পরিচালনা করেছে।

এদিকে এবারের সাইবার মানডেতে তথা আজকে বাজারটিতে অনলাইন বিক্রি গত বছরের তুলনায় বেড়ে ৯৪০ কোটি ডলার হতে পারে বলে পূর্বাভাস করেছে অ্যাডব। অধিকাংশ ক্রেতা ফোনসেট ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইন কেনাকাটা সম্পন্ন করেন বলে জানিয়েছে অ্যাডব। ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে এবার ৩৯ শতাংশ অনলাইন বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে ফোনসেট ব্যবহার করে। অন্যদিকে একই দিনে একই ডিভাইস ব্যবহার করে অনলাইন ট্র্যাফিক বা অনলাইনে ক্রেতাসমাগম হয়েছে ৬১ শতাংশ।

এবারের ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে খেলনাসামগ্রীর মধ্যে ‘ফ্রোজেন টু’র চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। অন্য উপহারসামগ্রীর মধ্যে ভিডিও গেমস ও অ্যাপল ল্যাপটপের চাহিদা ছিল শীর্ষে। আগের তুলনায় ক্রেতারা অনলাইন কেনাকাটায় বেশি ঝোঁকায় ব্ল্যাক ফ্রাইডের আনন্দমুখর শপিংমলগুলোয় এবার ভিড় কমেছে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি থ্যাংকসগিভিং ডের একদিন আগে সিএনবিসিকে দেয়া সাক্ষাত্কারে এবারের ব্ল্যাক ফ্রাইডের বাজার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিতে যাচ্ছে বলে পূর্বাভাস করেছিলেন বিখ্যাত মার্কিন খুচরা সামগ্রী বিক্রেতা ‘টয়স আর আসে’র সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেরাল্ড স্টর্চ। তবে দোকানে কেনাকাটার চেয়ে অনলাইন লেনদেন বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ক্রেতাদের কেনাকাটার অভ্যাসে বড় পরিবর্তন এসেছে। ব্ল্যাক ফ্রাইডে উপলক্ষে খুচরা দোকানদাররা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ডিসকাউন্টে বিক্রি শুরু করেন। অন্যদিকে অনলাইন বিক্রেতারা তা শুরু করেন বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে। এটি উভয় মাধ্যমের কেনাকাটায় বড় তফাত তৈরি করতে পারে।

সদ্যসমাপ্ত ব্ল্যাক ফ্রাইডের কেনাকাটায় দোকানগুলোতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ক্রেতাসমাগম ২ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিটেইলনেক্সটের খসড়া পরিসংখ্যানে। প্রতিষ্ঠানটি ১০ হাজার স্থানের ব্ল্যাক ফ্রাইডের দোকানের কেনাকাটা পর্যবেক্ষণ করেছে। ছোট ও বড় শপিংমল বা খুচরা পোশাকের দোকানগুলোয় ক্রেতাসমাগম কমায় গত বছরের একই মৌসুমের তুলনায় এবার বিক্রি ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।

উল্লেখ্য, অনলাইন ও অ্যানালগ কেনাকাটা সবসময় যে সম্পূর্ণ আলাদা, তা কিন্তু নয়। দেখা গেছে অনেক ক্রেতা অনলাইনে লেনদেন করে সুবিধামতো সময়ে, নিকটস্থ দোকানে গিয়ে পণ্যটি সংগ্রহ করেন। এর সুবিধা হলো, সীমিত সময়ের জন্য কোনো অফার বা ছাড় থাকলে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় বসে ক্রেতারা তার সুযোগ নিতে পারেন। এবারের ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে অনলাইনে লেনদেন করে দোকানে গিয়ে পণ্য সংগ্রহের হার গত বছরের তুলনায় ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে অ্যাডবের প্রতিবেদনে।

এবার ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে অনলাইন কেনাকাটা গত বছরের তুলনায় ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৭৪০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। তবে এটি ৭৬০ কোটি ডলার হতে পারে বলে পূর্বাভাস করেছিল অ্যাডব। অন্যদিকে এবারের থ্যাংকসগিভিং ডের বিক্রি গত বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৪২০ কোটি ডলার হতে পারে বলে পূর্বাভাস করেছিল একই সংস্থা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button