হজ হোক সেলফিমুক্ত

আহনাফ আবদুল কাদির: হজ একটি আধ্যাত্মিক সফরের নাম। হৃদয় যাদের মহান রবের আহ্বানে সাড়া দেয় তাদেরই কেবল নসিব হয় হজের মতো মর্যাদাপূর্ণ ইবাদতের। তার চেয়েও খোশ নসিব তাদের, যাদের হজ হয় হাদিসে বর্ণিত ‘হজ্জে মাবরুর’। হাদিসের ভাষায়, হজ্জে মাবরুর বা আল্লাহর কাছে গৃহিত হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয় (মুত্তাফাকুন আলাইহি)।

তাইতো হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে হাজিরা ছুটে আসেন পবিত্র মক্কায়। মহান প্রভুর প্রতি ভক্তি, ভালোবাসা আর প্রেম উথলে উঠে হবু হাজিদের হৃদয় আঙ্গিনায়। আল্লাহর পথের মেহমান ও যাত্রীদের হৃদয়ের এলবামে একে একে ভেসে উঠে পবিত্র নগরী বায়তুল্লাহ, মিনা, মুজদালিফা, সাফা-মারওয়া, মাকামে ইব্রাহিম আর আরাফা ময়দানের নয়ন জুড়ানো দৃশ্যাবলি। কাবার চত্বরে আসতেই নিজেকে আবিষ্কার করেন পরম সৌভাগ্যবান হিসেবে।

সত্যিই পবিত্র কোরআন ও হাদিসে ঘোষিত পরম সৌভাগ্য সেইসব হাজিদের জন্যই যারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করতে এসেছেন। যাদের হৃদয়ে আছে আল্লাহর ভয় তারা কখনো আল্লাহর দেয়া নিয়ামতের কথা ভুলে যায় না। ভুলে যায় না স্রষ্টার দেয়া পথ-নির্দেশনার কথা। তাই কাবার চত্বরে হাজির হতেই তাদের হৃদয়ে লালন করা কাবার ছবি আরও বেশি জীবন্ত হয়ে উঠে। জীবন্ত হয়ে উঠে হৃদয়ে লালিত স্বপ্ন, বেড়ে যায় ঈমানের জ্যোতি আর আমলের গতি।

বায়তুল্লাহর প্রতিটি পদে পদে, প্রতিটি পদক্ষেপে তারা খুঁজে ফেরেন মহান রবের সন্তুষ্টি। সেই সন্তুষ্টি পেতে চাইলে হজসহ যাবতীয় ইবাদত হতে হবে লৌকিকতামুক্ত, শুধু আল্লাহর জন্য। পবিত্র কোরআনের ভাষায়, তাদেরকে এ ছাড়া আর কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। আর এটাই সঠিক ধর্ম’ (সূরা বায়্যিনাহ: ০৫)। তবুও জেনে কিংবা না জেনে হজের সফরে গিয়েও আমরা মক্কার স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন জায়গার ছবি কিংবা সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।

পবিত্র মক্কাতে অবস্থানকালীন সময়েই টুইটার, ফেসবুক, ইনস্ট্রাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হজের সেই ছবি আপলোড দিয়ে কুড়াতে চাই লাইক আর কমেন্টের প্রশংসা। যাতে রবের সন্তুষ্টির চেয়ে মানুষকে দেখানোর ইচ্ছাই প্রবল হয়ে উঠে। অথচ আমাদের যাবতীয় ইবাদত শুধু রবের সন্তুষ্টির জন্যই হওয়ার কথা। রিয়া বা লৌকিকতাপূর্ণ এ সব কাজ আমাদের ইবাদতে বিঘ্ন ঘটায়, আন্তরিকতাকে নষ্ট করে। তাই হাদিসে এমন কাজকে শিরকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদের মধ্য থেকে যা আশঙ্কা করি তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে শিরকে আসগর বা ছোট শিরক। রাসূল (সা.)-এর সাথীরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল শিরকে আসগর কী? তিনি উত্তর দিলেন, রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত। আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিনে মানুষের আমলের প্রতিদান দিবেন। তখন তিনি লৌকিকতা প্রদর্শনকারীদের বলবেন, তোমরা তাদের নিকট যাও যাদের দেখানোর জন্য দুনিয়াতে তোমরা আমল করেছিলে। দেখ, তাদের কাছে কোনো প্রতিদান পাও কিনা! (মুসনাদে আহমদ: ২৩৬৩০. সহিহ তারগিব: ২৯)। তাই হবু হাজিদের বলব, মোবাইল ফোনে নয়; আসুন, হজের স্মৃতিময় ছবি ধারণ করি হৃদয়ের মণিকোঠায়। আর সেই সব ছবি লালন করে নববী আদর্শে আদর্শিত হই। খোদার প্রেমে প্রজ্জ্বলিত করি নিজেকে, নিজের পরিবার ও সমাজকে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button