চার ট্রিলিয়ন ডলারের বাজেট প্রস্তাব ওবামার

Obamaপ্রতিরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ খাতে ৭ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি করে নতুন বাজেট প্রস্তাব করেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। আলোচনা ও অনুমোদনের জন্য তার এই বাজেট কংগ্রেসে পাঠানো হয়েছে। বাজেটে ২০১৬ সালের জন্য আমেরিকান ধনীদের কর বাড়নো হয়েছে। পক্ষান্তরে মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে কর শিথিল করছে ওবামা প্রশাসন। গত সোমবার সকালে কংগ্রেসে ওঠে এই বিল। এসময় রিপাবলিকান নেতাদের উদ্দেশ্যে ওবামা বলেন, মধ্যবিত্তের জন্য বরাদ্দ অর্থের বিনিময়ে জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করতে চায় না তার সরকার।
প্রস্তাবিত হওয়ার আগেই ওবামার নতুন বাজেট নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৫ সালের নতুন খসড়া বাজেটে ৭ হাজার ৪শ’ কোটি ডলার অতিরিক্ত ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রার কারণে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। আগের ঘাটতি বাজেট ও আগাম অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে ওবামার খসড়া বাজেট যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট কন্ট্রোল অ্যাক্ট ২০১১-এর নির্ধারিত ব্যয়সীমা অতিক্রম করে গেছে। অতিরিক্ত কর আদায় ও বড় ধরনের বাজেট ঘাটতি থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে খসড়া বাজেটের অনুমোদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কংগ্রেস ২০২১ সাল নাগাদ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের কৃচ্ছ্র সাধনের লক্ষ্যে ২০১১ সালে বাজেট কন্ট্রোল অ্যাক্ট আইনটি পাস করে।
সিনেট ফাইন্যান্স কমিটির প্রধান ইউটাহ্ এর রিপাবলিকান সিনেটর ওরিন জি হ্যাচ প্রেসিডেন্ট ওবামার কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, আমাদের ইতিহাসে তিনি স্বেচ্ছাচারী ও অর্থনৈতিক খাতে দায়িত্বহীন একজন রাষ্ট্রপ্রধান।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে আগামী সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ওই বাজেট প্রস্তাব পেশ করার কথা রয়েছে। বাজেটের খসড়ায় মূলধন বাড়ানো ও ব্যাংক করের প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। বাজেট পরিকল্পনায় ২০১৬ সালের থেকে ৭ শতাংশ বেশি বিবেচনামূলক ব্যায় রয়েছে যাতে ৫৩ হাজার কোটি ডলার অসামরিক খাতে জন্য নির্ধারিত যা ২০১১ সালের বাজেট আইন অনুযায়ী ৩ হাজার ৭ শ’ কোটি ডলার বেশি এবং সামরিক খাতের জন্য ৫৬ হাজার ১শ’ কোটি ডলার নির্ধারিত হয়েছে যা বাজেট আইনে ৩ হাজার ৮শ’ কোটি ডলার বেশি।
বর্তমান কংগ্রেসের উচ্চ ও নি¤œ দু’টি পর্ষদই  রিপাবলিকানদের দখলে থাকায় খসড়া বাজেট নিয়ে হায়াইট হাউস ও রিপবলিকানদের মধ্যে গ্রহণযোগ্য সমঝোতায় আসা কঠিন হয়ে পড়েছে। খসড়া বাজেটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধি করার পরিকল্পনার বিরোধিতা করে হ্যাচ আরো বলেছেন, মার্কিনিরা অতি সামান্য কর দেয় বলে ঋণগ্রস্ত নয়, বরঞ্চ সরকার অতিরিক্ত বেশি ব্যয় করে বলেই তারা ঋণগ্রস্ত।
তবে রিপাবলিকানদের অনেকেই ওবামার বাজেটটিকে সমর্থন দিয়েছেন। এতে করে রিপাবলিকানদের নিজেদের মধ্যেই মতবিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। এই খসড়াটি শুধু ওয়াশিংটনে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের প্রথাগত বার্ষিক বাকযুদ্ধের শুরু করেনি, সেইসাথে এটি কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা, দলাদলি এবং ক্যপিটল হিল ও হোয়াইট হাউসের মধ্যকার বিবর্ণ সম্পর্কের বিষয়টিও স্পষ্ট করে তুলেছে।
ওবামার বাজেটটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবিত্তদের সার্বিক অবস্থার উন্নয়নে ডেমোক্র্যাটদের লক্ষ্যকে সফল করার একটি প্রয়াস হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। কর বৃদ্ধির মধ্যদিয়ে মধ্যবিত্তদের জন্য বিনামূল্যে কমিউনিটি কলেজের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম, অবকাঠামো উন্নয়ন, বড় বড় ব্যাংকগুলো যাদের কাছে টাকা পায় তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া ও কর আদায়ের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধি করা বাজেটর আওতায় রাখা হয়েছে।
হেয়াইট হাউসের মুখপাত্র জশ আর্নেস্ট বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা তার পূর্বসূরীদের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতহাসের সবথেকে বাজে রকম একটি অর্থনৈতিক সংকট লাভ করেছিলেন। কিন্তু তার গৃহীত পদক্ষেপের কারণে আমাদের অর্থনীতি আবার ঘুরে দাড়িয়েছে।
ওবামা ইতমধ্যেই ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয়দলের প্রতি বাজেটে সম্মতি দিতে আহ্বান করেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্পমেয়াদের জন্য বাজেটটি বিবেচনা করা গেলেও দীর্ঘমেয়াদের অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে এটি আরো বড় ধরণের ঘাটতি ও চড়াসুদ গোনার কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button