বিশ্বসেরা পারফিউম উৎপাদনকারী কাজী মাহতাব

আশরাফুজ্জামান মণ্ডল: আল হারমাইন পারফিউমস গ্রুপ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইভিত্তিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় সুগন্ধি উৎপাদন এবং বিপণনকারী কোম্পানি। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কোম্পানিটির মালিক একজন বাংলাদেশি। বিষয়টি ভাবতে যেমন বিষ্ময়কর ঠিক তেমনি গর্বেরও বটে। আর তাই আল হারমাইন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা কাজী মাহতাবুর রহমান নাসির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের কাছে একজন রোল মডেল ও সফলতার প্রতীক বিবেচিত হয়ে আসছেন বছরের পর বছর। পাশাপাশি সিলেটে জন্ম নেয়া এই মানুষটি সম্পর্কে জানতে বাংলাদেশিসহ প্রবাসীদের আগ্রহের যেন কমতি নেই। এই আগ্রহ আরও বেড়ে গেছে ২০১৬ সালে তিনি যখন সিলেটের মেজরটিলা এলাকায় প্রায় পাঁচ শত কোটি টাকা খরচ করে একটি রাজকীয় বাড়ি নির্মাণ করেন। গণমাধ্যমে খবরটি প্রচার হওয়ার সাথে সাথে মাহতাবুর রহমান পেয়ে যান কীর্তিমান নবাব, সুলতানদের মর্যাদা।

ইতোমধ্যে কাজী নাসিরের এই বাড়িটি দেশের সবচেয়ে বড় এবং বিলাশবহুল বাড়ি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তার বাড়িটি সম্পর্কে জানতে সাধারণ অসাধারণ কারওরি কৌতুহলের শেষ নেই। আর তাই সৌন্দর্য্যের অপার লীলাভূমি ও ৩৬০ আউলিয়ার দেশ সিলেট ভ্রমণকারী পর্যটকরা অন্তত একবার চেষ্টা করেন কাজী মাহতাবুর রহমানের বাদশাহ নামদার কীর্তি পরিভ্রমণের। কাজী ক্যাসেল নামের এ বাড়িটি সম্পর্কে যেমন মানুষের আগ্রহের কমতি নেই তেমনি কমতি নেই মাহতাবুর রহমানের আল হারমাইন গ্রুপ কিভাবে সফলতার শীর্ষ সিঁড়িতে পৌঁছালো সে বিষয়ে জানতে। জানা গেছে, আল্ হারামাইন পারফিউমস্ গ্রুপ অব কোম্পানির সুগন্ধি এখন বিশ্বের ৬৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে ১০০টি নিজস্ব শোরুম রয়েছে আল্ হারামাইনের। বাংলাদেশেও খুলেছেন তিনটি শোরুম।

যেভাবে শুরু: সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামের এই উদ্যোক্তার ব্যবসায়ীক জীবন শুরু বাবা মওলানা কাজী আবদুল হকের হাত ধরে। জানা যায়, তাদের বাড়ির আশেপাশের এলাকায় প্রচুর পরিমাণে আগর কাঠ হত। এই আগর কাঠ থেকে অনেক সুন্দর আতর তৈরী হতো। কিন্তু বাংলাদেশে আগর কাঠের বাজার ছিল না। তবে ভারতসহ আশপাশের দেশগুলোতে আগর কাঠের বাজার ছিল। ১৯৫৬ সালে মাওলানা কাজী আবদুল হক প্রথম সৌদি আরবে যান হজ করতে, তখন তিনি সঙ্গে করে বেশ কিছু আগর কাঠ নিয়ে যান। সৌদি আরবের বাংলাদেশিদের কাছে আগরের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় আবদুল হক ১৯৭০ সালে তিনি পবিত্র মক্কা নগরীতে সুগন্ধির ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ১৯৭৫ সালে প্রথম বাবার সাথে সৌদি আরবে যান মাহতাবুর রহমান। তখন থেকেই বাবার ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন তিনি।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মাহতাবুর রহমানকে। খুবই অল্প সময়ে সুগন্ধির ব্যবসায় দক্ষতা অর্জন করেন তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে (দুবাই) তিনি প্রথম শোরুম খোলেন ১৯৮১ সালে। পরবর্তীতে ব্যবসা পরিচালনার সুবিধার্থে দুবাইয়ে ১১ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর সুসজ্জিত প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন। ১৬ হাজার ২১৫ বর্গমিটারের জায়গার ওপর কারখানা স্থাপন করেন। কারখানাটিতে এখন প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। যাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি ও ভারতীয়। পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যের সবদেশে এই ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন মাহতাবুর রহমান।

আর বর্তমানে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে মাহতাবুর রহমান নাসিরের আল্ হারামাইন পারফিউমস্। নারী-পুরুষের রুচি ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে ভিন্ন ভিন্ন ঘ্রাণের সুগন্ধি প্রস্তুত করে বিশ্ব জয় করেছে বাংলাদেশের এই উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বাজারে বেশ সুনামের সঙ্গে অভিজাত ব্র্যান্ডের আতর বাজারজাত করছে, যা সেখানকার ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও উচ্চ শ্রেণির ক্রেতাদের শৌখিন জীবনযাপনের অত্যাবশ্যকীয় প্রসাধনীতে পরিণত হয়েছে। মন মাতানো ঘ্রাণ ও বাহারি মোড়কে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছে মোহনীয় এই সুগন্ধি।

এই সুগন্ধি বিক্রি করেই আল্ হারামাইন পারফিউমস্ গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান আজ প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে সম্পদশালী ব্যক্তি। পরপর চারবার বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বা সিআইপি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ভূষিত হয়েছেন তিনি। সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এনে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গত তিনবার রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। গত বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩ হাজার ৬০০ কনটেইনার পণ্য রপ্তানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আল হারামাইন গ্রুপ ছাড়াও কাজী মাহতাবুর রহমান প্রবাসীদের কল্যাণে এনআরবি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button