ভাট্টি বনাম নাসরিন: দুই মিথ্যাচারিণী ও এক চরিত্রহীন?

তসলিমা নাসরিন ও মাসুদা ভাট্টি প্রায় অভিন্ন প্রকারের নারী। তারা ভালো কি মন্দ তা বলা আমার এখতিয়ার নয়। কিন্তু বলতে পারি, ওরা উভয় কতিপয় নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রথা-বিরোধী লেখিকা।

আজ ‘বাংলাদেশে প্রতিদিন’ পত্রিকায় মাসুদা ভাট্টি সম্পর্কে তসলিমা নাসরিনের একটি লেখা পড়লাম, যেখানে তিনি তাকে চরিত্রহীন বলে দাবী করেছেন, যদিও বলেছেন এই চরিত্রহীনতার সাথে যার-তার সাথে যৌনসঙ্গমের কোনো সম্পর্ক নেই। চরিত্র বলতে তিনি যা বুঝিয়েছেন, তার মোদ্দা কথা হলো সততাঃ

“চরিত্রহীন বলতে আমি কোনওদিন এর ওর সঙ্গে শুয়ে বেড়ানো বুঝি না। চরিত্রহীন বলতে বুঝি, অতি অসৎ, অতি লোভী, অতি কৃতঘ্ন, অতি নিষ্ঠুর, অতি স্বার্থান্ধ, অতি ছোট লোক। মাসুদা ভাট্টি এসবের সবই।”

মজার বিষয় হলো, তসলিমা নাসরিন তার লেখায় নিজেই স্বীকার করেছেন যে, মাসুদা ভাট্টিকে ব্রিটেইনে রাজনৈতিক আশ্রয় পাইয়ে দিতে তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে মিথ্যা ভাষ্য দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। তার নিজের স্বীকারোক্তিঃ

“ব্রিটিশ সরকারের কাছে মাসুদা ভাট্টিকে না তাড়ানোর জন্য অনুরোধ করলাম। মহিলার জন্য মিথ্যে কথা আমাকে লিখতে হলো, লিখতে হলো, আমার পাবলিশার ছিল সে, দেশে ফিরলে তাকে মেরে ফেলবে মৌলবাদিরা। তখন আমার খুব নাম ডাক। আমার চিঠির কারণে মাসুদা ভাট্টির পলিটিক্যাল এসাইলাম হয়ে গেল, ব্রিটেনের নাগরিকত্বও হয়ে গেল।”

অর্থাৎ,নিজের স্বীকৃতি অনুসারে তসলিমা নাসরিন নিজে একজন মিথ্যাচারিনী! তো, ‘চরিত্র’ দিয়ে বিচার করতে গেলে আত্মস্বীকৃত মিথ্যাচারিনী তসলিমা নাসরিন নিজের চরিত্র বর্ণনা করবেন কীভাবে? তিনি ‘চরিত্র’ বিশেষ্যের পর কোন প্রত্যয় যোগ করে নিজের জন্যে উপযুক্ত বিশেষণ তৈরি করবেন – ‘বান’ না ‘হীন’?

তসলিমা নাসরিন হয়তো জানেন না, ব্রিটিশ সরকারের কাছে মিথ্যা ভাষ্য দিয়ে প্রাপ্ত রাজনৈতিক আশ্রয় যে-কোনো নাগরিকের আবেদনের ভিত্তিতে পুনর্বিবেচিত হতে পারে। সে-ক্ষেত্রে মিথ্যা বলার কারণে মাসুদা ভাট্টি যেমন নাগরিকত্ব হারাতে পারেন, তেমনি তসলিমা নাসরিনেরও ব্রিটেইনের ভিসা-প্রাপ্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। এমনকি, তিনি যে-দেশে আছেন, সেদেশেও তার ষ্টেইটাসকে প্রভাবিত করতে পারে।

মাসুদা ভাট্টি ও তসলিমা নাসরিন উভয়ই মিথ্যাচারিনী, যা তসলিমা নাসরিনের লেখাতে স্পষ্ট। কিন্তু তসলিমা নাসরিন এখন মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলছেন মাসুদা ভাট্টির মিথ্যাচারিতার জন্যে নয়; তিনি তাকে চরিত্রহীন বলছেন তার বিরুদ্ধাচরণ করার কারণে।

তসলিমা নাসরিনের লেখা থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই? আমরা এই শিক্ষা পাই যে, আমার পক্ষে থাকলে এক মিথ্যুকও হতে পারে চরিত্রবান, আর আমার বিরুদ্ধে গেলে সে চরিত্রহীন!

এটি যে শুধু তসলিমা নাসরিন প্রকারের নারীদের মূল্যবোধ তা নয়, এটি মোটামুটি আমাদের স্বজাতির অনেকেরই বৈশিষ্ট্য। বস্তুতঃ সমগ্র দেশটাই পরিচালিত হচ্ছে এই নীতিতে।

২১/১০/২০১৮
লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড

-Masud Rana এর টাইমলাইন থেকে

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button