মোটা অংকের সাহায্য; কওমী সনদের স্বীকৃতি

বুঝার ভুল; না বুঝার ভান

কওমী মাদ্রাসার কিছু নেকক্কার মুরব্বীগণ এতই সাদাসিদা চরিত্রের যে বর্তমান যুগের রাজনীতিবীদদের মত মানুষকে খুশি করার জন্য অন্তরে এক কথা আর মুখে আরেক কথা তাঁরা বলতে জানেন না। তাদের কথা বার্তা বুঝার জন্য; তাদের জ্ঞানগরিমার পরিমাপ করার জন্য; তাদের নেককারী; তাদের সরলতা; তাদের দীনদারী; তাদের এখলাস বুঝার জন্য তাদের পরিবেশে অনেক দিন থাকতে হয়।

আল্লামা আহমদ শফি হাফিজাহুল্লাহ সেই রকম একজন সাদাসিদা নেককার মানুষ। তিনি কওমী সনদের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর শুকরিয়া আদায় করে বলেছেন যে; অনেকেই বলছে আমি নাকি আওয়ামী লীগ হয়ে গেছি। এটা মিথ্যা কথা। আমি আওয়ামী লীগ বা বি এন পি কিছুই হয়নি। আওয়ামী লীগের মধ্যেও কিছু এমন মানুষ আছে যারা মাদ্রাসায় মোটা অংকের সাহায্য করে। তাদের জন্য আমরা দোয়া করি।

কথাগুলো শুনে অনেকেই বলছেন যে সনদের স্বীকৃতি পেয়ে আর মোটা অংকের টাকা পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলছেন। অথচ তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে তিনি আওয়ামী লীগ বা বি এন পি কিছুই হয়ে যান নি। তবুও সমালোচনা করছেন অনেকেই। অনেকেই তো সমালোচনার নামে গালাগালিও করছেন। এদের জবাবে আমার কিছুই বলার নাই। শুধু এতটুকু বলে রাখি যে; সমালোচনাও সুন্দর ভাষায় হওয়া উচিত।

মোটা অংকের সাহায্য কথাটা শুনতে খারাপ লাগছে না আমার। বরং ভালই লাগছে। কারণ দীনি মাদ্রাসায় মানুষ সাহায্য করছে এটা শুনে যেকোনো দীনদরদী মানুষেরই ভাল লাগার কথা। আমারও লাগছে। যাদের খারাপ লাগছে তারা ভাবছেন মোটা অংকের টাকা পেয়ে হুজুর লীগের পক্ষে বলছেন। আসলে এই যে আপনি যা বুঝতে পারছেন এখানেই হুজুরের অক্ষমতা। কেও খারাপ মতলবে মাদ্রাসায় দান করতে পারেন এই কথাটা আমি আর আপনি বুঝতে পারলেও হুজুর এটা বুঝতে পারেন না। কারণ হুজুর জানেন যে দান করা একটি ইবাদত।

আর মানুষ ইবাদত করে শুধুই আল্লাহর ওয়াস্তে। খারাপ কোনো মতলবে কেও দান করবে সেটা উনার কল্পনারও বাইরে। তাই তিনি মাদ্রাসার জন্য কেও দান করলে সেটা গ্রহণ করেন আবার দাতার জন্য দোয়াও করেন। দাতা আওয়ামী লীগ নাকি বি এন পি সেটা এখানে দেখার প্রয়োজন নাই। তবে হ্যাঁ। হুজুর যদি জানতে পারেন যে; দান করা হচ্ছে কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে; তাহলে আমি কসম করে বলতে পারি যে হুজুর এই দান গ্রহণ করবেন না। গ্রহণ না করার অনেক নজীরও আছে।

আর যেহেতু মাদ্রাসায় কোনো গোপন লেনদেন হয় না এবং খারাপ উদ্দেশ্যে তা ব্যবহারও হয় না তাই মোটা অংকের সাহায্যের কথা মাইকে প্রকাশ করা দোষের কিছু নয়। তবে আজকালকার রাজনীতিবীদদের মত গুছিয়ে এমন কথা বলা যাতে শ্রোতারা খুশি হয়; সেটা হুজুর হয়ত পারেন না। এটা হুজুরের জন্য দোষের নয় বরং বলা যায় এটা হুজুরের গুন। তিনি শ্রোতাদেরকে খুশি বা অখুশি করার জন্য কোনো কথা বলেন না। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

এ রকম আরো একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। বড় একটি মাদ্রাসার এক মুরব্বী হুজুর এক দিন মাদ্রাসার মসজিদে নামাজের পর দাঁড়িয়ে বললেন “ অমুক সওদাগর আপনাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন। সবাই তার জন্য দোয়া করুন। তিনি মাদ্রাসায় বেশাবেশি টাকা দিয়েছেন।

আসলে কিছু কিছু দীনদার আলেম মুরব্বীগণ এতই সাদাসিদা চরিত্রের যে; তাদের কথাবার্তা এ যুগের আধুনিক মানুষগুলোর কাছে অনেকটা বেমানান মনে হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে সেইসব বুজর্গ ব্যক্তিদের এখলাসের কারণেই মাদ্রাসাগুলো টিকে রয়েছে। আমরা তাদের কাছে দীন শিখতে পারছি। তাদের সম্পর্কে মন্তব্য করার সময় কোনো খারাপ শব্দ যেন ব্যবহার করা না হয় সে দিকে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।

কওমী সনদের স্বীকৃতির সাথে মাদ্রাসায় দান করার কোনো সম্পর্ক নাই। থাকতে পারে না। যদি থাকে; তাহলে সেটা দানও হবে না আবার স্বকীয়তা বজায় রাখার আইনও মানা হবে না।

কওমী সনদের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া উচিত হবে কিনা তা আমি জানি না। তবে দুইটি কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি।

প্রথমটি হলো; শুকরিয়া জানাতে গিয়ে জান কোরবান করে দেয়ার মত কোনো ঘোষণা দেয়ার কোনোই প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

আর দ্বিতীয়টি হলো সংবর্ধনা দেন বা না দেন; এই মুহূর্তে তার চেয়েও বেশি জরুরী হয়ে পড়েছে আল্লামা আহমদ শফি সাহেব হাফিজাহুল্লাহর ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগিয়ে ইসলামী ও সমমনা দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গঠন করা। অন্তত ইসলামী দলগুলোর ঐক্য গঠন করা খুবই দরকার। যারা হুজুরের কাছাকাছি থাকেন; হুজুরকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন; তারা আল্লাহর ওয়াস্তে এই মহান কাজটি করুন।
আল্লাহ আপনাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম বিনিময় প্রদান করবেন।

-Mufti Abdul Muntaqim এর টাইমলাইন থেকে

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button