মুসলিমরা কেমন উৎসব চায়

jamalজামাল আস- সাবেত: উৎসব হচ্ছে আনন্দানুষ্ঠান। মানুষের জীবনে উৎসবের ভূমিকা অপরিসীম। উৎসব ছাড়া মানুষের জীবন নিরানন্দ হয়ে উঠে। সেটা পারিবারিক উৎসব হোক আর সামাজিক উৎসবই হোক না কেন। মানুষ আনন্দপ্রবণ তাই আনন্দে থাকা তার একটি সহজাত দিক। পৃথিবীর এমন কোনো মানুষ নেই যে উৎসব পালনে অপারগ। এমন কোনো দেশ নেই যে দেশে উৎসব হয় না। বাংলদেশ ও বাংলাদেশের মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। এ দেশে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন উৎসব পালন হয়ে আসছে।
সাম্প্রতিককালে উৎসব যেন হয়ে উঠছে এ দেশের প্রাণের মেলা, জীবনের মেলা। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায় বিভিন্ন উৎসব পালন করছে। এসব উৎসবের মধ্যে মুসলমানদের দু’টি ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব রয়েছে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। প্রতিবছর তাঁরা এ দু’টি উৎসব পালন করে থাকেন। আমরা জানি যে, মুসলমানদের উৎসবে কী থাকবে আর কী থাকবেনা সে সম্পর্কেও বিধিনিষেধ রয়েছে। আমরা আরোও অবগত আছি যে, ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের সাথে প্রধান যে অন্তরায় তা হচ্ছে, ‘মূর্তি’। ইসলাম ধর্ম মূর্তি ছাড়া পালন হয় আর অন্যান্য ধর্ম মূর্তি ছাড়া পালন হয়না। তাই কেউ যদি ঈমান আনার পর মূর্তির মাধ্যমে মঙ্গল কামনা করে তাহলে সে আল্লাহর সাথে শিরক বা অংশিদার করে বসল। এবং এ কারণে সে মুসলিম থেকেই খারিজ বা বের হয়ে যায়। সে জন্য কোনো মুসলিমের সাথে মূর্তির কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।
নবীজি (সাঃ) বলেছেন, ‘যেখানে যত মুর্তিই দেখ না কেন, তাকে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে ফেল। আর যত উচুঁ কবর দেখবে, তাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে। (মুসলিম)
রাসূল (সাঃ)-এর এ পবিত্র বাণী থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, ইসলামে মূর্তি পূজা তো দূরের কথা; মূর্তি বা সে জাতীয় কোনো কিছুর জিনিসের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না।
যেহেতু ইসলামের সাথে মূর্তির কোন সম্পর্ক নেই, সেহেতু মুসলিমদের কোনো অনুষ্ঠানে মূর্তি বিষয়ে কথা বলাটাও নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের এই বাংলাদেশে আমরা এই বিষয়টিই মুসলিমদেরকে বুঝাতে পারছি না। মুসলমানদের গায়ে মূর্তির লেশমাত্রও লাগবেনা এটাইতো স্বাভাবিক। তবু লক্ষ্য করার বিষয় যে, আমরা আমাদের জাতীয়-উৎসব হিসেবে যেসব উৎসব পালন করে থাকি, তা কি আদৌ ইসলাম সমর্থন করে কি না?
প্রকৃত মুসলমানদের কাছে এটা অবশ্যই ইসলাম সমর্থিত নয়। যেখানে মূর্তি আছে সেখানেই মুসলমান থাকবেনা’ এটাইতো হওয়া উচিৎ। সবচেয়ে অমানবিক লাগে তখন, যখন শুনি এ দেশের কোনো ব্যক্তি বা কিছু তথাকথিত গোষ্ঠী জোরগলায় বলে, আলেম- ওলামা দেশের উৎসব বিরোধী! এরা ধর্মান্ধ! দেশের ঐতিহ্য বিরোধী! অথচ এরাই কিনা অসাম্প্রদায়িকতার চেতনায় বিশ্বাসী বলে নিজেদেরকে পরিচয় দেয়!
যদি আপনি অসাম্প্রদায়িক বলে নিজেকে দাবী করেন, তাহলে কীভাবে ইসলামের মৌলিক বিষয় নিয়ে, স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে, ইসলামের নেতাদের নিয়ে এসব কুৎসা বাক্য ব্যবহার করে থাকেন? এটা কি একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে না?
এদেশের আলো বাতাস নিয়ে আপনারাই বেড়ে উঠেছেন, আলেম ওলামারা কি বেড়ে উঠেননি? আপনারাই দেশকে ভালোবাসতে পারেন, তাঁরা কি দেশকে ভালোবাসতে পারেন না? বোধগম্য হওয়া উচিৎ যে, তাঁরা এমন কিছু কখনোই করবেন না যে, যার দ্বারা দেশের ক্ষতি হয়। আলেমরা সবসময় দেশের কল্যাণ চায়। তাঁরা দেশকে সেভাবেই লালন করেন, যেভাবে নবীজি (সাঃ) তাঁর দেশকে লালন করতেন।
আমরা মুসলিম হিসেবে দেশের ঐতিহ্য সেভাবেই লালন করবো, যেভাবে ধর্মে দিক- নির্দেশনা রয়েছে। সাথে সাথে এমন কোনো কর্মকাণ্ড কখনোই করবো না যে, যার দ্বারা অন্যধর্মকে অবমাননা করা হয়। সুতরাং ইসলামের ব্যাপারে, ইসলামের নেতাদের ব্যাপারে আপনি নাকগলাবেন না। আপনি বলবেন যে, পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে দেশের সকল উৎসব অসাম্প্রদায়িকতার বার্তা বহন করে, দেশের ঐতিহ্য বিশ্বদরবারে উজ্জ্বল করে, উৎসব উৎসবই এখানে ধর্মকে টেনে আনা বোকামি (?)
হাঁ, ধর্মকে টেনে আনা যদি বোকামি-ই হয় তাহলে আপনারা এমন উৎসবের আয়োজন করেন, যেখানে কোনো ধর্মেরই লেবাছ লাগানো থাকবেনা। এমনভাবে আয়োজন করেন, যাতে কোনো ধর্মের চেতনায় আঘাত না লাগে।
অসাম্প্রদায়িক দেশের উৎসবে বিশেষ কোনো লেবাছ থাকা যাবে না, যে লেবাছ বিশেষ কোনো ধর্মের লেবাছের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। শুধুমাত্র দেশজ জিনিস দিয়েই অর্থাৎ ধর্মীয় উপাদান বাদ দিয়ে উৎসব করতে হবে। এমনকি সেখানে কোনো অশ্লীল গান-বাজনা কিংবা অশালীন কোনো কিছুর ব্যবস্থা থাকতে পারবে না। কারণ এটিও মুসলিম-ধর্মের সাথে বাধা সৃষ্টি করে থাকে। যেসব জিনিস শিরকের সাথে সম্পর্কিত সেসব দিয়েও উৎসব করা যাবে না। যদি এমন হাল হয়, তাহলেই দেশের আলেম-ওলামাসহ সকল মুসলিম এ উৎসবে যোগ দিবে।
দেশে হোলি উৎসব হয়, পহেলা উৎসব হয় কিন্তু জাতি হিসেবে বড় লজ্জার কথা হচ্ছে, কীভাবে এসব অনুষ্ঠানে শ্লীলতাহানীর ন্যায় অশালীন ঘটনা ঘটে?
এর কারণ যে, ধর্মীয় অনুশাসন না মানা ও সরকারের নমনীয়তা এবং আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠার অভাব তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শালীনতা বিবর্জিত সমাজই যে, অশালীন ঘটনার জন্ম দেয় তাইতো যুগযুগ ধরে প্রমাণিত হয়ে আসছে। শালীন বলতে কেবল, পোশাকের শালিনতা নয় বরং নারীপুরুষ উভয়ের মন-মানসিতায় শালীনতা বুঝায় রাখা জরুরী।
মুসলিমরা যেসব উৎসব করে, পৃথিবীর অন্যকোনো ধর্মীয় উৎসবের সাথে কখনোই তা মিলবে না। এখানে যৌন হয়রানি হয় না, নাচানাচি হয় না, অশালীন কোনো গান-বাজনাও হয় না। এমনকি প্রকৃত মুসলিমরা পোশাক পরিচ্ছদেও সম্পূর্ণ শালীনতা বজায় রাখে।
ইসলামী বিধান মতে, উৎসব-অনুষ্ঠান ধর্মীয়, সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেরই নাম।
পবিত্র কুরআন বলছে, “তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।”-আল-মায়িদাহ :৪৮
“প্রতিটি জাতির জন্য আমি ধর্মীয় উপলক্ষ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি যা তাদেরকে পালন করতে হয়।”-আল-হাজ্জ্ব :৬৭।
ইসলামী উৎসবে কোনো-প্রকার বেহায়াপনার সুযোগ নেই। ইসলাম ‘উৎসব’ বলতে শুধুমাত্র নিষ্কলুষ উৎসবকেই বুঝায়। অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ উৎসবকে নয়। ইসলাম উৎসবকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে বিধায় তা যেন নিছক কোনো উৎসবের নাম না হয় বরং তা পালনে মানবজীবন যেন নিষ্কলুষ ও পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠে সে নির্দেশনাও দিয়েছে। ইসলাম বিরোধীরা এ ক্ষেত্রে বলবেন যে, ইসলাম ব্যক্তি স্বাধীনতাকে হরণ করেছে। কিন্তু নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, তা আদৌ ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী নয়। কারণ মানুষ শান্তি ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে হলে তাকে অবশ্যই নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। অশ্লীল কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকতে হবে। তবেই ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র একটি শান্তিময় পরিবেশ তৈরি করতে সমর্থ হবে।
-লেখক ও কলামিস্ট
jamalassabet@gmail.com

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button