ফিরে দেখা ২০১৭: আন্তর্জাতিক অঙ্গন

2017নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা, আলোচনা-সমালোচনার বছর ছিল ২০১৭। যুদ্ধ, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধূলা থেকে শুরু করে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিনোদন সব ক্ষেত্রেই নানাভাবে আলোচিত ছিল বিদায়ী বছরটি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এ বছরটিও রাজনৈতিক ঘটনাবহুল। ২০১৭ সাল নিয়ে ‘ফিরে দেখা ২০১৭: আন্তর্জাতিক অঙ্গন’।
ঘটনাবহুল মধ্যপ্রাচ্য: ২০১৭ সালে পুরোটা সময়জুড়েই যথারীতি টানটান উত্তেজনায় মধ্যপ্রাচ্য। জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতিতে জন্ম দিয়েছে, নতুন সঙ্কট। এছাড়া, আইএস-বিরোধী লড়াই, সৌদি-ইরান দ্বন্দ¦, কাতার সঙ্কট, কুন্দিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বেশ কিছু ঘটনা মরুর বুকে উত্তাপ ছড়িয়েছে।
জেরুসালেম ইস্যুতে ইসরাইল-ফিলিস্তিন উত্তেজনা: বছরের শেষপ্রান্তে জেরুসালেমকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য। বেলফোর ঘোষণার শতবর্ষ পূর্তির বছরই, জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেইসঙ্গে ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুসালেমে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
এরপরই মুসলিম বিশ্বসহ পৃথিবীজুড়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এমনকি আমেরিকানরাও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বিরোধিতা জানায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বাকি সদস্যরাষ্ট্রগুলো। এমনকি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পূর্ব জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানীর স্বীকৃতি দেয় ওআইসি। এর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে ইসরাইলও সরে আসে ইউনেস্কো থেকে।
অবশেষে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ভোটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে।
কাতার সঙ্কট: সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও ইরানের সঙ্গে মিত্রতা বাড়ানোর অভিযোগে ৫ জুন কাতারের উপর সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিশর বাণিজ্য ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যদিও বরাবরই সেসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে কাতার। এতে অনেকটাই বিপাকে পড়ে কাতার। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সৌদি আরব যেসব শর্ত দেয়, এর মধ্যে রয়েছে সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরা বন্ধ করে দেয়া। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এটি একটি সুদূরপ্রসারী ঘটনা। সৌদির নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে কাতারের পাশে দাঁড়ায় ইরান ও তুরস্ক।
সৌদি প্রশাসন ও রাজনীতি: এ বছর সৌদি আরবের রাজপরিবারের ক্ষমতার ধারা, প্রশাসন আর রাজনৈতিক অবস্থানে ঘটেছে চোখে পড়ার মতো সব পরিবর্তন। নারীদের গাড়ি চালানোর স্বাধীনতা, স্টেডিয়ামে খেলা দেখার অনুমতি, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অবশেষে সিনেমা হল চালুর সিদ্ধান্ত ছিল আলোচিত।
সৌদি আরবকে সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণার পাশাপাশি বহুযুগের কট্টরপন্থি ওয়াহাবি ইসলাম থেকে সরে ‘মধ্যপন্থি ইসলাম’ গ্রহণের ঘোষণা দেন যুবরাজ। অন্যদিকে যুবরাজকে প্রধান করে দুর্নীতি দমন কমিটি গঠনের কয়েক ঘণ্টার মাথায় ১১ প্রিন্স ও ৪ মন্ত্রীসহ কয়েক ডজন সাবেক মন্ত্রী-ব্যবসায়ীকে আচমকা গ্রেপ্তার, পরদিন ইয়েমেন সীমান্তের কাছে অনুসন্ধান কাজ শেষে ফেরার পথে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দলবলসহ এক প্রিন্স নিহত, তার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই গ্রেপ্তার অভিযানে আরেক প্রিন্সের মৃত্যু, শেষে পাঁচতারকা হোটেলে মেঝেতে ঘুমানোর শাস্তি দিয়ে শত বিলিয়ন ডলার জরিমানায় আটক প্রিন্সদের মুক্তিদান এমন অনেকগুলো ঘটনা একসঙ্গে ঘটতে দেখল বিশ্ব।
ইয়েমেন ও লেবানন সঙ্কট: ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুথিদের বিরুদ্ধে ২ বছরের সৌদি অভিযান অব্যাহত রছেছে। চলতি বছর রিয়াদে কয়েক দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় হুথিরা। বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলে হত্যা করা হয়, ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লাহ সালেহকে। নভেম্বরে লেবাননের শিয়াগোষ্ঠী হেজবুল্লাহকে ঘিরে দেশটিকে নিয়ে শুরু হয় নতুন মেরুকরণ। অভিযোগ ওঠে, সৌদি আরবের চাপেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন, লেবানিজ প্রধানমন্ত্রী সাদ আল হারিরি। শেষমেষ ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারও করেন তিনি।
কুর্দি স্বাধীনতার গণভোট: স্বাধীন কুন্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ইরাকে। সেপ্টেম্বরের গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিলেও, শেষমেষ কিরকুকসহ কুন্দি অধুষ্যিত অনেক এলাকাই এখন কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে।
রাখাইনে মিয়ানমারের সেনা অভিযান: ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান শুরু করে। এ সময় কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। রোহিঙ্গাদের সহস্রাধিক বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে তাদের ঠাঁই হয়েছে।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা তাদের ওপর চালানো হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। পালিয়ে আসাদের অনেকেই ছিলেন গুলিবিদ্ধ, অগ্নিদগ্ধ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোহিঙ্গাদের ওপর যখন এ ধরনের নির্যাতন চালানো হচ্ছিল, তখন মায়ানমারের শান্তিতে নোবেল বিজয়ী নেত্রী অং সান সু চি নীরবতা পালন করেছেন। পরে তিনি বলেন, ঠিক কী কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে যাচ্ছেন, তা তিনি জানতে চান। সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করা থেকেও বিরত থাকেন তিনি। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের জেরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে মায়ানমার। দেশটির সেনাসদস্যদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র।
ব্রেক্সিট বিল: যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ২৩ জুন ২০১৬ সালে। ১ মার্চ ২০১৭ ও ৭ মার্চ ২০১৭ হাউস অব লর্ডসের অনির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা দুই দফায় ওই বিলে সংশোধনীর পক্ষে ভোট দেন। এমন পরিস্থিতিতে ব্রেক্সিট আলোচনা শুরুর ব্যাপারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের পরিকল্পনা হুমকির সম্মুখীন হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো প্রকার সংশোধনী ছাড়াই ১৩ মার্চ ২০১৭ ব্রেক্সিট বিল পার্লামেন্টে চূড়ান্তভাবে পাস হয়।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প যুগ: বছরজুড়েই আলোচনায় ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্যাসিনো ব্যবসায়ী থেকে নাম লেখান যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে। সবাইকে চমকে দিয়ে গত ১৭ থেকে ২১ জানুয়ারি তিনি বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ‘উই উইল মেইক আমেরিকা স্ট্রং এগেইন’ স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এলেও অভিবাসী, মুসলমান ও নারী বিদ্বেষী নানান বক্তব্য ও কর্মকা- করা ডোনাল্ড ট্রাম্প বছরজুড়েই সমালোচনায় ছিলেন। সাত মুসলিম দেশকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প বছরের শেষে এসে জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে সারা বিশ্বে বিক্ষোভ, আন্দোলন আর সমালোচনার ঝড় তুলেছেন।
ছয় মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিশেষ করে মুসলিম অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রতি কঠোর হওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় এসেই তিনি ছয় মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে আন্দোলন-বিক্ষোভ হলেও শেষ পর্যন্ত ৪ ডিসেম্বর দেশটির সুপ্রিমকোর্ট তা অনুমোদন করেন। এতে চাদ, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অধিকার হারান।
কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার জন্য গণভোট: স্পেনের আংশিক-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালোনিয়া অক্টোবরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেও যথেষ্ট সমর্থনের অভাবে শেষ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যায়। বরং আগে থাকা স্বায়ত্তশাসনটাও হারিয়ে বসে অঞ্চলটি। স্পেন সরকার একদিকে আঞ্চলিক সংসদ বিলুপ্ত করে কাতালোনিয়ায় কেন্দ্রীয় শাসন জারি করে। অন্যদিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে কাতালান প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদেমনসহ বহিস্কƒত নেতারা পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে। পরে অবশ্য তারা ফিরে আত্মসমর্পণ করেন।
জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে মুগাবের পদত্যাগ: নভেম্বরের মাঝামাঝিতে জিম্বাবুয়ের রাজপথ দখলে নিয়ে ৯৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে সপরিবারে গৃহবন্দী করে সেনাবাহিনী। গৃহবন্দী অবস্থায় সেনাবাহিনী ও নিজ দলের চাপে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে রাজি হলেও জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ডিসেম্বরের আগে পদ ছাড়বেন না তিনি।
ক্ষমতাসীন দল প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অভিসংশনের হুমকি দিলে মুগাবে অনেকটা হঠাৎ করেই ২১ নভেম্বর ৩৭ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে পদত্যাগ করেন। মুগাবের জায়গায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তার হাতেই বরখাস্ত সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নাঙ্গাগওয়া। মুগাবের ক্ষমতাচ্যুতি চেষ্টায় তেমন কোন রক্তপাত না ঘটায় একে ইতিবাচক হিসেবে দেখে আশেকা বলেন, নতুন সরকারের কাজকর্ম জনগণের বুঝে উঠতেই আগামী বছরের অনেকটা কেটে যেতে পারে। তবে প্রথমদিক হিসেবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের কিছু আশা রয়েছে।
নওয়াজ শরিফের পদত্যাগ: ২৮ জুলাই আদালতের রায়ে ‘অযোগ্য’ ঘোষিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ান পাকিস্তান মুসলিম লিগের প্রধান নওয়াজ শরিফ। দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্তের পর পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করেন। পানামা পেপারস মামলায় ওই রায়ের ১ ঘণ্টা পর পদত্যাগের এ ঘোষণা দেন তিনি। তবে নওয়াজ ও তার পরিবার দুর্নীতির এসব অভিযোগ অস্বীকার করে। পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। নওয়াজ শরিফের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
প্যারাডাইজ পেপারস কেলেঙ্কারি: পানামা পেপারসের রেশ শেষ না হতেই, বারমুডাভিত্তিক ল ফার্ম প্রতিষ্ঠান অ্যাপলবির ১ কোটি ৩৪ লাখ গোপন নথিতে ফাঁস হয় বিভিন্ন দেশের বহু প্রভাবশালীর গোপন সম্পদের খবর। ‘প্যারাডাইস পেপারস’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এসব নথিতে ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ, প্রিন্স চার্লস, মার্কিন মন্ত্রী উইলবার রসসহ অনেকের নামই এসেছে। অ্যাপল, নাইকি ও উবারসহ প্রায় ১০০ বহুজাতিক কোম্পানির কর পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ পেয়েছে এসব নথিতে। কানাডার লিবারেল পার্টির প্রধান এবং যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যান ও অন্যতম অর্থদাতা লর্ড অ্যাশক্রফটের অফশোর বিনিয়োগের তথ্যও ফাঁস হয়েছে।
রোবট নাগরিক সোফিয়া: ২৫ অক্টোবর ২০১৭ সৌদি আরব ‘সোফিয়া’ নামের একটি রোবটকে পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদান করে। রোবটকে নাগরিকত্ব প্রদানের ঘটনা বিশ্বে এটাই প্রথম। রোবট হলেও সোফিয়া মুখে ৬২ ধরনের অভিব্যক্তি ফোটাতে পারে। সোফিয়াকে তৈরি করেছে হংকংয়ের কোম্পানি হ্যানসন রোবটিকস। প্রকৌশলী ও ডিজাইনারদের নেতৃত্বে ছিলেন ড ডেভিড হ্যানসন। ৬-৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ঢাকায় অনুষ্ঠিত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭’ মেলায় সোফিয়াকে আনা হয়।
বরখাস্ত ইংলাক সিনাওয়াত্রা: থাইল্যান্ডের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। ৭ মে ২০১৪ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে সাংবিধানিক আদালত তাকে বরখাস্ত করে। ২০১৫ সালে জান্তা সমর্থিত সরকার ইংলাককে ইমপিচ করার পাশাপাশি পাঁচ বছরের জন্য রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করে। এ ছাড়া ২০১৭ সালে কেলেঙ্কারিতে ফেঁসেছেন ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংহ। দুই শিষ্যকে ধর্ষণের অপরাধে তাকে দুই মামলায় ১০ বছর করে ২০ বছরের কারাদ- দেয় আদালত।
দেশে দেশে সন্ত্রাসী হামলা: ২০১৭ সালের প্রথম প্রহরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে একটি নাইট ক্লাবে এক বন্দুকধারী বিদেশি সন্ত্রাসী পর্যটকসহ ৩৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে একটি মাজারে আত্মঘাতী হামলায় ৮০ জন নিহত হন। মে মাসে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয় ২২ জন। আগস্টে স্পেনের পর্যটন নগরী বার্সেলোনায় মানুষের ভিড়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করা হয়। অক্টোবরে সোমালিয়ার মোগাদিসুতে ট্রাকবোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ৫০০। পরের মাসে মিসরের সিনাই উপত্যকায় মসজিদে বন্দুকধারীদের হামলায় তিন শতাধিক মুসল্লির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
হাতে লেখা বৃহত্তম কুরআন: মিসরের রাজধানী কায়রোর উত্তরাঞ্চলের অধিবাসী শিল্পী সাদ মোহাম্মদ পবিত্র কোরআনের হাতে লেখা সবচেয়ে বড় সংস্করণ প্রকাশ করেন। তিনি দীর্ঘ তিন বছর ধরে ৭০০ মিটার বা ২,২৯৬ ফুট দৈর্ঘ্যরে কাগজের বান্ডেলে এ কোরআনের আয়াতসমূহ লেখেন। এর আগে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সবচেয়ে বড় ছাপানো কোরআনের রেকর্ড থাকলেও হাতে লেখা কিংবা আঁকা কোরআনের কোনো বিশ্বরেকর্ড ছিল না।
প্রথম কৃত্রিম ভ্রূণ তৈরি:  ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো ইঁদুরের ভ্রূণ তৈরিতে সফল হন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে এ ভ্রূণটি তৈরি করেন। জীবন্ত এ ভ্রূণটি তৈরি হতে সময় লাগে মাত্র চার দিন। এ ছাড়া এ বছরই বিশ্বের প্রথম থ্রিডি মানব টিস্যু বানানোর প্রিন্টার বানাতে সক্ষম হয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকিভিত্তিক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান অ্যাডভান্স সলিউশন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button