খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি হতে পারে বিদেশের জাহাজ

খুলনা শিপইয়ার্ড ১৯৯৯ সালে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের সময় প্রায় ১০০ কোটি টাকার ঋণে জর্জরিত ছিল। তবে তারা দায়িত্ব নেয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে দু’টি এলপিসি ও দু’টি টাগবোর্ড তৈরি হয়েছে। বুধবার এগুলো উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদ।
তাছাড়া কোস্টগার্ডের তিনটি ইনসুল পেট্রোল ভ্যাসেল, ছয়টি হাইস্পিড বোর্ড ও ক্রেইন বোর্ড, নেভির জন্য দু’টি সার্ভে ভ্যাসেল এবং পায়রা বন্দরের জন্য দু’টি পাইলট ভ্যাসেল আছে। এছাড়া নেভি, কোস্টগার্ড ও বডার গার্ডে বিভিন্ন জাহাজও মেরামত করা হয়।
খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এল) কমোডর আনিসুর রহমান মোল্লা বলেন, আগে আমরা পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করেছি। এবার আরেকটু বড় যুদ্ধজাহাজ তৈরি হয়েছে। এভাবে তৈরি হতে থাকলে এবং ধারাবাহিকতা থাকলে আমাদের দক্ষ জনবল গড়ে উঠবে। তাহলেই ভবিষ্যতে বিদেশেরও জাহাজ নির্মাণের কাজও পাবে খুলনা শিপইয়ার্ড।
আনিসুর রহমান মোল্লা জানান, একসময় খুলনার শিপইয়ার্ড লিমিটেড অব্যাহত লোকসানে নুয়ে পড়েছিল। ব্যয়বহনের ভারে বন্ধ হওয়ার উপক্রমও হয়েছিল। সেই শিপইয়ার্ড এখন লাভের মুখ দেখেছে। খুলনার করদাতা হিসেবে এবারও শীর্ষে আছে প্রতিষ্ঠানটি। এবার প্রায় ৫০ কোটি টাকা কর দেয়া হয়েছে। এরপরও খুলনা শিপইয়ার্ডের লাভের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বরগুনার তালতলিতে ১৬২ একর জমির ওপর বড় ধরনের শিপইয়ার্ড তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আনিসুর রহমান মোল্লা জানান, এই জমি ক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পথে। সেখানে বড় বড় জাহাজ বা বাণিজ্যিক জাহাজ ও যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বরগুনা তালতলিতে ১৬২ একর জমির বিষয়ে ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ডের। এখন বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে কাগজপত্র জমা রয়েছে। এছাড়া ওই জমি কেনার জন্য তহবিলও এসেছে। জায়গাটি কিনতে লাগবে ২২-২৩ কোটি।
এছাড়া মংলার জয়মনিগোলে খুলনা শিপইয়ার্ডের ৪৩ একর জমি আছে। ওই জমি কেনা হয় ২০১১ সালে। সেখানে ফরওয়ার্ড শিপইয়ার্ড করার চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে জানান আনিসুর রহমান মোল্লা। বরগুনায় বড় শিপইয়ার্ড হলে মংলার জয়মনিগোলে তখন পরিবেশবান্ধব অন্য কোনও শিল্প স্থাপন করা হতে পারে।
১৯৫৭ সালের ২৩ নবেম্বর যাত্রা শুরু করে খুলনা শিপইয়ার্ড। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন জার্মান ও ব্রিটিশ প্রযুক্তিবিদরা। ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের (ইপিআইডিসি) দায়িত্ব নেয়। দেশ স্বাধীনের পর খুলনা শিপইয়ার্ডের অভিভাবকত্ব পায় বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (বিআইডিসি)।
১৯৭৬ সালে গঠন হয় বাংলাদেশ স্টিল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (বিএসইসি)। তখন এর আওতায় চলে আসে খুলনা শিপইয়ার্ড। লাভজনকভাবে চলা প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯০ সালের দিকে পড়ে লোকসানের মুখে। ধীরে ধীরে রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।
১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব হস্তান্তর করেন নৌবাহিনীর কাছে। তখন প্রতিষ্ঠানটির দেনা ছিল ৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সেই দায় মিটিয়ে এখন প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছরই লাভ করছে। পাশাপাশি সেরা করদাতা তালিকায়ও স্থান পাচ্ছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button