দস্তারে ফজীলত বনাম দাস্তানে খাসারা

খতীব তাজুল ইসলাম
পাগড়ী হচেছ আল্লাহর রাসুলের প্রীয় সুন্নাত। সুন্নাতে রাসুলের আরো উদাহরণ আছে। আছে টুপি কোর্তা খুশবো ও মিসওয়াকের সুন্নত। এগুলো ইসলামের সৌন্দর্য্য আল্লাহর রাসুলের আমলি নমুনা। উলামায়ে কেরাম পাগড়ি পরেন। পাগড়ি উলামা ছাড়াও অনেক দ্বীনদার লোকও পরতে পরেন। পাগড়ি বিশেষ কোন ব্যক্তির জন্য খাস নয় যে তিনি ছাড়া আর কেও ব্যবহার করতে পারবেন না। সুওয়াবের ভাগিধার হতে রাসুলের মহব্বত প্রার্থী মুসলমানগণ সবাই পাগড়ি পরবেন এটাই স্বাভাবিক। কথা হলো এই পাগড়ি পরার জন্য কি কোন প্রগ্রাম লাগে? বিরাট আয়োজন কোটি কোটি টাকার বাজেট করে মহাসম্মেলনের মাধ্যমে পাগড়ি পরিয়ে দেয়ার রেওয়াজ কবে কখন কারা শুরু করেছেন জানিনা, তবে ইদানিং তা খুবই প্রসিদ্ধি লাভ করছে। টাইটেল পাশ করে ছাত্ররা সনদ পাবে। তাদেরকে সুন্নতরে প্রতি আগ্রহী করে তুলতে মিসওয়াক বা পাগড়ি উপহার দিলে দুষের কিছু নেই তা প্রশংসনীয় বটে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই সুন্নত টুকু পালন করতে মাইকিং ডেকুরেশন লাইটিং প্রিন্টিং দেশ-বিদেশের মেহমানদারীর পেছনে কোটি কোটি টাকা খরছ করে দেশ এবং জাতির মুসলিম উম্মাহর কি ফায়দা বয়ে নিয়ে আসা হলো। দেখা যায় প্রতিষ্টান গুলোর নিজস্ব সামর্থ্য নেই বিধায় দেশ বিদেশে চাদা তুলে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এক দুই দিনের প্রগ্রামের এই আয়োজন। পাগড়ি প্রতি বছর বার্ষিক সম্মেলনে দেওয়া হয়, সেই একই জিনিস আবার ঘটা করে কোটি টাকার বাজেটের মাধ্যমে দিতে হবে কেন? অথচ অধিকাংশ এই সমস্ত প্রতিষ্টানের শিক্ষক কর্মচারীরা ঠিক মতো বেতন পাচেছন না। ভাল উস্তাদ নিয়োগ আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের শিক্ষা দেয়া হয়না ফান্ডের অভাবে। এমনকি প্রতিষ্টান গুলোর লেখাপড়া থাকা খাওয়ার পরিবেশ অভ্যন্তরীন পরিস্থিতিতে অভাবের তাড়না থাকলেও এই সমস্ত বিলাসী পরিকল্পনাতে তেমন ভাটা নেই। কোন কোন প্রতিষ্টানের আর্থিক স্বচ্ছলতা আছে অথচ তার পাশের আরেকটি মাদ্রাসার খাবার নেই বেতন নেই পানি নেই উনারা ফিরে দেখেন না। সবচেয়ে খারাপ দিক হলো বাংলাদেশে বসবাস করে বাংলাদেশের আলো বাতাসে বড় হয়ে দেশের জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে তাদের কোন মিল নেই সম্পর্ক নেই। ফলে লেখা পড়া শেষ করে ছাত্ররা নিজেদের অসহায় ভাবে। নামাজ পড়িয়ে আল্লাহর কালাম পড়িয়ে শিখিয়ে তার প্রতিদান বা বিনীময় আর্থিক কিছু চাওয়া কোরআনের কোন আয়াতে হাদিসের কোন কিতাবে আছে বলে আমার জানা নেই। কোরআন সুন্নাহ দিয়ে বানীজ্য হয়না। ইসলাম বিকিকিনির জিনিস নয়। ইসলাম কামাইর ও মাধ্যম নয়। এজন্য মুমিন বান্দাদের উদ্দেশ্যে করে ইরশাদ হচ্ছে: ‘যখন জুমার দিন তোমাদের নামাজের জন্য ডাকা হবে তোমরা ব্যবসা বাণিজ্য ফেলে নামাজের দিকে জলদি যাবে।’ ব্যবসা বাণিজ্য কাম কাজের মাধ্যমে হালাল উপার্জন ফরজের সমতুল্য। সেজন্য আল্লাহ তায়ালা এক ইবাদতের পর কামাইর ইবাদতের দিকে মানুষকে আত্মনিয়োগের আহবান জানিয়ে ফরমান: ‘যখন তোমাদের নামাজ শেষ তারপর জমিনে ছড়িয়ে পড়ো রিজিকের তালাশে আল্লাহর অনুগ্রহের প্রত্যাশায়।’ নামাজ রোজা হজ্ব ইত্যাদি কামাইর বাহন হতে পারেনা। কোরআন শিক্ষা তসবিহ দোয়া দুরুদ খতম জানাজা কবর জিয়ারত ওয়াজ নসিহত উপার্জনের কোন মাধ্যম নয়। এই বিষয় গুলো স্পষ্ট ভাবে পরিষ্কার ভাষায় বলা থাকলেও আমাদের উলামায়ে কেরাম সেই বিষয় গুলোকে উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম হিসাবে পেশা হিসাবে বেছে নিবেন কেন? মাদ্রাসা গুলোতেও সেভাবে শিক্ষা দেওয়া হচেছ। বাহিরের জগতে গিয়ে জীবন জীবিকার জন্য অন্য কিছু ভাবতে করতে অপারগ। এভাবে ইসলামের বিধান শরিয়তের নীতি কোরআন সুন্নাহর শিক্ষা আহলে হক্বের ঐতিহ্যকে ভুলুন্ঠিত করা হচ্ছেনা? দ্বীনী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতকে অন্যের অনুকম্পার উপর ছেড়ে দিয়ে এবাদত বন্দেগীকে উপার্জনের মাধ্যম বানিয়ে ইসলাম এবং উম্মাহর বিরাট ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। এই বিষয় গুলোর দিকে দৃষ্টিপাত না করে কোটি কোটি টাকার দস্তারে ফজিলত খাসারা বা নোকসানের দাস্তান ছাড়া আর কিছুই অনুমিত হচ্ছে আমার এই ক্ষুদ্র জ্ঞানে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button