বৈচিত্র্যময় শহর পানামা

panamaএম এস শহিদ: পানামা নামক দেশটির রাজধানী হলো পানামা সিটি। বহুতল ইমারত, সবুজ বনজঙ্গল আর পাহাড়ঘেরা নয়নাভিরাম পানামা সিটি। অতীত ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৬৭১ সালের ২৮ জানুয়ারী হেনরি নর্মান নামে এক জলদস্যু শহরটিকে পুরিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে শহরটিকে পুনর্নির্মাণ করতে দু‘বৎসর লেগেছিলো। পুরোনো শহরের ধ্বংসাবশেষ পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। আঞ্চলিক ভাষায় পানামা শব্দের অর্থ হলো প্রচুর মাছের দেশ। মাছধরাটা এখানকার মানুষের অন্যতম পেশাও বটে। পানামা রেড ইন্ডিয়ান, আফ্রিকানও ইউরোপীয় সংস্কৃতির আদলে তৈরি একটি মনোমুগ্ধকর শহর। ‘জোনা লিব্রা ডি কোলন’ নামে একটি বাজার রয়েছে পানামার কোলন শহরে। বাজারটি ৪৫০ হেক্টর জমির ওপর অবস্থিত। এ বাজারে চীন, তাইওয়ান, পণ্য সামগ্রী নিয়ে আসে। আর ভেনেজুয়েলা, গুয়াতেমালা, কলম্বিয়াসহ লাতিন আমেরিকার দেশগুলো এ বাজার থেকে পণ্য সামগ্রী ক্রয় করে। পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক লাগে না, সবই পাইকারি দরে বিক্রি হয়। কোলন শহরে বহুতলা ভবন খুব একটা চোখে পড়ে না, শহরের বাইরের দিকটা ঘন গাছপালায় ঢাকা। বিশেষ ছাড়পত্রের দরকার হয় বাজারে প্রবেশের জন্য। ফটক পেরুলেই দেখা যাবে প্রশস্ত পিচঢালা রাস্তার দুধারে সারি সারি আকর্ষণীয় সব দোকান। পাইকারির হিসাব নিকাশের জন্য আছে অফিস ঘর। সুগন্ধি, ঘড়ি, খেলনা, ইলেকট্রনিক্স, ফার্নিচার, ঘর সাজানোর জিনিসসহ প্রায় সবই পাওয়া যাবে এ বাজারে। এখানে গোটা বিশ্বের ১৫টি ব্যাংকের শাখা এবং একটি বড় সুপার মার্কেট রয়েছে। পানামা খাল হচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। আমেরিকান সিভিল সোসাইটি এ খালটিকে পুথিবীর অষ্টম আশ্চর্য বলে বলে আখ্যা দিয়েছে। এ খালটি দেশটিকে দুভাগে ভাগ করেছে। একটি প্রশান্ত মহাসাগর এবং অপরটি আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে। জঙ্গল কেটে খালটি নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড়ের মধ্যখানের ফাঁককে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে জলপথ, বিশ্বের ইতিহাসে প্রযুক্তিগত দিক থেকে এটি একটি অবিস্মরণীয় কীর্তি। খালটি আটলান্টিক মহাসাগরকে প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে যুক্ত করেছে। এ খাল দিয়ে একটি জাহাজ ১৫ দিনের পথ অতিক্রম করে যায় মাত্র ১২ থেকে ১৫ ঘন্টায় মধ্যে। এক বিশেষ মাপের জাহাজ কেবল এ খাল দিয়ে পেরুতে পারে। এ জাতীয় জাহাজকে “পানাম্যাক্স” বলে। জাহাজগুলো প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আটলান্টিকের দিকে যেতে দিনের বেলায় যাত্রা শুরু করে। আবার আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে যেতে রাতের বেলায় যাত্রা শুরু করে। খালের মধ্য দিয়ে জাহাজগুলোরকে পথ দেখিয়ে নেয়ার জন্য রয়েছে ট্রেলার ইঞ্জিন। এদের মিউল বলা হয়। এখানে চাতালের মতো এক বড় জায়গা এবং পর্যটকদের জন্য রয়েছে একটি মিউজিয়াম। ওই মিউজিয়ামে খাল তৈরির সময় বহু নথি ও প্রাচীন জিনিস সংরক্ষিত আছে, যা আজ ইতিহাসের সাক্ষী। জাহাজে চড়ে এ খাল অতিক্রম করার সময় পৃথিবীর সবচেয়ে বিরল ও নয়নাভিরাম কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করা যায়। এখানকার আইলা গ্রান্ড দ্বীপও অপূর্ব। শহর থেকে ১২০ কি.মি দূরে প্রথমে বাস ও গাড়ি সবশেষে বোটে চড়ে এ দ্বীপে যেতে হয়। সমুদ্রের সবুজনীল জলরাশির সাথে সোনলি বালির সখ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর কর। এ দ্বীপের সবুজ বন দেখলে প্রাণ জুড়ে যায়। বনের মধ্যে ফোর্ট অফ লরেঞ্জা নামে একটি দূর্গ অবস্থিত। জলদস্যুদের হাত থেকে রেহাই পেতে এ দুর্গ নির্মাণ করা হয়েছিল। এ দ্বীপে রয়েছে চাগরেস ন্যাশনাল পার্ক। এ পার্কের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে চাগরেস নদী। এখানে নানা জীবজন্তুু দেখা যায়। এ দ্বীপের গভীর অরণ্যে রেড ইন্ডিয়ান উপজাতিরা বাস করে। এখানে মূলত তিন ধরণের রেড ইন্ডিয়ান উপজাতি রয়েছে। প্রচীনকালে এরা কেউ ছিল শিকারী আবার কেউ ছিল যোদ্ধা। বর্তমানে এরা সকলেই সরকারের আইনের আওতায় পড়ে। তাই এদের শিকার করা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই এখন মাছ ধরে জীবন নির্বাহ করে। বর্তমানে উপজাতিদের মধ্যে বডি পেন্টিং আর্ট এর প্রচলন বেশি। কিন্তু উপজাতিরা প্রাচীন কাল থেকেই এ শিল্পকে সভ্য মানুষের চোখের আড়ালে রেখে লালন করে আসছে। এখানকার উপজাতিরা হাড়, পুঁতি, পাথর, ঝিনুক দিয়ে তৈরি নানা ধরণের গয়না তৈরি করে। গয়নার ওপর নানা রং ব্যবহার করে আকর্ষণীয় ও সৌন্দর্যময় করে তোলা হয়। পানামায় ভ্রমণকারী পর্যটকদের জন্য যে রেলগাড়ি রয়েছে তা দেখতে ভারতের দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেনের মতো। এ রেলগাড়ি সমান্তরালভাবে চলতে থাকে। এ রেলগাড়িতে চড়ে ভ্রমণকারীরা গার্টুন লক ও পানামা ক্যানেলের নানা মনোরম দৃশ্য উপভোগ করেন। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করার সময় স্বৈরাচারী শাসক মর্টেগারের বন্দীশালাও চোখে পড়বে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button