১০০০ পাউন্ডের অ্যাপার্টমেন্ট এখন ৩.৭ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তি

লন্ডনের একটি ফ্ল্যাটের বস্তি থেকে অভিজাত ফ্ল্যাটে রূপান্তরের ইতিহাসের শুরু একটি আকস্মিক সাক্ষাত থেকে, যে সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল একটি বোটে। ১৯৭৪ সালে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে মন্দা চলছে, তখন জনৈক যুবককে টেমস নদীতে একটি বোটে ভ্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই সাক্ষাৎকার ও ভ্রমণ ছিলো তার জীবন পরিবর্তনকারী, বলা যায় ভাগ্য পরিবর্তনকারী।

কলিন (ছদ্মনাম) নামক যুবকটি তখন তার চাকুরী হারিয়ে অনিশ্চিত অবস্থায় নিপতিত। এ অবস্থায় সে বাধ্য হয়ে তার ছোট্ট বেসমেন্ট ফ্ল্যাটটি বিক্রি করতে হয়েছিলো,যা সে মাত্র ক’বছর আগে ক্রয় করেছিলো। কিন্তু নৌকাভ্রমণে তার সঙ্গীদের দু’জন এর চেয়েও খারাপ অবস্থায় ছিলো। তারা লন্ডনের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর স্থান সমূহের একটি গ্রেট কাম্বারল্যান্ড প্লেস-এ চার বেডরুমের একটি বাসায় বসবাস করছিলো।
কিন্তু তাদের ১০ বছরের বন্দোবস্তের মেয়াদ পূর্ণ হতে আর মাত্র এক বছর বাকি ছিলো এবং তাদের শংকা ছিলো, ল্যান্ডলর্ড অর্থাৎ ভূস্বামী দ্য পোর্টম্যান ইস্টেট এই বলে দাবি করতে পারে যে, তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে অত্যন্ত মানহীন হয়ে পড়া সম্পত্তিটির উন্নয়নে অর্থ ব্যয় করবে। যেখানে কোন সেন্ট্রাল হিটিং নেই, দেয়ালের রং উঠে যাচ্ছে এবং একটি ছোট্ট পুরোনো গ্যাস হিটারে ছোট্ট একটি বাথরুমের জন্য গরম পানি সরবরাহ করছে। তারা ১০ জন অস্ট্রেলীয় নাগরিকের সাথে ফ্ল্যাটটি শেয়ার করেছিল এবং প্রত্যেকেই এই স্থান ত্যাগে ইচ্ছুক ছিলো।
অতঃপর কলিনকে লীজ বা বন্দোবস্তটি গ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয়, ১০০০ পাউন্ডের কয়েকটি ‘কী মানি’ পরিশোধের বিনিময়ে।
এটা তাকে পোর্টম্যানের সাথে আলোচনার অধিকার প্রদান করে, যিনি অর্থ পরিশোধের কিছুই জানতেন না। পোর্টম্যান তাকে অনুমোদন করেন এবং ১৯৭৫ সালে তাকে আরো ৯ বছরের লিজ বা বন্দোবস্ত প্রদান করেন।কলিন স্মরণ করেন, সম্পত্তিটি এক ভয়াবহ অবস্থায় ছিল এবং এর জন্য ১০০০ পাউন্ড কম ছিলো না বলে মনে হচ্ছিলো। এজন্য কলিনকে তার মায়ের নিকট থেকে অর্থ ধার করতে হয়। তিনি তখন জানতেন না যে, সেটা ছিলো একটি গ্রেড টু- লিস্টেড বিল্ডিংয়ে একটি উচ্চ মানের বিনিয়োগ।
বর্তমানে ১৭৯০ বর্গফুটের এই ফ্ল্যাটে রয়েছে একটি চার বেডরুম, সাড়ে তিন বাথরুম ডেলাইট এবং কলিন কর্তৃক ব্যাপক সাজসজ্জার পর এর বাজার দর এখন ৩.৬৯৫ মিলিয়ন পাউন্ড। গত ১৯৭৪ সাল থেকে গত কয়েক বছর পূর্ব পর্যন্ত কলিন এই সম্পত্তিতে বাস করেন। সম্প্রতি তিনি এটা ভাড়া দিয়েছেন তার স্ত্রী ও ছেলে দক্ষিণ উপকূলে চলে যাওয়ায়।
কোনো না কোনোভাবে কলিন স্বীকার করেন যে, তিনি এই সম্পত্তিকে বিদায় জানাতে অনিচ্ছুক।তিনি বলেন, যদি এটা দিন না-ও হয় তবে তিনি এটা ভাড়া দিয়ে যাবেন সপ্তাহে প্রায় ১৪৫০ পাউন্ডের বিনিময়ে। তিনি বলেন, যখন বাড়িগুলো নির্মিত হয়, তখন গ্রেট কাম্বারলেন প্লেস একটি অভিজাত এলাকা ছিলো। আলেকজান্ডার মুরে, যিনি পরে ডানমোরের ৮ম আর্ল হন, তার স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে ১৯০১ সাল থেকে ৪ বছর বাস করেন।
ম্যাডোনা ও গাই রিচির মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের ২টি বাড়ি ছিলো সড়কের নিম্নভাগে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে স্থানটিকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিলো। যখন কলিন তার ৫ বন্ধু নিয়ে সেখানে প্রথম বসবাস শুরু করেন তখন সেটা ছিলো একটি আদিম এলাকা। শরীর জমে যাওয়া ঠান্ডায় আগা নামক একটি গ্যাসের পানি হিটার এবং একটি ইলেকট্রিক বার হিটার ছাড়া কোন হিটিং ব্যবস্থা ছিলো না।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button