সিলেট সুরমার বুকে ফসলের মাঠ

ফয়সাল আমীন: ছিল নদী। হয়ে গেছে ফসলের মাঠ। কোনো সময় সবজি আর কখনও বা হচ্ছে ধান ক্ষেত। আবার কোথাও পরিণত হয়েছে খেলার মাঠে। চিত্রটি সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বাংলাদেশের দীর্ঘতম খরস্রোতা নদী ‘সুরমা’র।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ খননের অভাবে ক্রমশ ভরাট হয়ে গেছে। একসময় নদীর এই দীর্ঘ অংশজুড়ে প্রচন্ড স্রোত থাকলেও এখন সেখানে পানিই নেই। ‘মরা গাঙ’ হিসেবে পরিচিত নদীর এই অংশে সুস্বাদু মাছের বংশও হারিয়ে গেছে। এর ফলে নদী তীরবর্তী প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ মাছ ধরাসহ প্রাত্যহিক কাজকর্ম সম্পাদন এবং চাষাবাদের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন। ঐ এলাকার প্রকৃতি এবং পরিবেশও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এক সময় সুরমার এই অংশে প্রচন্ড স্রোত আর ঢেউয়ের তান্ডবে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো চরম ভাঙ্গনের মুখে পড়ে। এ অবস্থায় প্রায় ৩০ বছর পূর্বে তৎকালীন সরকার ধনপুর থেকে হাউসা পর্যন্ত ২ কিলোমিটার বাইপাস নদী খনন করে। এরপর থেকে সুরমার মূল প্রবাহ বাইপাস দিয়ে চলে যায়। স্রোতহীন হয়ে পড়ে ধনপুর থেকে তিলকপুর পর্যন্ত প্রবাহিত সুরমা নদীর বিশাল অংশ। তখন থেকেই ক্রমশ পলি ভরাট হতে থাকে। বর্তমানে দীর্ঘ নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশই ভরাট হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, পানির অভাবে দু’পারে সেচ কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ‘মরা গাঙ’ হিসেবে পরিচিত এই অংশে পানি না থাকায় মাছও নেই। ফলে মাছের উপর নির্ভরশীল অসংখ্য পরিবার দুর্ভোগে পড়েছে। ইতিমধ্যে অনেক জেলে পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। বর্তমানে নদীর প্রায় পুরোটাই ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে এখন ধান ও সবজি চাষ হচ্ছে এবং খেলার মাঠ ও গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। নদীর অনেক স্থানে অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বাড়ি ঘর।
এলাকাবাসী জানান, নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় প্রতি বছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢল এসেই সরাসরি পার্শ্ববর্তী বাড়িঘরে আঘাত হানে। ভাসিয়ে নিয়ে যায় ক্ষেতের ফসল, বাড়িঘর ও গাছপালা। এই অবস্থা থেকে বাঁচাতে শিগগিরই নদীটি খননের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
গ্রামবাসী জানান, নদীটি খনন করা হলে মাছের প্রজনন বাড়বে, শুকনো মৌসুমে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে ও বর্ষায় অতিরিক্ত পানি ধারণ করবে। এতে পাহাড়ি ঢলের আঘাত থেকে রক্ষা পাবে বাড়িঘর। এর সাথে অবৈধ দখল প্রক্রিয়া থেকেও রক্ষা পাবে নদীর বিস্তীর্ণ ভূমি। এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া বলেন, উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে অনেক বলেছি। কিন্তু কেউ কথা শুনে না। তিনি বলেন, নদীটি খনন হলে অসংখ্য মানুষ এর সুফল পেত। হেমন্তে দু’পারে সেচ সুবিধা নিয়ে ফসল উৎপাদন বেড়ে যেত।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button