শীর্ষ ১০ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের তলিকায় বাংলাদেশ

FPবিশ্বের শীর্ষ ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের তালিকায় বাংলাদেশকে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ফরেন পলিসি। রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এসব অঞ্চলের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।
গত ৩০ ডিসেম্বর সাময়িকীটির অনলাইন সংস্করণে ‘নেক্সট ইয়ার্স ওয়্যারস/ ফ্রম সোচি টু সুদান, টেন কনফ্লিক্টস দ্যাট উইল থ্রেটেন গ্লোবাল স্ট্যাবিলিটি ইন ২০১৪’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে নিয়ে এ আশঙ্কার কথা বলা হয়।
এ বছর অস্থিতিশীল দেশ বা অঞ্চলের তালিকায় বাংলাদেশ, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, হন্ডুরাস, লিবিয়া ও নর্থ ককেশাসকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকায় রাখা সংঘাতপূর্ণ আগের পাঁচটি অঞ্চল হলো- মধ্য এশিয়া, ইরাক, সাহেল, সুদান এবং সিরিয়া-লেবানন।
ফরেন পলিসি বলেছে, সেন্ট্রাল আমেরিকায় সংগঠিত অপরাধ, বাংলাদেশে নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, নর্থ ককেশাসের মতো সহিংসতার আশঙ্কায় থাকা এবং আঞ্চলিক অস্থিরতার জন্য লেবানন ও সাহেলের মতো দেশের বিপদের ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে এ তালিকা করা হয়েছে।
রক্তক্ষয়ী সংঘাত, সব নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থতা, বৈষম্য এবং বিভেদ সৃষ্টিকারী শাসনব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিয়ে এ তালিকা করা হয়েছে।
দেশগুলোর এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে দীর্ঘ সময়, প্রতিশ্রুতি ও সম্পদ প্রয়োজন বলেও অভিমত দিয়েছে ফরেন পলিসি।
প্রতিবেদনে সম্ভাব্য সংঘাতপূর্ণ অন্যান্য অঞ্চল ও দেশের মতো বাংলাদেশ নিয়েও একটি অনুচ্ছেদ তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়, রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিরোধী দলের সংঘর্ষে অনেকে নিহত ও কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছে। এ সময় দেশজুড়ে সহিংস হরতাল ও অবরোধ হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং নির্বাচনে কারচুপির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছে বিরোধী দল বিএনপি।
নির্বাচন বর্জনে সংকট আরো ঘনীভূত এবং প্রাণঘাতী সহিংসতা আরো বাড়তে পারে। কিছু কিছু ব্যক্তি নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার যে কথা বলছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের রূপরেখা ছাড়া তা কোনো সমাধান আনবে না বলেও ফরেন পলিসি মনে করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ও বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। ১৯৯১ সাল থেকে এই দুজনের মধ্যেই ক্ষমতার পালাবদল ঘটছে। গত অক্টোবরে তাদের মধ্যে যে টেলিসংলাপ হয়েছে তা এক দশকেরও বেশি সময় পর তাদের মধ্যে কোনো কথোপকথন। তবে দ্রুতই তা দুজনের মধ্যে তীর্যক বাক্য বিনিময়ে রূপ নেয়।
ফরেন পলিসি বলেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক মেরুকরণের শিকড় অনেক গভীরে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনাল থেকে আসা রায়ের প্রসঙ্গ তুলে প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত যেসব ব্যক্তিদের দণ্ড হয়েছে তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আসল অপরাধী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাউকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি।
যুদ্ধাপরাধে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ছয় নেতার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়েছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। এতে ধর্ম নিরপেক্ষ ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ তৈরির পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের মতো নতুন মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে বলেও এতে বলা হয়।
এ সংকট থেকে বেরোনোর একমাত্র সমাধান হিসেবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং একটি স্থিতিশীল ও দায়িত্বশীল সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
এজন্য শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ ভুলে সবার মতের ভিত্তিতে একটি রূপরেখা তৈরিতে মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে বলে এতে বলা হয়।
ফরেন পলিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এর বাইরেও নানামুখী ঝুঁকি রয়েছে। ১৯৭১ সাল থেকে সেনাবাহিনী প্রায় ৩০ বার অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছে, এর মধ্যে প্রায় ৫ বারে একবার তারা সফল হয়েছে। দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ দুজন প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছেন। এখনো সেনাবাহিনী একটি হুমকি হিসেবে রয়েছে।
এছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উগ্রবাদী হয়ে ওঠা, মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ এবং বাংলাদেশের জটিল অর্থনীতির গতিপথ-সব মিলে যে কোনো সময় বিস্ফোরণের পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
ফরেন পলিসি বলেছে, বিগত বছরে অনেক দেশে সংঘাতের অবসানে অগ্রগতি হয়েছে।
কলম্বিয়া আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় গৃহযুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে এগিয়েছে, এখনো অনেক সংকট থাকলেও মিয়ানমারে কয়েক দশকের সংঘাত নিরসনে অগ্রগতি এসেছে, সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের পথে এগোনোর মধ্য দিয়ে দেশটি নিয়ে নিজেদের স্থবিরতা কাটিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, কঙ্গো ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে তৎপরতা বাড়িয়েছে জাতিসংঘ, কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে তুরস্ক সরকার এবং পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার বদল হয়েছে।
অগ্রগতি সত্ত্বেও এসব দেশে এখনো সংঘাতের আশঙ্কা রয়ে গেছে বলে মনে করছে ফরেন পলিসি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button