কী কথা তাহার সনে ?

রশীদ জামীল :
সকাল থেকেই রিহার্সেল দিচ্ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।  যে কথাগুলো বলবেন সেগুলো গুছিয়ে নিচ্ছিলেন মনে মনে। বিরোধীদলের নেত্রীকে আজ তার ফোন করবার কথা। রাজনৈতিক স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় কথার কথা হিশেবে বলেছিলেন ফোন করার ব্যাপারটি। ইচ্ছা হলে করতেন না হলে নাই। কিন্তু বেরসিক মিডিয়া সেটাকে এমনভাবে হাইলাইট করেছে যে, এখন কথা না বলে আর উপায় নাই। এদিকে আবার সময় ভাল না। কথা বলতে হবে মেপে মেপে। উনি আবার আছেন মাঠ গরমের চান্সের অপেক্ষায়। এই সময়ে পান থেকে চুন খসলে আর উপায় নাই। (মাননীয় নেত্রীর পান খাওয়ার অভ্যেস নাই কিন্তু আজ জর্দা দেয়া একটা পানও মুখে দিলেন। আঙুলের ডগায় চুন নিয়ে একটু পর পর জিহ্বার আগায়  ডলছেন।  বিচিত্র কোনো কারণে পান খাওয়াটা বেশ উপভোগ করছেন তিনি।  ভাবছেন এখন থেকে মাঝেমধ্যে একটু-আধটু পান খেলে মন্দ হবে না।)
আল্লাহর নাম নিয়ে দুপুরবেলা লাল টেলিফোনটির কাছে গেলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বেশ কয়েকবার ট্রাই করলেন। ম্যাডামকে পাওয়া গেলো না! রানিং প্রাইম মিনিস্টার অবস্থায় ফোন করছেন তিনি কিন্তু অপাশেরজনকে পাচ্ছেন না- স্বাভাবিক কারণেই মেজাজ ঠিক থাকার কথা না কিন্তু সময় খারাপ। মেজাজ ঠিক রাখতে হবে।  এখন মাথা গরম করার সময় না।
জুহরের নামাজ পড়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে বিছানায় গেলেন তিনি। দুপুরে খাওয়ার পর ভাতঘুম দেয়াটা তার অনেক দিনের অভ্যেস। ঘুম ভাঙলো ঠিক আসরের আযানের পরে। তাড়াতাড়ি উঠে নামাজ পড়ে এক কাপ লাল চা খেলেন। ঘড়িতে তখন বিকেল ছ’টা ছুঁই ছুঁই। ফোনটা হাতে নিয়ে ডায়াল করলেন । ক্রিং ক্রিং ক্রিং! এবারে তৃতীয়বার রিং হতেই ফোন রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে ভেসে আসলো অনেকদিন আগে শোনা সেই কণ্ঠটি-
হ্যালো আপা, স্লামালিকুম।
না ভাবি, আমি ওয়া আলাইকুম সালাম বলব না। আজ আমি আপনাকে আগে সালাম করব, আপনি ওয়ালাইকুম বলবেন। আস সালামু আলাইকুম…
ওপাশ থেকে খিল খিল হাসির শব্দ শোনা গেল। প্রধানমন্ত্রী বললেন, হাসছেন কেনো?
হাসছি আপনার মেয়েমানুষি দেখে!
মেয়েমানুষিটা আবার কী?
ছেলেমানুষির সম পর্যায়ের শব্দ। সালাম আমি করা আর আপনি করা, দু’টোই সমান।  আস সালামু আলাইকুম আর ওয়া আলাইকুম সালাম, অর্থগত পার্থক্য নেই।
সেটা আমিও জানি কিন্তু কথাটি আমি বলেছি অন্য কারণে। যে আগে কথা বলবে সেই তো সালাম দেবে আজ আমি আপনাকে কথা বলবার জন্য ফোন করেছি। পাঁচটি বছর আপনি কি একটিবারও খোঁজ নিয়েছেন এই ছোটবোনটির?
কিছুটা অপ্রস্তুত হয় গেলেন মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী। সফট অ্যাঙ্গেল থেকে আঘাত করা হয়েছে। কঠিন কথার জবাব দেয়া সহজ, নরম কথার জবাব দেয়া কঠিন। কথা একটু ঘুরিয়ে নিলেন তিনি। বললেন, আচ্ছা আপা আপনার কণ্ঠস্বরটা আজ এমন ফ্যাকাসে লাগছে কেন? শরীর খারাপ না তো?
কিছুটা আহ্লাদি সুরে প্রধানমন্ত্রী বললেন, আর বলবেন না ভাবি। কয়েকদিন হলো টনসিলটা একটু প্রবলেম দিচ্ছে। কীভাবে যে ঠাণ্ডাটা লাগলো বুঝতেই পারিনি! এদিকে রাত থেকে এসে যোগ দিয়েছে সর্দি জ্বর। এ জন্যই গলা একটু ভাঙ্গা ভাঙ্গা লাগছে। ও কিছু না। ঠিক হয়ে যাবে। তারপর বলেন আপনার শরীর কেমন? হাটুতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?
না আপা,  ঠিকই আছে।  কিছুদিন আগেই না কিং ফাহাদে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে এলাম! এখন বেশ আছি। পেইন-টেইন একেবারেই নেই।  আপনার কানের অবস্থা কী?
আগের চেয়ে অনেক বেটার। গেল মাসে আমেরিকায় গেলাম না? তখনই চেকাপটা করিয়ে আসলাম আবার। হাসপাতালটা আবার ছেলের বাসার একদম কাছেই কি না! কত করে বললাম, ভাল আছি, দরকার নেই, কে শুনে কার কথা! জোর করে ধরে নিয়ে গেলো। পাগল ছেলে!
বিরোধীদলীয় নেত্রী বললেন, ভাল কথা মনে করেছেন আপা। আপনার সাম্প্রতিক আমেরিকা সফর নিয়ে তো নানা কথা হচ্ছে। কেউ কেউ এটাকে অকাজের বিরাট বহর নিয়ে রাষ্ট্রীয় পয়সায় হানিমুন ভ্রমণ বলেছে। আচ্ছা  এই যে সেখানে গিয়ে  যার যেমন ইচ্ছা ঘুরাঘুরি, শালি-টালি নিয়ে শপিং করে বেড়ানো,  আপনার বক্তৃতার গাট্টি রাস্তায় ফেলে দেয়া, তারপর ডগ স্কোয়ার্ড’র নিয়ে এফবিআই’র এক্সট্রা অডিনারি সতর্কতা-নজরদারি-তল্লাশি, এটা কি ঠিক হল? এতে করে কি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলো না?
আর বলবেন না ভাবি। সবাই বিদেশ সফরে যেতে চায়। আমি এখন কাকে রেখে যাই! মহা মুশকিল! এ ব্যাপারে  আপনার অভিজ্ঞতা তো আছেই। আপনার সময়ের কথা মনে করুন। তাহলেই আমার অপারগতাটা আন্দাজ করতে পারবেন। আর অই যে বললেন, আমার বক্তৃতার কপিগুলো অসতর্কতার কারণে রাস্তায় পড়ে যাওয়া—আসলে কতগুলো আমড়া কাঠের ঢেঁকিকে আমি সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলাম। এরা কতবড় দায়িত্বহীন, বুজতেই পারছেন। আমাকে যে কী বিব্রত হতে হয়েছিলো! বাদ দিন সেটা। ছেলে দু’টো কেমন আছে বলেন?
কিছু সময়ের জন্য নীরব হয়ে গেলেন বেগম খালেদা জিয়া। লম্বা একটি শ্বাস বেরিয়ে এলো তাঁর ভেতর থেকে। বললেন, বুঝতেই পারছেন ওরা কেমন থাকতে পারে। দুই বছর আমার মাসুম  ছেলে দু’টোর উপর যে নির্যাতন হয়েছে, তারপরেও যে তারা বেঁচে আছে, তাইতো আল্লাহর শুকরিয়া। আচ্ছা আপা, সত্যি করে বলেন তো, আপনি কি মনে করেন আমার ছেলেরা সে রকম কোনো অন্যায় করেছে?
কিছুটা বিব্রত হয়ে গেলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বললেন, দেখুন ভাবি, আমার মনে করা না করায় তো কিছু যায় আসে না। মামলাগুলো তো আদালতে বিচারাধীন। আদালতই সিদ্ধান্ত নিক…
তাতো ঠিকই আছে কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনা বলে একটা ব্যাপার আছে না? এই যেমন আপনারা আপনাদের সকল মামলা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বলে খারিজ করিয়ে নিলেন!
চুপ হয়ে গেলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এই প্রশ্নটি তার জন্য একটু কঠিন হয়ে গেছে!  কিছুক্ষণ নীরবে কেটে গেল। কী বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।  তারপর বললেন, আচ্ছা ভাবি, আমরা কি একটি ব্যাপারে একমত হতে পারি আজ?
কোন ব্যাপারে?
অতীত নিয়ে আমরা আর কথা বলব না। আমরা কথা বলবো ভবিষ্যৎ নিয়ে। আমাদের এখন সামনে তাকানো দরকার। ভূতের পা থাকে পেছনের দিকে তাই তারা পেছনে দৌড়ায়। আমরা মানুষ। আমরা তো আর ভূত না। কী বলেন?
প্রস্তাবটি চমৎকার, আমি রাজি। কিন্তু আপনার দলের নেতারা কি সেটা মানবে?
দেখুন, আমার দলেরটা আপনি আমার উপর ছেড়ে দেন। আপনি আপনার দলের মুখবাজদের সামাল দিয়েন খালি, ব্যস।
আপনি যদি আপনার গলাবাজদের কন্ট্রোল করে ফেলতে পারেন, তাহলে আমি আমার মুখবাজদের সামাল দিতে পারবো। আর হ্যাঁ, আপনার সৈয়দ আশরাফ সাহেবের কাছ থেকে ‘অতি আওয়ামীলীগার’দের লিস্টটাও যোগাড় করে নিয়েন। ওরাই যত নষ্টের মূল।
শেখ হাসিনা ভারি একটি নিশ্বাস ছেড়ে বললেন, কী যে করি ভাবি! সবই তো বুঝি। এই ব্যাটারা শুধু গলাবাজিতেই ওস্তাদ। সারা দেশে  ওদের কত গণ্ডা কর্মী-সমর্থক আছে, সেটাও জানি। তবুও এদের সাথে রাখতে হয়। আপনি জেনে অবাক হবেন সারা জীবনে যতবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছে, সব নির্বাচন মিলিয়ে উনার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা আড়াই হাজার! এমন নেতাকে পর্যন্ত  মন্ত্রী করতে হয়েছে। কিচ্ছু করার ছিল না। প্রগতিশীলতার বাজার তো ঠিক রাখতে হয়! আর আপনিও কি কম! আপনার সাথীসংগী কারা?  বললে তো আবার রাগ করে বসবেন! আপনার কারণেই তো আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা শান্তিমতো করতে পারছি না!
কথাটি আপনি ঠিক বলেন নি আপা। আমার জন্য না। বলেন আপনার  নিজের জন্য?
আমার নিজের জন্য?
জি আপনার নিজের জন্য। আপনি ইস্যুটিকে ঝুলিয়ে রাখতে চান নির্বাচনের জন্য। তরুণ প্রজন্মের শরীরের রক্ত গরম। তারা বিচার চায়। আর আপনি তাদের অবচেতন মনে এই ম্যাসেজটি দিতে চান যে, ‘রায় কার্যকর হোক’ চাইলে আবার আমাকে ভোট দাও। আপা আপনি পারেনও। আপনার কৌশলকে আমার হাজার সালাম।
হাহাহা! কী যে বলে না ভাবি! আর আপনি দেখি বড় আলগা থেকে পাশ কাটিয়ে গেলেন। আপনার  এখন সকাল-সন্ধ্যার বন্ধু তো কারা। কাদের নিয়েই আপনার উঠা-বসা, মিটিং-মিছিল। ভাবি আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। এটি আপনার মনে রাখা উচিত ছিলো।
যাক, শেষ পর্যন্ত আপনী স্বীকার করলেন উনি মুক্তযোদ্ধা ছিলো! থ্যাংক য়্যূ আপা। আপনার দলের কেউ কেউ তো এটাই স্বীকার করতে চায় না! বাদ দিন, কথায় কথা বাড়ে। বললে অনেক কথাই বলা যাবে। মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী প্রসঙ্গই যখন সামনে আনলেন, তখন একটি কথা না বলেও পারছি না। আমি তো কেবল মুক্তিযুদ্ধকালীন একটি সেক্টরের অভিভাবক’র স্ত্রী আর আপনি সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অভিভাবক বঙ্গবন্ধুর কন্যা। কিন্তু চাচাজানকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর ট্যাংকের উপর উঠে যারা হাত তালি দিয়েছিলো, আপনি তাদেরও মন্ত্রিত্ব দিয়ে পুরস্কৃত করলেন! আর আজ আপনি যাদেরকে ঝোলাচ্ছেন, এই এদেরকে পাশে রেখেই কিন্তু ৯৬ এ আমার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন। তাদের বড় মুরব্বীর পা ছুঁয়ে কদমবুসির কথা না হয় নাই বললাম।
কিছুটা বিব্রত ভঙ্গিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন, আপনি কিন্তু ভাবি আবারো অতীতে চলে যাচ্ছেন? আমাদের কথা ছিলো আর অতীত ঘাঁটবো না।
সরি, আপা।
আচ্ছা ঠিকাছে।
এবং সরি এগেইন।
সরি এগেইন ব্যাপারটা বুঝলাম না! এটা কেন!  শেখ হাসিনার কণ্ঠে বিস্ময়। খালেদা জিয়া বললেন,  কিছুদিন আগে সংসদে আমার দলের কিছু মাথামোটা এমপি চাচাকে (বঙ্গবন্ধু)নিয়ে জাতীয় সংসদে যে নোংরা কথাগুলো বলেছে, সত্যিই সেটা দুঃখজনক। আমি তাদের হয়ে আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।
ক্ষমা তো ভাবি আমারও চাওয়া দরকার। আমার দলের মাথামোটারাও তো ভাই সাহেবকে(জিয়াউর রহমান) নিয়ে বাজে কথা বলেছে। তাছাড়া আপনার কাছেতো এমনিতেই আমার বিশেষভাবে ক্ষমা চাওয়া দরকার।
কেনো আপা? বিশেষভাবে ক্ষমা চাওয়া দরকার কেনো?
কারণ আপনাকে আপনার চল্লিশ বছরের বসত বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছি! সরি ভাবি। বুঝতে পারছি কাজটা ঠিক হয়নি কিন্তু দলের ভেতর আমিও চাপে ছিলাম।
না আপা, এ নিয়ে আপনার হীনমন্যতায় ভোগার কোনো কারণ নেই। আমারই উচিত ছিলো বাড়িটি আরো আগেই ছেড়ে দেয়া। তাছাড়া বিশেষভাবে ক্ষমা তো আমারও চাওয়া দরকার।
আপনি আবার কী করলেন?
কারণ, গণভবন থেকে আমিও আপনাকে বের করে দিলাম দিয়েছিলান না! কী যে হয়েছিলো তখন! আসলে হয়েছে কি, আমার উপদেষ্টারাই মাথাটা আমার গুলিয়ে ফেলছিলো তখন!
উপদেষ্টাদের কথা বলবেন না ভাবি। আমার হযরতগণের অবস্থা দেখছেন না? খালি উল্টা-পাল্টা বুদ্ধি দেয়! কেউ কেউ আবার দেশের খায় কিন্তু অন্য দেশের গান গায়। চিন্তা করেন অবস্থা। যাই হোক, কাজের কথায় আসি। আপনি কি জানেন এই যে আজ আমরা দু’জনে ফোনে কথা বলছি, এ কারণে দেশের মানুষ কত আনন্দ পাচ্ছে! এদেশের মানুষগুলো কিন্তু খুব অল্পতেই তুষ্ট হয়ে যায়।
দেশের মানুষ কিন্তু আরেকটি খবর শুনেও খুশি হয়েছিলো আপা।
কোন্ খবর?  শেখ হাসিনার কণ্ঠে বিস্ময়! খালেদা জিয়া বললেন, কেন! আপনার মনে সেই ফখরুদ্দিন সরকার আমরা দু’জনকে গ্রেফতার করে যখন বিশেষ কারাগারে নিক্ষেপ করলো, আমরা ছিলাম পাশাপাশি রুমে। আপনি শখ করে রান্না করতেন মাঝে-মধ্যে। আপনি আপনার নিজ হাতে রান্না করা খাবার টিফিন কারিয়ারে করে আমার জন্য পাঠাতেন। যাই বলেন আপা, আপনার হাতের রান্না কিন্তু অসাধারণ! প্রশংসা না করে পারছি না।
থ্যাংক য়্যূ ভাবি।
প্রশংসা শুনে খুশি হলেন শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া বললেন, বাইরে এসে এই ঘটনা যখন আপনি মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করলেন, কী খুশি হলো মানুষ? যেনো আমরা নই, তারাই খেয়েছিলো!
হ্যাঁ, মনে আছে আমার। আচ্ছা ভাবি, আপনি কি আবারো আমার হাতের রান্নাকরা খাবার খেতে চান? টিফিন কেরিয়ারে করে?
ঠিক বুঝলাম না…
না বোঝার তো কথা না। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই তো আমাদের দু’জনকে শেকলবন্দী করেছিলো। তাহলে আপনি আবার কোন বিবেকে তত্ত্বাবধায়কের কথা বলেন!
হিহিহি হিহিহি হিহিহি
হাসছেন কেনো?
হাসছি কারণ কৃষ্ণ করলে লীলাখেলা অন্যে করলে…
মানে কি?
আমি যখন বলেছিলাম, দরকার নেই তত্ত্বাবধায়কের, তখন কী করেছিলেন মনে আছে? এখন রিমোট হাতে রেখে এভাবে বললে তো আপা কাজ হবে না!
হায়রে! খালি অতীত টানেরে!! আচ্ছা যান। আপনার কথাই থাকুক। আমি না হয় পদত্যাগ করব। এখন বলুন রাষ্ট্রপতি না স্পিকার, কাকে আপনার পছন্দ?
মানে?
মানে দু’জনের মধ্যে কাকে আপনি নির্বাচন-কালীন সরকারের প্রধান হিশেবে বেশি পছন্দ করবেন?
হাহ হাহ হাহ!
আমি কিন্তু সিরিয়াস আপা। সত্যি বলছি। আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি। রাষ্ট্রপতি এবং স্পিকার দু’জনেই তো নিরপেক্ষ।  আপনি যাকে বলবেন, তার কাছেই আমি ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি আছি।
আমি জানতাম আপা। আমি তখনই আন্দাজ করেছিলাম এটা। সাধে কি আর বলেছি আপনার রাজনৈতিক কৌশলকে আমার হাজার সালাম! স্পিকারকে আপনি যেদিন রাষ্ট্রপতি বানান, সেদিনই আমার কাছে মনে হয়েছিলো এমন কিছুই আপনার মাথায় খেলছে। আপনার দলের সাত বারের এমপি তিনি। মানুষ হিশেবে তিনি যতই সজ্জন হোন, তিনি যে রক্তমাংসে আওয়ামীলীগার, এটা কি আপনি অস্বীকার করতে পারবেন?
আচ্ছা ঠিকাছে। চলুন আলোচনার টেবিলে বসি। বসেই আলাপ করা যাবে। সব কথা ফোনে হয় না। আচ্ছা সামনের সোমবারে চলে আসুন না?  দু’বোন মিলে একসাথে চারটা ডালভাত খাবো। আমি নিজ হাতে রান্না করব আপনার অন্য। আমার রান্নার হাত যে ভাল, সেই সার্টিফিকেট তো আপনারই দেয়া। দাওয়াত গ্রহণ করুন। বলেন কবুল
দাওয়াত কবুল করলাম। তিনদিনের হরতালটা শেষ হোক, তার পরেই…
আবার হরতালের দরকার কি ভাবি! ওটা প্রত্যাহার করে নিন না! আমরা তো সমাধানের পথেই হাঁটছি। তাছাড়া একদিনের হরতালে দেশের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, সেটা তো জানেনই!
এ কথা আপনি বলছেন আপা? ১৭৩ দিন হরতালের কথা কি…
আপনি আবারো অতীত টানছেন কিন্তু…
কী করব বলেন! আমরা অতীত ছাড়তে চাইলেও অতীত তো আমাদের ছাড়বে না। সমস্যা নাই। আপনি আপনার পুলিশকে কন্ট্রোলে রাখবেন শুধু, তাহলেই আর ঝামেলা নেই। ভালোয় ভালোয় হরতালটা শেষ করে নিই, তারপর আপনার বাসায় ডালভাত খেতে চলে আসব। সাথে লেবু আর কয়েকটা শুকনো মরিচ ভেজে রাখবেন।
আচ্ছা ঠিকাছে। কী আর করা! করুন যা ভাল মনে করেন। তাহলে এখন ফোন রাখছি ভাবি। ভালো থাকবেন। খোদা হাফিজ।
অকে আপা, আপনিও ভালো থাকবেন। খোদা হাফিজ।
………… একটি কাল্পনিক চিত্র। বাস্তবতার সাথে মিল থাকলে ভাল, না থাকলেও ক্ষতি নেই!

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button