নিউ ইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম ও ভারত-আমেরিকান মেয়র

মামদানির বিজয় ফিলিস্তিনপন্থী রাজনীতির জন্য অনুপ্রেরণা

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি শহরের জন্য সাহসী পরিকল্পনা করছেন। তিনি সরকারি মালিকানাধীন মুদি দোকান চালু করতে চান, আরও আবাসন তৈরি করতে চান, বাস ভাড়া ফ্রি করতে চান এবং ভর্তুকিপ্রাপ্ত ভাড়াটিয়াদের জন্য ভাড়া স্থগিত রাখতে চান। কিন্তু মঙ্গলবারের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির আগে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা ও গণমাধ্যম তার এই পরিকল্পনাগুলোর চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগ দিয়েছে তার ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত বিষয়ে মতামতের দিকে। মামদানি একজন প্রখর ফিলিস্তিনপন্থী, যিনি ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা করেছেন এবং গাজায় ইসরায়েলি হামলাকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন।
জয়লাভ ও সম্ভাব্য মেয়র নির্বাচিত হওয়া:
মামদানি তার অবস্থান থেকে পিছু হটেননি, এবং তিনি জয়ী হয়েছেন, প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে হারিয়ে যিনি প্রচুর সমর্থন এবং রেকর্ড পরিমাণে তহবিল পেয়েছিলেন।
তার সমর্থকেরা বলছেন, এই জয় মার্কিন রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে, যা বামপন্থী নীতিমালার ও ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থানের নির্বাচনযোগ্যতা প্রমাণ করে।
জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস এর মুখপাত্র উসামাহ আন্দরাবি বলেন, “এটা ঐতিহাসিক। সত্যিকার প্রগতিশীলদের জন্য এখন সীমা নেই, যারা ধনকুবের ও কর্পোরেট সুপার প্যাকের বিরুদ্ধে শ্রমজীবী শ্রেণিকে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রস্তুত।”
প্রায় সমস্ত ভোট গণনা হয়ে যাওয়ার পর মামদানি কুয়োমোর থেকে সাত শতাংশেরও বেশি ব্যবধানে এগিয়ে আছেন এবং তার জয় নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক একটি ডেমোক্রেট-প্রধান শহর, তাই ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মামদানির নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করা অনেকটাই নিশ্চিত।
তিনি নিজের অবস্থানে অটল ছিলেন:
ডিজিটাল মিডিয়ায় পারদর্শী, ক্যারিশমাটিক ও সহজভাবে জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারা ৩৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ ভাইরাল ভিডিও এবং রাস্তায় প্রচারের মাধ্যমে তার সমর্থন তৈরি করেন।
২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর, মামদানি ট্রাম্প-সমর্থক এবং নিরপেক্ষ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন, যারা প্রচলিত রাজনীতিতে বিরক্ত ছিলেন। তাদের সামনে তিনি নিজের প্ল্যাটফর্ম তুলে ধরেন। কিছুজন বলেন, তারা মেয়র হিসেবে তাকে ভোট দেবেন।
সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের সমাজবিজ্ঞানী হেবা গোয়ায়েদ বলেন, “ফিলিস্তিন ইস্যুতে তার অবস্থানে তিনি যে পিছু হটেননি, সেটাই বড় বিষয়। বহু তরুণ এই অবস্থানের কারণে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।”
ডেভিড বনাম গোলিয়াথের লড়াই:
কুয়োমোর পরিচিতি, রাজনীতিক পরিবার, প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনসহ জাতীয় নেতাদের সমর্থন ছিল। মামদানির পাশে ছিলেন ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকা’র গ্রাসরুট স্তরের কর্মীরা।
একজন মুসলিম, ব্রাউন ও তরুণ প্রগতিশীল হিসেবে মামদানির এই বিজয়কে অনেকে “পুরনো বনাম নতুন রাজনীতির” প্রতীক বলে মনে করছেন।
ইসরায়েল ইস্যুকে কেন্দ্র করেই কুয়োমোর প্রচার:
মামদানি গাজার যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিয়ে আগেই সরব ছিলেন, এমনকি হোয়াইট হাউসের সামনে অনশন করেছিলেন। তবে তার প্রচার ছিল মূলত স্থানীয় ইস্যুতে।
তবুও কুয়োমো বারবার মামদানির ইসরায়েলবিরোধী অবস্থানকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি এমনকি বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ বা ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলার মতো ভাষা যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের ওপর হামলাকে উৎসাহিত করছে।
প্রচারাভিযানে অর্থ ও বিরোধিতা:
মামদানির বিরুদ্ধে চালানো একটি সুপার প্যাক প্রচারাভিযানে বিলিয়নেয়ার বিল অ্যাকম্যান ৫ লাখ ডলার ও প্রাক্তন মেয়র মাইক ব্লুমবার্গ ৮ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেন।
মিডিয়াও মামদানির কাছে বারবার জানতে চেয়েছে: “ইসরায়েলের একটি ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে থাকার অধিকার আছে কি না”, “আপনি মেয়র হলে ইসরায়েল সফর করবেন কি না?”
একটি মোড় ঘোরানো মুহূর্ত:
জিউয়িশ ভয়েস ফর পীস অ্যাকশন-এর রাজনৈতিক পরিচালক বেথ মিলার বলেন, “কুয়োমো ভেবেছিলেন ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান মামদানির দুর্বলতা হবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা ছিল তার শক্তি।”
পিউ-এর জরিপে দেখা যায়, ৬৯% ডেমোক্র্যাট ইসরায়েলের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।
জাস্টিস ডেমোক্রেটস-এর আন্দরাবি বলেন, এআইপিএসি বরাবরই বলে ইসরায়েলকে সমর্থন করা ভালো নীতি ও রাজনীতি। এখন এটা স্পষ্ট—ইসরায়েলি দখলদারতন্ত্রকে সমর্থন করা খারাপ নীতি এবং খারাপ রাজনীতি।” -আলি হার্ব (আলি হার্ব যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক একজন লেখক। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি, আরব-আমেরিকান বিষয়, নাগরিক অধিকার ও রাজনীতি নিয়ে প্রতিবেদন করেন।)

[এই প্রবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব এবং দা সানরাইজ টুডে‘র সম্পাদকীয় নীতির সাথে তা প্রতিফলিত হয় না।]

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button