এরদোগান তুরস্ককে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বৈশ্বিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে

বৃটিশ ভূগোলবিদ হেলফোর্ড মেকিন্ডার বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ‘হার্টলেন্ড থিওরী’ প্রদান করেন। তার মতবাদ অনুসারে ইউরেশিয়ার অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ডে অবস্থিত কথিত হার্টলেন্ড বা হৃদয়ভূমি ভূরাজনীতির চূড়ান্ত চাবিকাঠি ধারণ করে আছে।
আধুনিক পাশ্চাত্যের উত্থানের ফলে বৈশ্বিক কেন্দ্র পশ্চিমে স্থানান্তরিত হয়। এভাবে পশ্চিমা নেতৃত্ব ২০০ বছর স্থায়ী হয়। কিন্তু গত ২ দশকের ইউরোপ মহাদেশ বৈশ্বিক কূটনীতে তাদের নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারেনি। বরং তুরস্ক একটি শক্তিশালী ভূরাজনৈতিক অবস্থান অর্জনে সক্ষম হয় আর এক্ষেত্রে তুরস্কের ক্যারিশমেটিক নেতা রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের ভূমিকা দিবালোকের মত সমুজ্জ্বল।
সাম্প্রতিক সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলন এই বিষয়টি স্পষ্ট করে তোলে—যেখানে স্বাগতিক দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া কেবল প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এই বৈঠকটি দেখিয়ে দিয়েছে যে, নিকট প্রাচ্য ও তুরস্ক ঘিরে কৌশলগত অঞ্চলে এরদোয়ানের মত প্রভাবশালী নেতৃত্ব আর খুব একটা দেখা যায় না।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ক্ষেত্রেও,
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে বড় একটি জোট গঠন করলেও, রাশিয়া কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু তুরস্ক, নেটো সদস্য হয়েও, সব পক্ষের সঙ্গে উন্মুক্ত যোগাযোগ ও ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অমূল্য।
এর সবচেয়ে প্রতীকী মুহূর্তটি আসে ২০২২ সালের ডলমাবাহচে আলোচনায়—এরদোয়ানের বক্তব্যের পরে, যুদ্ধরত ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা একসাথে দাঁড়িয়ে করতালি দেন—এটি আধুনিক কূটনীতির ইতিহাসে প্রায় এক কিংবদন্তির মতো ঘটনা। আজ আফ্রিকার বহু ঔপনিবেশিক-বিরোধী আন্দোলনে তুরস্ক সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও, পশ্চিমা ঔপনিবেশিক প্রভাবের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো নেতারা প্রায়ই এরদোয়ানের স্বাধীনতা ও নেতৃত্বের মনোভাবকে অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেন।
প্রায় দুই দশক আগে, তুরস্ক তার নিজস্ব খোলস ভাঙতে শুরু করে। নেটো সদস্যপদ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও, তুরস্ক তার পররাষ্ট্র নীতিকে স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে পরিচালনার পথ বেছে নেয়—পাশাপাশি পশ্চিমা সম্পর্কগুলোও বজায় রাখে।
তুরস্ককে একটি নির্ভরশীল, উপগ্রহ-রাষ্ট্রে পরিণত করার পশ্চিমা আকাঙ্ক্ষা তখন ক্ষীণ হয়ে পড়ে, যখন তুরস্ক অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও সামরিকভাবে আরও শক্তিশালী হতে থাকে—তা অনেকসময় পশ্চিমা সহায়তা ছাড়াই। এই প্রক্রিয়ায় তুরস্ক আজ অনেক অনুন্নত দেশের জন্য উন্নয়নের একটি সম্ভাব্য মডেল হয়ে উঠেছে।
তুরস্কের উত্থানের প্রধান চালিকাশক্তি হলো এর ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। কিন্তু গত এক দশকে এক অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটে—তুরস্ক তার শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে দেশীয়ভাবে তৈরি প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত করতে শুরু করে। বর্তমানে, তাদের রয়েছে বিশ্বের অন্যতম উন্নত এআই-চালিত ড্রোন ও বিমান বহর। শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ও অত্যাধুনিক দেশীয় প্রযুক্তির এই সংমিশ্রণ তুরস্কের কূটনৈতিক প্রভাব বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। -ইহসান আকতাস

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button