তদন্ত কর্মকর্তা

‘বাবরি মসজিদ ভাঙা অপরাধ ছিল, বিচার এক দিন হবেই’

ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভাঙা অপরাধ ছিল। এর বিচার এক দিন হবেই বলে জানালেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মনমোহন সিংহ লিবেরহান। তিনি ছিলেন ওই ঘটনার তদন্তে গঠিত লিবেরহান কমিশনের প্রধান। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় বিতর্কিত রামমন্দির আগামীকাল উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার আগেই সংবাদমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এই মন্তব্য করলেন লিবেরহান।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার ১০ দিনের মাথাতেই ওই ঘটনার তদন্তে লিবেরহান কমিশন তৈরি হয়। বিচারপতি লিবেরহান তখন হাইকোর্টে কর্মরত। অবসরের পরে পুরোদমে কাজ শুরু করেন। আগেই বলেছেন, কোনও সরকারের থেকেই তিনি সাহায্য পাননি। ১৭ বছর পরে, ২০০৯ সালে তার রিপোর্ট জমা পড়ে। লিবেরহান তার রিপোর্টে বলেছিলেন, ‘মসজিদে হামলা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। আরএসএস ক্যাডারদের বিশেষ দলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ঘটনাস্থলে নেতারা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।’
সুপ্রিম কোর্টে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ অযোধ্যায় রামমন্দিরের পক্ষে রায় দিলেও বাবরি মসজিদে হামলাকে লিবেরহানের মতোই ‘পরিকল্পিত’ বলেই আখ্যা দিয়েছিল। আদভাণী-যোশী আদালতে নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। তবে লিবেরহান তার রিপোর্টে বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবারের নেতাদেরই দোষী সাব্যস্ত করে বলেছিলেন, ‘শুধু ক্ষমতার লোভে বিজেপি-আরএসএস-বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-শিবসেনা-বজরং দলের বেশ কিছু নেতা এগিয়ে এসেছিলেন। তারা মতাদর্শ দ্বারা চালিত হননি।’ ভারতের সুপ্রিম কোর্টও মসজিদ ভাঙার ঘটনাকে ‘আইনের শাসনের গুরুতর লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দেয়।
লালকৃষ্ণ আদভাণী, মুরলীমনোহর জোশীর মতো রামমন্দির আন্দোলনের জড়িত নেতারা বাবরি মসজিদ ভাঙায় সরাসরি ইন্ধন দিয়েছিলেন। মামলায় (২৭ বছরের পুরনো) লখনউয়ের বিশেষ আদালতে সম্প্রতি সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা। দুই প্রবীণ নেতাই আদালতে দাবি করেছেন, ‘তারা নির্দোষ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে তাদের এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’ অপরাধ স্বীকার না করলেও তারা যে প্রকাশ্যে জড়িত ছিলেন, সেটা তৎকালীন প্রায় সব সংবাদমাধ্যমেই জানা যায়। লিবেরহান এখনও বলছেন, ‘মসজিদ ভাঙা অন্যায় হয়েছিল, তা ছিল অপরাধ।’ ৮২ বছরের অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতির মন্তব্য, ‘বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিচার এক দিন হবেই।’ বিচারব্যবস্থার উপরে পূর্ণ আস্থা জানিয়ে তার মত, ‘বাবরি মসজিদ ভাঙার মামলা স্বাধীন ভাবে চলবে। সুপ্রিম কোর্টের রামমন্দিরের পক্ষে রায়, রামমন্দিরের উদ্বোধন ওই মামলার উপরে প্রভাব ফেলবে না।’ তবে রামমন্দির তৈরির কাজ শুরু হওয়ায় তার কোনও অসন্তোষ নেই। তিনি বলেন, ‘এক দিন না এক দিন ফয়সালা হতেই হত। সুপ্রিম কোর্টই মন্দিরের পক্ষে রায় দিয়েছে।’ তবে রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখবেন কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তেমন আগ্রহী নই।’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button