সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আর নেই

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান আর নেই। আজ সোমবার (১৫ জুন) বাংলাদেশ সময় ভোর ৩টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬৭ বছর। ঢাকায় কামরানের সাথে থাকা তার ছোট ভাই মাসুক উদ্দিনের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মহানগর যুবলীগ নেতা মেহেদী কাবুল। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে সিলেট থেকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো।

বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ঘনিষ্টজন সিলেট সিটি করপোরেশনের উপ সহকারী প্রকৌশলী আবুল ফজল খোকন জানান, রবিবার রাত ১১ টার দিকে তাঁর বুকের ব্যথা শুরু হয়। ক্রমে তা বাড়তে থাকে। রাত ৩ দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৭০ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি কামরানের। ধীরে ধীরে আওয়ামী পরিবারের একজন ঝানু রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হন তিনি।
১৯৫৩ সালে জন্ম নেয়া বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ১৯৭৩ সালে ছিলেন ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র। ওই সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট শহরে তৎকালীন সময়ে ৫টি ওয়ার্ড ছিল, ৩নং তোপখানা ওয়ার্ড থেকে নির্বাচনে কমিশনার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কামরান। এরপর ১৯৭৭ সালে ওয়ার্ড কমিশনার পদে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হন কামরান। এই মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান কামরান। বেশ কিছুদিন পর দেশে ফিরে ১৯৮৯ সালে আবারও ওয়ার্ড কমিশনার পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন তিনি।
১৯৯৫ সালে সিলেট পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।সিলেট পৌরসভা থেকে ২০০১ সালের ৯ এপ্রিল সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন। কামরান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মেয়র পদে। ওই সময় নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নেয়ার সুযোগ না থাকায় ‘নাগরিক কমিটি’র ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। বিএনপি নেতা এম এ হককে ২২ হাজার ৫৩১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের পর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৬ এপ্রিল গ্রেফতার হন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এক মাস কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে ২৮ মে ফের গ্রেফতার হন তিনি। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট সিসিকের দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কামরান তখন কারাগারে। সেবারও তিনি নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। বিএনপি নেতা আ ফ ম কামালকে প্রায় ৮৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এই নির্বাচনে কামরানের ভোট সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৪০৯। বিপরীতে কামাল পেয়েছিলেন মাত্র ৩২ হাজার ৯৭ ভোট। এছাড়া বিএনপি নেতা এম এ হক ২৩ হাজার ৪৮৭ ভোট।
সিসিকের তৃতীয় ও চতুর্থ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে ও ২০১৮ সালে। নানা কারনে অল্প ভোটে পরাজিত হন। কিন্তু থেমে থাকেননি রাজনীতি ও ভোটের ময়দান থেকে। গত জাতীয় নির্বাচনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে।
বিভিন্ন সময়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন কামরান। ২০০২ সাল থেকে টানা ১৭ বছর তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আজ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁর বর্ণাঢ্যময় রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button