ব্যাকটেরিয়ার ভাষা আবিষ্কারক ফাতিমা আলজাহরা

মুহম্মদ আবদুল বাতেন: ফাতিমা আলজাহরা আলাত্রাকসি। ডেনামার্কের পদার্থ বিজ্ঞানী, ন্যানোটেকনোলজিস্ট, বায়োমেডিসিন ও মলিকুলার বিজ্ঞানী। যিনি প্রথম ব্যাকটেরিয়ার ভাষা উদ্ধার করলেন।
মানুষের শরীরে মিলিয়ন মিলিয়ন ব্যাকটেরিয়ার আবাসস্থল। এই ব্যাকটেরিয়া যেমন শরীরের জন্য জরুরি তেমন বিপদজনকও। ব্যাকটেরিয়ার যখন নিজেদের মধ্যে কমান্ড নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে তখনই শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভেঙ্গে নিজেরা কলোনি তৈরি করে, যা শরীরের রোগব্যাধির জন্ম দেয়, ইনফেকশন ছড়িয়ে দেয়।
ফাতিমা তাঁর গবেষণায় নতুন একটি সেন্সর উদ্ভাবন করেছেন, যেটি ব্যাকটেরিয়ার নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ভাষা পাঠ করতে পারে, ব্যাকটেরিয়া যখন বিপদজনক হয়ে ওঠে তখন তারা পরস্পর বার্তা পাঠায়, তারা সাড়া দেয় যে আমরাও আছি, তুমি একা নও। এরপর তারা সম্মিলিত কলোনি তৈরি করে। এটিই শরীরে ইনফেকশনের কারণ। ফাতিমার উদ্ভাবিত সেন্সর যন্ত্র ব্যাকটেরিয়ার মলিকুলার বার্তা বা কথাবার্তা ট্যাকিং করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তাদের কলোনি তৈরির প্রক্রিয়া ভন্ডুল করে দিতে পারবে।ব্যাকটেরিয়ার কোন সিগনাল বিপদজনক সেটা এই সেন্সর নির্ভুলভাবে সনাক্ত করতে সক্ষম।

বর্তমানে ব্যাকটেরিরার মুভমেন্ট পরীক্ষা করে বুঝতে তিনদিন সময় লাগে, তবে ফাতিমার এই সেন্সরের জন্য তা সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ডের ব্যাপার। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য এই আবিষ্কার এই মূহুর্তে একটি বিশাল ঘটনা। আমরা এখন এন্টিবায়োটিকের ওপর নির্ভরশীল, কিন্ত এটি আর কার্যকর থাকছে। ব্যাকটেরিয়া সুপারবাগে পরিণত হচ্ছে। এন্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা এই সময়ে সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয়। ফাতিমার এই আবিষ্কার এন্টিবায়োটিকের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহনের পথ তৈরি করবে এবং ইনফেকশন রোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
ফাতিমা জানান, সেন্সরটি ইউজার ফ্রেন্ডলি করার জন্য ডাক্তারদের নিয়ে কাজ করছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, বর্তমানে এন্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতায় প্রতিবছর ৭ লাখ লোকের মৃত্যু হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাত এই সংখ্যা দাঁড়াবে ১০ মিলিয়ন।
এক রিপোর্টে ফাতিমার আবিষ্কার সম্পর্কে বলা হয়, Revolutionary test that ‘can listen to bacteria communicate and diagnose infections within 30 seconds could curb antibiotic resistance ফাতিমা ব্যাকটেরিয়ার ভাষা সম্পর্কে বলেছেন, এটি ‘ব্যাকটেরিয়ার হুইসপারিং’।
ফাতিমা টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ডেনমার্ক থেকে ডক্টরেট করেছেন। বায়োটেকনোলজি, বায়োমেডিসিন ও কমিকুলার সায়েন্সের ওপর গবেষণা করছেন। অনেক আলোচিত বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। ‘PreDiagnose’ নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি পরিচালনা করছেন।
ফাতিমা রাতের পর রাত গবেষণায় নিয়োজিত থাকতেন, তাঁর দুই মেয়ে একজনের বয়স তিন মাস আরেকজনের বয়স চার বছর। মেয়েরা ঘুমিয়ে পড়ার পর তিনি গবেষণা কাজ করছিলেন, এমনি একদিন তিনি ব্যাকটেরিয়ার হুইসফারিং ধরে ফেলেন।নিজে তার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৯বছর বয়সী এই গবেষক বলেন, ”I wish that there was a parallel world and I could travel around in time like Harry Potter and Hermione”। ফাতিমার স্বামী জাফর নুরী ইউনিভার্সিটি অব ডেনমার্ক থেকে ডক্টরেট। ফাতিমার জন্ম কুয়েতে,১৯৮৯ সালের ২ এপ্রিল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button