অকেজো ঘড়িতেই যুগ পার

কাটা নেই, ভেতর থেকে মেশিনটাও খুলে নেওয়া হয়েছে, শুধু ঘড়ির ডাইসটা অর্থহীন বসে আছে সুউচ্চ মিনারের উপর

আতিকুর রহমান নগরী: কাটা নেই, ভেতর থেকে মেশিনটাও খুলে নেওয়া হয়েছে। শুধু ঘড়ির ডাইসটা অর্থহীন বসে আছে সুউচ্চ মিনারের উপর। এভাবেই দিন, সপ্তাহ, বছর গেলেও মেরামত হচ্ছে না। দীর্ঘ এক যুগের মতো সময় ধরে নগরবাসী মাথা উঁচু করে ঘড়িরটির দিকে তাকিয়ে সময়ের বার্তা না পাওয়াতে ধীরে ধীরে দরগাহ মিনারের ঘড়ির কথা ভুলতে শুরু করেছেন। মিনারের সৌন্দর্য্যে সংযুক্ত করা ঘড়ির দিকে এখন আরা পর্যটকরা চোখ দেন না।

মুঘল আমলের অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মসজিদ। সুউচ্চ মিনার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটি ইতিহাসের স্মারক। বাংলার সুলতান আবু মুজাফ্ফর ইউসুফ শাহের আমলে মসজিদ নির্মাণের কথা ইতিহাসে পাওয়া গেলেও মিনার কিংবা ঘড়ির ইতিবৃত্ত পাওয়া যায় নি।

শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুউচ্চ মিনারের ঘড়িটি অকেজো। ক্যামেরায় মিনারের ছবি ধারণ করার সময় স্থানীয়দের পরষ্পর কথা বলতে শুনা যায়, ৪/৫ বছর থেকে ঘড়িটি নষ্ট কেউ দেখে না। মেরামতের কথা কেউ ভাবে না। তবে কত বছর থেকে ঘড়িটি অকেজো পড়ে আছে তা খোদ কমিটির দায়িত্বশীলরাও জানেন না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘ ১১বছর থেকে অকেজো পড়ে আছে ঘড়িটি। দেড় থেকে দুই বছর আগে মসজিদ কমিটির একটি সভায় ঘড়ি মেরামতের প্রস্তাব উঠেছিল। মেরামত ব্যয় বেশি দেখিয়ে কমিটি সেই প্রস্তাবটি আমলে নেননি।

স্থানীয়দের অভিযোগ সরকার প্রধানসহ কত শত ভিআইপি, ভি-ভিআইপিদের সমাগম ঘটে দরগাহ’র এই মসজিদে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এখানে এসে দোয়া নিয়ে যান। দুঃখের বিষয় কারো নজর এদিকে কি একবারও পড়ে না। তবে সচেতন নাগরিকদের দাবি কমিটির খামখেয়ালি আর উদ্যোগের অভাবে ঐতিহ্যের স্মারকে মরিচীকার দাগ পড়ছে।

দরগাহ মসজিদ নিয়ে ঘাটাঘাটি করে উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে জানা যায়, বাংলার সুলতান আবু মুজাফ্ফর ইউসুফ শাহের মন্ত্রী মজলিশে আতার আমলে ১৪০০ সালে দরগাহ চত্বরে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ১৭৪৪ সালে বাহরাম খাঁ ফৌজদারের সময় এটি পুনর্নির্মিত হয়। বর্তমানে এটি সিলেট শহরের অন্যতম একটি মসজিদ।

দরগাহ মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার মুফতি কয়েস বলেন, কতদিন থেকে ঘড়িটি অকেজো তা সঠিক বলা যাবে না। এমনকি সর্বশেষ কবে ঘড়িটি মেরামত করা হয়েছিল তাও জানা নেই কমিটির এই দায়িত্বশীলের।

এদিকে দরগাহ মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা হুজাইফা হুসাইন চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি ২০০৮ ইংরেজি থেকে ইমামতির দায়িত্বে যোগদান করছি। সেই থেকে দেখে আসছি ঘড়িটি বিকল। ঘড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিতে দেড়/দুই বছর আগে মসজিদ কমিটির একটি সভায় তিনি প্রস্তাবও দিয়েছিলেন বলে তিনি জানান।

তবে কী কারণে ঘড়ি মেরামত হচ্ছে না জানতে চাইলে মাওলানা হুজাইফা বলেন, ঘড়ি মেরামতে দেড়/দুই লাখ টাকা ব্যয় হবে। সেই অর্থ যোগান দিতে অক্ষমতার জন্যই মেরামত হচ্ছে না। এব্যাপারে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী মুফতি হাসানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button