ঢামেক মর্গে অজ্ঞাত আর নবজাতকের লাশের স্তূপ

dead-bodyবাতাসে ভেসে আসছে উৎকট গন্ধ। আর এ দুর্গন্ধের মধ্যেই প্রতিদিন নাকে কাপড় কিংবা রুমাল চেপে বসে থাকেন এখানে ময়নাতদন্ত করাতে নিয়ে আসা লাশের স্বজনরা।
এমন উৎকট গন্ধ কিসের- এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গ সহকারী রামু চন্দ্র দাসের সরল উত্তর, লাশের। মর্গের ভেতরে স্তূপ হয়ে আছে অজ্ঞাতদের আর নবজাতকের লাশ। ২১ দিন ধরে এসব লাশ নেয়নি আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম।
ফলে এ মর্গে জমেছে নবজাতকসহ ৬৫টি লাশ। লাশগুলো এতটাই বিকৃত হচ্ছে যে, শনাক্ত করার কোনো উপায় থাকছে না। অবশেষে শনিবার সন্ধ্যায় ১০টি লাশ নিয়ে গেছে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। দাফনের জায়গাসহ ব্যবস্থা না থাকায় মর্গ থেকে লাশ নিতে পারছে না বলে জানায় আঞ্জুমানে মফিদুল কর্তৃপক্ষ।
শনিবার ঢামেক মর্গে দেখা গেছে, সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় মর্গের ভেতরের একটি কক্ষে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে মৃতদেহগুলো। গাদাগাদি করে একটির ওপর আরেকটি লাশ রাখা হয়েছে। পচা-গলা মৃতদেহে ভন ভন করছে মাছি। কোনো কোনো লাশে পোকা ধরেছে।
মর্গ সূত্র জানায়, প্রতিদিনই এ মর্গে আসছে একাধিক অজ্ঞাত লাশ। হয় সড়ক দুর্ঘটনায়, নতুবা ট্রেনে কাটা পড়ে কিংবা অন্য কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনার শিকার হয়ে। ময়নাতদন্তের পর এসব লাশ মর্গে রেখে দেয়া হয়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর তা আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হতো। কিন্তু আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম এখন নিয়মিত লাশ গ্রহণ না করায় রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন মর্গ সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া ঢামেক হাসপাতালে জন্ম নেয়া মৃত নবজাতকের লাশও পাঠানো হয় এ মর্গে।
ঢামেক মর্গের ইনচার্জ সেকান্দর আলী বলেন, ৭ অক্টোবর লাশ নিয়েছিল আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম। এরপর থেকে শনিবার পর্যন্ত ঢামেক মর্গে ৩৩টি অজ্ঞাত মরদেহ জমে আছে। আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রাখা হয় ৩২টি নবজাতকের মৃতদেহ। সব মিলিয়ে ৬৫টি মৃতদেহ জমেছে এ মর্গে।
মর্গ সূত্র জানায়, ৫টি ফ্রিজের মধ্যে একটি মেরামত হয়েছে। বাকিগুলো মেরামতের কাজ চলছে। সব ফ্রিজ সচল থাকলেও মাত্র ২০টি মৃতদেহ ফ্রিজে রাখা যাবে। আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম লাশ না নিলে এভাবেই মেঝেতে লাশ রাখতে হবে। আর এভাবেই দুর্গন্ধ ছড়াবে।
ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ডা. প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, আসলে পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মর্গে জমে থাকা লাশগুলো পচে-গলে নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দুর্গন্ধে মর্গের কাছে থাকা এনাটমি বিভাগের শিক্ষার্থীরাও টিকতে পারছে না।
আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের নির্বাহী পরিচালক ইলিয়াস আহমেদ বলেন, আমরা জুরাইন কবরস্থানে বেওয়ারিশ লাশ দাফন করতাম। সেখানে বরাদ্দ করা জায়গা আগেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে জুরাইন কবরস্থানে এখন আর দাফন করা যাচ্ছে না। এরপর মাস খানেক আগে মোহাম্মদপুরের বছিলায় কবরস্থানের জন্য ৭ একর জায়গা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এখনও ওই কবরস্থানের জন্য বাঁশ, চাটাই ও শ্রমিকের বেতনসহ লাশ দাফনের বরাদ্দ দেয়া হয়নি। যে কারণে আমরা সেখানে দাফন করতে পারছি না। জুরাইন কবরস্থান সংশ্লিষ্টদের অনেক অনুরোধের পর তারা ১০টি মৃতদেহ দাফনের জায়গা দিতে রাজি হয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button