আলী জ্যাকোর বক্সিং টিমে বাংলাদেশী সুর চাকমা

Alijackoবাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের উদীয়মান বক্সার সুর চাকমা লন্ডনে আলী জ্যাকোর বক্সিং টিমে যোগ দিয়েছেন। বক্সিং প্রশিক্ষণের জন্য প্রসিদ্ধ লন্ডনের পিকক জিমে সুর চাকমা নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশি উদীয়মান এই বক্সারের লন্ডন আগমন ও প্রশিক্ষণ সম্পর্কে অবহিত করতে গত ১৯ আগস্ট বুধবার ক্যানিং টাউনের পিকক জিমে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে টিম আলী জ্যাকো। জ্যাকোর টিমে লুইচ নামে আরেক ১৬ বছর বয়সী আরেক বক্সার রয়েছে। লুইস হুন্ডোরাসের বংশোদ্ভূত। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিক পিকক জিমে চাকমার প্রশিক্ষণ দেখানো হয়। পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় তার ট্র্ইেনারদের সাথে। ট্রেইনার মার্টিন ও অন্ড্রি অনেকটা একইরকম মত প্রকাশ করে বলেন, সুর চাকমার চেষ্টা এবং একাগ্রতায় তারা বেশ সন্তুষ্ট। অল্প কয়দিনে তার দৈহিক গঠনের বেশ পরিবর্তন হয়েছে। একজন পেশাদার বক্সার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। চাকমাকে নিয়ে তারা বেশ আশাবাদী।
পাঁচবারের বিশ্ব কিক বক্সিং চ্যাম্পিয়ান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আলী জ্যাকো জানান, তিনি সম্পূর্ণ নিজ খরচে, নিজে স্পন্স করে সুর চাকমাকে লন্ডনে নিয়ে এসেছেন। তাকে তিনি পেশাদার বক্সার হিসেবে গড়ে তুলতে চান। গত ৩০ জুন লন্ডনে পৌছায় সুর চাকমা। স্পোর্টস ভিসায় সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচে সুর চাকমাকে ব্রিটেন এনেছেন বলে জানান আলী জ্যাকো। চাকমা আলী জ্যাকোর বাসায় থাকছে। আসার পর থেকেই সে বিখ্যাত পিকক বক্সিং জিমে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বাসায়ও তার বক্সিং প্রশিক্ষণের জন্য যাবতীয় সরঞ্জামাদীর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। সুর চাকমা বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত বক্সার।
বাংলাদেশে বক্সার আনতে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে আলী জ্যাকো বলেন, বক্সার হওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন এমন কয়েকজন তরুণকে তিনি বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে এনে তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। একজন সাবেক পেশাদার বক্সার হিসেবে নিজের মাতৃভুমি বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন থেকে বক্সার আনতে গিয়ে তিনি মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আদম পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। যে কারণে তাকে মিথ্যা মামলার হুলিয়া নিয়ে ব্রিটেনে ফিরতে হয়েছিলো।
এসব হয়রানির জন্য বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুসকে দায়ি করে জ্যাকো বলেন, বক্সার আনার বিনিময়ে আব্দুল কুদ্দুস বড় অংকের অর্থ দাবি করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর নিজের পছন্দের লোকদের যাতে লন্ডনে আনা হয়। জ্যাকো বলেন, তিনি চেয়েছিলেন বাছাই প্রতিযোগিতা করে সত্যিকার প্রতিভাবান তরুণদের লন্ডনে আনতে। আব্দুল কুদ্দুসের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে আদাম পাচার, চাঁদাবাজিসহ কয়েকটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় বলে দাবি জ্যাকোর।
বক্সিং ফেডারেশন থেকে বক্সার আনার যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, আদাম পাচার করতে চাইলে তিনি যে কাউকে বক্সার পরিচয় দিয়ে লন্ডনে নিয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন বক্সিং ফেডারেশন থেকে যদি কাউকে আনা হয়, সে ব্রিটেনে ভালো করতে না পারলেও বাংলাদেশে ফিরে আবার বক্সিং ফেডারেশনে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারতো।
লিখিত বক্তব্যে আলী জ্যাকো বলেন, তিনি ছয়জন বক্সারকে বাছাই করেছিলেন লন্ডনে আনার জন্য। কিন্তু মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে তাকে ফিরে আসতে হয়েছে। লন্ডন ফিরে তিনি মনস্থির করেন যে, অন্তত একজন তরুণকে হলেও তিনি বক্সিং প্রশিক্ষণের জন্য লন্ডনে নিয়ে আসবেন।  প্রমাণ করবেন আদম ব্যবসা করার উদ্দেশ্য তার কখনো ছিলো না। তিনি বাংলাদেশে বক্সার হতে চায় এমন তরুণদের স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন।
জ্যাকো বলেন, তিনি লন্ডনে ফিরে সুর চাকমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন। তাকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে লন্ডনে এনে উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রস্তাব করলে সে রাজি হয়। চাকমা তার পরিবারের সম্মতিতেই লন্ডনে এসেছে।
বক্সিং ফেডারেশনের দুর্নীতিবাজ কর্তাদের কারণে সম্ভাবনাময় তরুণরা বড় অসহায়। ব্রিটেনের হয়ে বক্সার হিসেবে পাঁচবার ওয়ার্ল্ড টাইটেল জিতার সুযোগ হওয়ার কারণে আমি বলতে পারি- বাংলাদেশের বক্সিং ফেডারেশনের তরুণরা কতটা বঞ্চিত। এই বঞ্চনা যতটা না দেশের আর্থিক অবস্থার কারণে তার চাইতে বেশি ফেডারেশনের দুর্নীতিবাজ কর্তাদের কারণে। যারা বক্সিং সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও ফেডারেশনকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সুর চাকমা আলী জ্যাকোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, লন্ডনে তিনি যে প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন তা বাংলাদেশে তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। পেশাদার বক্সারদের সাথে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।  আলী জ্যাকো তাকে যা বলেছিলেন, তার থেকে বেশি কিছু পাচ্ছেন বলে জানান চাকমা।
বক্সিং ফেডারেশনকে না জানিয়ে লন্ডনে আসার কারণ সম্পর্কে সুর চাকমা বলেন, আমি জানালে তারাতো আমাকে আসতে দিতেন না। নানা ঝামেলা করতেন। আমি ২০১৬ রিও অলিম্পিকের বৃত্তি পেয়েছিলাম। যাতে আমার প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিমাসে পাঁচশ ডলার করে দেয়ার কথা ছিলো। ফেডারেশনের কাছ থেকে এই বৃত্তির অর্থ আমি কখনো পাইনি। আমার সাথে আরো এক বক্সার এই বৃত্তি  পেয়েছে। তিনিও বৃত্তির অর্থ পচ্ছেন বলে শুনি নিই। নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমি এখানে এসেছি।
চাকমা বলেন, তিনি বাংলাদেশের ছেলে। তাই প্রফেশনাল প্রশিক্ষণ নিয়ে বক্সিংয়ে ভালো করতে পারলে, সেটা বাংলাদেশের জন্যই গৌরবের হবে। চাকমা সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
আলী জ্যাকো তার প্রতি যে বিশ্বাস রেখেছেন, তার যোগ্য মর্যাদা দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ পরিশ্রম করবেন বলে জানান সুর চাকমা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button