তিন মাসে আট হাজার বিদেশি পর্যটকের বুকিং বাতিল

রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে গত তিন মাসে অন্তত আট হাজার বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে তাদের ভ্রমণের বুকিং বাতিল করেছেন। বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ নিয়ে কাজ করা সংগঠন টুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) এ তথ্য জানিয়েছে।
সংগঠনটি বলছে, এখন যে অবস্থা চলছে, তাতে এপ্রিল পর্যন্ত টুর অপারেটরদের ক্ষতি গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকায়।
টোয়াবের পরিচালক তৌফিক রহমান বলেন, ‘এ বছর যত পর্যটক বুকিং দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে মাত্র এক-চতুর্থাংশ ভ্রমণে এসেছেন। এর মানে হলো, এই ভরা মৌসুমে আমাদের যত আয় হতো, সেটাও এক-চতুর্থাংশ কমে গেছে। মুনাফা তো হচ্ছেই না, উল্টো বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি আমরা। এপ্রিল পর্যন্ত এই মৌসুমে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।’
ডিসেম্বর থেকে মার্চ—এই সময়টা দেশের পর্যটন খাতের ভরা মৌসুম। এই সময়টাতে রাজনৈতিক সংঘাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন খাত।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, রাঙামাটি, বান্দরবান, কুয়াকাটা, সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় পর্যটক নেই বললেই চলে। এসব স্থানের হোটেল-মোটেল-কটেজ-গেস্টহাউসগুলো যেমন খালি পড়ে আছে, তেমনি রেস্তোরাঁগুলোতেও ব্যবসা হচ্ছে না।
পর্যটক খাতের ব্যবসায়ীদের আরেক সংগঠন টুরিজম ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের হিসাবে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটন খাতের প্রতিদিনের ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু হোটেল-রিসোর্টের ক্ষতিই ৫০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দেশে ৫ লাখ ৯৪ হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক এসেছেন। এর মধ্যে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।
টোয়াবের পরিচালক তৌফিক রহমান বলেন, ‘গত বছরও জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের ব্যবসা খারাপ ছিল। সে অনুযায়ী, এবার আমরা ৩০ শতাংশ বেশি বুকিং পেয়েছিলাম। কিন্তু এর কোনো ফল পেলাম না। বেশির ভাগ টুরই বাতিল হয়েছে।’
বেসরকারি টুর অপারেটর জার্নি প্লাসের ছয়টি পর্যটক দল গত তিন মাসে এ দেশে তাদের ভ্রমণ বাতিল করেছে। আর পাঁচটি পর্যটক দলের আয়তন কমে গেছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী তৌফিক রহমান বলেন, ‘গত শনিবার থেকে আমাদের একটি গ্রুপ টুর শুরু হয়েছে। এই টুরের জন্য ১৭ জন বুকিং দিয়েছিলেন। কিন্তু এসেছেন মাত্র চারজন। আবার একইভাবে ২০ জনের একটি টুর গ্রুপ হয়ে গেছে পাঁচজনের গ্রুপ।’
জাপানি পর্যটকদের এ দেশের ভ্রমণ নিয়ে কাজ করে বেঙ্গল টুরস। প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটি সাত থেকে আট হাজার পর্যটকের ভ্রমণ পরিচালনা করে। এ বছর তা অর্ধেকে নেমেছে। আরেকটি বড় ভ্রমণ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান টুর প্লানার্সের ৩০ থেকে ৩২টি পর্যটক দলের বুকিং গত তিন মাসে বাতিল হয়েছে।
আরেক টুর অপারেটর রিভারাইন টুরসের ১১টি পর্যটক দলের ভ্রমণ বাতিল হয়েছে। প্রতিটি দলে ১৬ জন করে ভ্রমণ করার কথা ছিল।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমাদের ছয়টি বিদেশি পর্যটক দল আসে। কিন্তু এর পর থেকে মার্চ পর্যন্ত যা বুকিং ছিল, সবই বাতিল হয়েছে। আগামী ৬ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার ১৮ জনের একটি পর্যটক দল আসার কথা। মার্চ পর্যন্ত সব বুকিং বাতিল হওয়ায় আমার প্রায় ৩০ হাজার ডলারের (প্রায় ২৩ লাখ টাকা) ক্ষতি হয়েছে।’
তিনিও জানান, গত বছরের চেয়ে এবার তিনি ৩২ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি বুকিং পেয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এর সুফল পাননি তিনি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button