সাতটি সূচকের রেড জোনে বাংলাদেশ

mccমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশনের (এমসিসি) মূল্যায়নের স্কোর কার্ডে এখনও সাতটি সূচকে রেড জোনে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে গত বছরের তুলনায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণসহ তিনটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। ৩ নভেম্বর চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) স্কোর কার্ড প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
এমসিসি মূল্যায়নের ২০টি সূচকের মধ্যে সাতটিতে রেড জোনে থাকায় রীতি অনুযায়ী এবারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডের (এমসিএফ) বড় অঙ্কের অনুদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। এ ফান্ডে যুক্ত হতে কয়েক বছর ধরে নানা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। তবে এবার দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সূচক গ্রিন বা সবুজ তালিকায় যাওয়ায় কিছুটা সম্ভাবনা জেগেছে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে আগামী ডিসেম্বরে এমসিসির বোর্ড সভায় বাংলাদেশকে নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানায় ইআরডি সূত্র।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রত্যেক সংগঠনের নিজস্ব মাপকাঠি থাকে। সুতরাং তারা কিসের ভিত্তিতে এটি মূল্যায়ন করেছে সেটি একটি বিষয়। তবে বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা অনুযায়ী দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে বলার সুযোগ নেই। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এখন অনেক তৎপর। ইতিমধ্যেই তার ফলাফলও দেখা যাচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার পাশাপাশি নিজেদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা যেমন কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির বিষয়েও পদক্ষেপ নিয়েছে দুদক। এসবের প্রভাবও পড়তে পারে স্কোর কার্ড তৈরির ক্ষেত্রে। তবে দেখার বিষয় গ্রিন জোনে থাকাটা কতটা টেকসই হয়।
এমসিসির স্কোর কার্ডে (১০০) যে সাতটি সূচকে বাংলাদেশ রেড জোনে রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- বাণিজ্য নীতিমালায় ১০০-এর মধ্যে স্কোর এসেছে ১৭, জমির অধিকার ও প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে ৩৫, ঋণ প্রাপ্তির সুযোগে ২০, স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয়ে ৮, প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি ব্যয়ে ৫, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় ২২ শতাংশ এবং তথ্যের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একশ’র মধ্যে ৪৫। অন্যদিকে গত অর্থবছরের স্কোর কার্ডে রেড জোনে থাকলেও নতুন স্কোর কার্ডে গ্রিন জোনে উঠে এসেছে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্বনীতি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার মান সূচকে। এ ক্ষেত্রে গত অর্থবছর একশ’র মধ্যে ৪৫। এ অর্থবছরে স্কোর উঠেছে ৫১-এ। রাজস্বনীতির ক্ষেত্রে গত অর্থবছর স্কোর ছিল ৪৮। কিন্তু এ অর্থবছর উঠে এসেছে ৫৪-এ। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার মানের ক্ষেত্রে আগে ছিল ৩৮, এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ৫১ শতাংশে।
অন্যদিকে আগে থেকেই গ্রিন জোনে থাকা অন্য সূচকগুলো হচ্ছে- মূল্যস্ফীতি, অর্থনীতিতে নারী-পুরুষের সমতা, ব্যবসা শুরু করা, টিকা দেয়ার হার, মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার হার, শিশুস্বাস্থ্য, রাজনৈতিক অধিকার, বেসামরিক লোকের স্বাধীনতা, সরকারের কার্যকারিতা এবং আইনের ভূমিকা।
ইআরডির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ড গঠন করে এবং এটি পরিচালনার জন্য ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন (এমসিসি)। ফান্ড গঠনের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। এমসিএফের আওতায় স্টেট ডিপার্টমেন্ট দুটি কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচিত দেশগুলোকে সহায়তা করে থাকে। এর একটি হচ্ছে কম অঙ্কের সহায়তা প্রদান। এ কর্মসূচির আওতায় সাধারণত ১০ কোটি থেকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে। অন্যটি হচ্ছে বড় অঙ্কের সহায়তা প্রদান। এর আওতায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে বিভিন্ন অংকের অনুদান দেয়া হয়ে থাকে। এ ফান্ডের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যুক্ত করতে প্রতি বছর বৈঠক করে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন (এমসিসি)।
সূত্র জানায়, প্রথমদিকে ১৭টি সূচক থাকলেও সর্বশেষ ২০১২ সালে ৮টি নতুন সূচকসহ মোট ২০টি সূচক যুক্ত করা হয়। ওই বছরই সর্বশেষ মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। সে সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরের সময় ওই ফান্ডে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তাকে অনুরোধ জানানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশের প্রতিনিধি। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতি বছর বাংলাদেশের পার্টনারশিপ ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এর মধ্যে এমসিএফের বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে টেকনিক্যাল টিম পাঠাতে বলেছিল। কিন্তু টেকনিক্যাল টিম পাঠানো হলেও চ্যালেঞ্জ ফান্ডে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি নেই।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button