বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

প্রমাণের আগেই গণমাধ্যমে উপস্থাপন কি মিডিয়া ট্রায়াল?

BBC Banglaবাংলাদেশে স্পর্শকাতর বিভিন্ন ঘটনায় সন্দেহভাজনদের আটকের পরপরই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করানোর বিষয়টি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গণমাধ্যম অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এমনভাবে উপস্থাপন করে যাতে বিচারের আগেই অভিযুক্তরা জনমনে দোষী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যান।
এধরণের ঘটনা মানবাধিকারের লঙ্ঘন উল্লেখ করে তারা বলেছেন হাইকোর্টেরও নির্দেশনা রয়েছে গ্রেফতার বা সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর কোন ব্যক্তিকে যেন গণমাধ্যমের সামনে হাজির না করা হয়।
কিন্তু স্পর্শকাতর অনেক মামলাতেই সন্দেহভাজনদের আটক করা হলে তাদের ঘটা করে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনের সংস্কৃতি চালু হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন গ্রেফতারের পরে সন্দেহভাজনদের এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেটি তাদের মানবাধিকার ক্ষুন্ন করে।
তিনি আরও বলেন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন সেটি মিডিয়া ট্রায়াল হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন ‘সস্তা জনপ্রিয়তা’র উদ্দেশ্যে আইন শৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্দেহভাজনদের এভাবে উপস্থাপন করে থাকে।
অনেক সময় গণমাধ্যমের সামনে সরাসরি উপস্থাপন না করলেও আটক হওয়া সন্দেহভাজনদের নাম, পরিচয় ও ছবি এমন ভাবে প্রকাশ করা হয় যা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে।
সমপ্রতি জঙ্গি সংগঠনকে অর্থায়নের অভিযোগে আটক একজন আইনজীবীর স্বজন বলছিলেন এমন ফলাও করে ছবি ছাপা হয়েছে তাতে বিচারের আগেই অপরাধী হিসেবে জনমনে ধারণা তৈরি হচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন অনেক সময় সন্দেহভাজনরা আদালত থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হন।
কিন্তু গ্রেফতার করা মাত্রই গণমাধ্যমে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টাকে যথাযথ মনে করেন না গণমাধ্যম বিশ্লেষক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
মি.জাহাঙ্গীর বলেন , “গণমাধ্যমের কাজ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা নয়, কিংবা কোনো বিশেষ বাহিনীকে বাহবা দেয়া নয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন আমরা আসল ব্যক্তিকে পাওয়া যাচ্ছে ”।
তিনি আরো বলেন, “কোন ঘটনায় অভিযুক্তদের তথ্য নাম সহ ছাপানো যাবে বা নিউজটা কাভার করা যাবে কিন্তু ছবি এমন ভাবে ছাপানো হয় যেন চোর ধরা পড়েছে”।
তিনি বলেন- অভিযুক্ত ও প্রমাণিত এ দুটো শব্দের মধ্যে যে আইনগত পার্থক্য আছে সে বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন উপেক্ষা করে তেমনি গণমাধ্যমেও সেটি উপেক্ষা করা হয়।
এদিকে গণমাধ্যমকে নিয়ে যেসব অভিযাগ তোলা হচ্ছে সে বিষয়ে অনেকটাই একমত বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিশনের বার্তা বিভাগের প্রধান মোস্তফা ফিরোজ।
তিনি বলেন, “সন্দেহভাজনদের যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে সেটা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। মিডিয়াগুলো অনেক ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মিডিয়া উইং হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে”।
মি. ফিরোজ বলেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্দেহভাজনদের যেভাবে উপস্থাপন করে সেটা কতটা সত্য সে বিষয়ে পরবর্তীতে অনুসন্ধান করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রমও হারিয়ে যায়।
তিনি বলেন, “আমরা সবাই ভুল করছি। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের আরও সচেতন হওয়া দরকার।”
২০১২ সালে একজন বিচারক ফেনসিডিল সহ আটকের পর হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলো যে গ্রেফতার বা সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর কোনো ব্যক্তিকে যেন গণমাধ্যমের সামনে হাজির না করা হয় কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেটি মানা হচ্ছে না।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া না গেলেও তারা বলছে ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করেই গণমাধ্যমের সামনে আনা হয় স্বচ্ছতার খাতিরে।
সেক্ষেত্রে তাদের দাবি যাদের উপস্থাপন করা হয় তাদের অভিযুক্ত হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়, অপরাধী হিসেবে নয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button