টি-২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপ

বর্ণিল সাজে রাজধানী

T 20 খালিদ সাইফুল্লাহ: টি-২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলে বর্ণিল সাজে সাজছে রাজধানী। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে প্রায় অর্ধশত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করছে। এ কাজে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজ অর্থায়নে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করছে। ইতোমধ্যে কনস্ট্রাকশনের কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে। বাকি কাজও দ্রুতই শেষ হবে বলে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
টি-২০ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক এ আসরটি শুরু ১৬ মার্চ। এবার আন্তর্জাতিক এ আসরটির আয়োজক বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক এ ক্রিকেট আসরে খেলোয়াড় ও অতিথিদের চলাচল যাতে আরামদায়ক ও উপভোগ্য হয় সে জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের নাম ‘ইমপ্রুভমেন্ট অব রোড ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড বিউটিফিকেশন ওয়ার্কস অ্যারাউন্ড মিরপুর শেরেবাংলা ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম অ্যান্ড মেজর রোডস অব ঢাকা সিটি ফর আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ টি-২০ বাংলাদেশ-২০১৪।’
এ প্রকল্পের মাধ্যমে বনানী রেলক্রসিং থেকে মহাখালী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বাংলামোটর হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত সড়ক, পল্লবীর কালশী রোড, মিরপুর ১২ নম্বর সেকশন থেকে ১০ নম্বর পর্যন্ত সড়ক, ১০ নম্বর সেকশন থেকে ১৪ নম্বর হয়ে কচুতে পর্যন্ত সড়ক এবং মিরপুর স্টেডিয়ামের আশপাশ সড়ক-ফুটপাথ মেরামত করা হয়েছে। মেরামতের জন্য প্রস্তাবিত সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩ কিলোমিটার। সংস্কারের পর সড়কগুলোতে রোড মার্কিং ও জেব্রা ক্রসিং দেয়া হয়েছে। কোথাও এখনও কাজ চলছে। পাশাপাশি সড়কবাতিও মেরামত করে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
টি-২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলে রাজধানীকে সাজানোর কার্যক্রমের মূল দায়িত্ব পালন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এ কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডিএনসিসিকে সহায়তা করছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ উদ্যোগে এগিয়ে এসেছে সৌন্দর্য বর্ধনকাজে। ডিএনসিসি কর্তৃপ জানিয়েছে, টি-২০ উপলে হাতে নেয়া প্রকল্পের মূল কাজ শেষ হয়েছে, বাকি কাজ কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ হবে।
উত্তরা, মিরপুর, গুলশান, বনানী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার এলাকায় গত কয়েক দিন রাত ও দিনে সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সড়কসংস্কার, সড়কদ্বীপের সৌন্দর্যবর্ধন, ময়লা আবর্জনা অপসারণ কাজে কর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সড়কগুলোর কোথাও চলছে সড়কবাতি পুনঃস্থাপন, কোথাও সড়কদ্বীপে তৈরি সৌন্দর্যবর্ধক স্থাপনায় চলছে ফিনিশিং ও রঙতুলির কাজ। মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে সৌন্দর্যবর্ধক ব্যানার, ফেস্টুন টাঙানো হচ্ছে। তাতে ক্রিকেটসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ঠাঁই পেয়েছে।
চিরচেনা সড়কগুলো ঘুরে অচেনা মনে হচ্ছে। ধুলোবালি নেই, ঝকঝকে তকতকে। সড়ক ডিভাইডারে বর্ণিল আলোকচ্ছটা। মাঝের গাছগুলোতে লাল-নীল-সবুজ মরিচবাতি। ফোয়ারায় আলো-ছায়ার মায়াবী খেলা। শহরের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে, লেগেছে তুলির ছোঁয়া। সড়কদ্বীপে দেশী-বিদেশী গাছের বিপুল সমাহার।
মহানগরীর বনানী রেলক্রসিং থেকে কাকলি মোড় পর্যন্ত সড়কদ্বীপের সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রমের দায়িত্ব নৌবাহিনীর। সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রমের অবস্থা সম্পর্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লে. কর্নেল রায়হান বলেন, সড়কদ্বীপের গাছপালার আবর্জনা পরিষ্কার, পানি ছিটানো, পরিপাটি রাখা এবং সড়কদ্বীপের কিছু সংস্কারকাজ করা হয়েছে। পাশাপাশি আশপাশ পুরো এলাকার সার্বিক মানসম্মত পরিবেশ বজায় রাখায় সচেষ্ট রয়েছি।
মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে ১৪ নম্বর ভাসানটেক বাজার পর্যন্ত সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছে সাইনভ্যালি অ্যাডভারটাইজিং। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আবুল বাশার জানান, আমরা নিজ অর্র্থে গাছ লাগানো ও রঙের কাজ করছি। গাছ লাগানো হয়েছে। নিজেদের অর্থব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, এর বিনিময়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের স্বার্থ আদায় হবে।
মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে মিরপুর-১ নম্বর সনি সিনেমা হল পর্যন্ত সৌন্দর্যবর্ধনকার্যক্রম করছে গ্রামীণ ব্যাংক। এ সম্পর্কে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার রওনোকুল খান বলেন, আমরা সড়কদ্বীপের গাছপালা পরিষ্কার করছি, পানি দিচ্ছি। এ এলাকার সড়ক ও সড়কদ্বীপ পরিপাটি রাখার কাজ করছি।
এ দিকে জাহাঙ্গীর গেট থেকে বনানীর কাকলী মোড় পর্যন্ত ভিআইপি সড়কের পৌনে তিন কিলোমিটার এলাকা সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্ব নেয় ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির সিইও আবেদ মনসুর জানান, তিলোত্তমা নগরীর একটু স্বাদ পাইয়ে দিতে এখানে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মুক্তিসংগ্রাম ও অবারিত সবুজের সমন্বয়ে এ অংশের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হাতে নেয়া হয়। দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের প্রতিকৃতির পাশাপাশি তুলে ধরার পরিকল্পনা নেয়া হয় তাদের কর্মজীবন ও অবদান। একই সাথে সার্বণিক প্রযুক্তির কাছাকাছি থাকতে বিনামূল্যে ওয়াইফাই ব্যবহারের সুবিধা চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়।
আবেদ মনসুর অভিযোগ করেন, তার এই কাজে বাদ সেধেছে সিটি করপোরেশন। ডিএনসিসি তার নিজ অর্থায়নে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ ভেঙে ফেলতে বলেছে। এ কারণে গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি কাজগুলো ভেঙে ফেলেন বলে জানান। তিনি এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ করার উদ্যোগ নিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি টাকার কাজ শেষ করা হয়েছে। কিন্তু ডিএনসিসির নির্দেশে সে কাজ ভেঙে ফেলতে হলো। ডিএনসিসি ওয়াইফাইও দিতে দিচ্ছে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজের কাছে ডিএনসিসির কাজ ম্লান হয়ে যাওয়ায় তারা করতে দিচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
ডিএনসিসির বর্জ্য বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা বিপন কুমার সাহা নয়া দিগন্তকে বলেন, রাজধানীর সৌন্দর্যবর্ধনের ক্ষেত্রে এটা একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ। কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরই মূলত আসল সৌন্দর্য দৃশ্যমান হবে। অনেকে কাজটি শেষ করার আগেই এর মান ও অন্যান্য বিষয়ে মন্তব্য করছেন। এতে কাজের গতি কমে যায়। তা ছাড়া অহেতুক সমালোচনা জনকল্যাণে বেসরকারি খাতের এগিয়ে আসাকে নিরুৎসাহিত করে।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম এনামুল হক বলেন, এখন আমাদের অফিস ২৪ ঘণ্টা। সড়কসংস্কার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যবর্ধনের সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে প্রশাসক মহোদয় এবং আমি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছি।
তিনি বলেন, কনস্ট্রাকশনের কাজ শেষ হয়েছে। টি-টোয়েন্টি উপলে সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ শেষ করতে জোর প্রচেষ্টা চলছে।
২০১১ সালে আইসিসি বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকও ছিল বাংলাদেশ। ঢাকা-চট্টগ্রামে বিভিন্ন দলের খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখনও রাজধানীর বনানী, মিরপুর থেকে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button