জঙ্গিবাদের নামে মুসলিম বিদ্বেষই যুক্তরাষ্ট্রের মূল সমস্যা

USAপ্রায়ই প্রশ্ন ওঠে মুসলমানরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের নিন্দা করেন না কেন! সওয়াল-জবাব অনুষ্ঠানগুলোর নিয়মিত অঙ্গে পরিণত হয়ে উঠেছে প্রশ্নটি। এক পর্যবেক্ষকের মন্তব্য হচ্ছে, দশ বছরের বেশী সময় ধরে এমন প্রশ্নের মোকাবেলা করতে গিয়ে তিনি হতবিহ্বলতা ও মনোকষ্টে ভুগতে শুরু করেছেন। মুসলমানরা সন্ত্রাসের নিন্দা জানিয়ে হাজার হাজার বিবৃতি জারি করেছেন। সন্ত্রাসের নিন্দা জানিয়ে সম্পাদকীয় মন্তব্য প্রচারিত হয়েছে ও হচ্ছে। ইসলামের বিধি বিধানের উল্লেখসহ মুসলিম ধর্মীয় নেতারা সন্ত্রাসের নিন্দা জানিয়ে যাচ্ছেন এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট ব্যক্ত করে যাচ্ছেন। কিন্তু এতোসব সত্ত্বেও মুসলিম বিদ্বেষীরা মুখর রয়েছেন সমস্ত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য শুধুই মুসলমানদেরই দোষী ঠাওরাতে। মুসলমানদের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসের নিন্দায় প্রচারিত যাবতীয় বক্তৃতা বিবৃতি জেনেশুনে অগ্রাহ্য করে ঘুরেফিরে মুসলমানদেরই সন্ত্রাসের জন্য দোষী ঠাওরানোর মুসলিম বিদ্বেষীদের তৎপরতায়।
পর্যবেক্ষক বলছেন, এ অবস্থায় হতবিহ্বল না হয়ে পারা যায় না। পর্যবেক্ষকের মনোকষ্টের কারণ হচ্ছে অমুসলিমদের বদ্ধমূল মুসিলম বিদ্বেষী সংস্কার। ৯/১১ হামলার পর থেকেই এই যুক্তিবর্জিত মানসিক অবস্থানে মুসলিম বিদ্বেষীদের অনড় থাকতে দেখা যাচ্ছে। ১৫ এপ্রিল বোস্টন ম্যারাথনে বোমা হামলার ঘটনা সংঘটকদের পরিচয় প্রকাশিত হওয়ার আগেই, দেখা গেছে, মুসলিম মার্কিনীরা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
কিছু সমীক্ষক বোমা হামলাটি সরকার বিরোধী উগ্র মার্কিন দক্ষিণপন্থীদের দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেলো, দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী অথবা রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে বোস্টন সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে তখনো পর্যন্ত কোনো বক্তব্য পেশ করা হলোনাÑ যেমনটি মার্কিন মুসলমানরা করেছিলেন।
মুসলিম বিদ্বেষী উগ্র মার্কিন দক্ষিণপন্থীরা বা রিপাবলিকানরা টিমোথি ম্যাকভের জঘন্য কর্মকা-ের নিন্দা জানাবারও কোনো প্রয়োজন বোধ করেননি।
ওকলাহোমা সিটিতে ভয়াবহ বোমাহামলার জন্য ম্যাকভেকেই দোষী পাওয়া গিয়েছিল। বলা হয়, এমন বীভৎস অভ্যন্তরীণ বোমাবাজির ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতীত ইতিহাসে আর ঘটেনি।
বিশেষভাবে লক্ষণীয়, ম্যাকভের সন্ত্রাসী হামলার দায় আরোপ করা হয় শুধু মাত্র ব্যক্তি ম্যাকভের ওপরেই এবং উল্লেখ করা হয় ম্যাকভের একক কর্মকা-ের জন্য যে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও জাতিগত গোষ্ঠীর সে প্রতিনিধিত্ব করে, তাদের কোনভাবেই দোষী ঠাওরানো যাবে না। মার্কিন রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোও ম্যাকভের সাহিংসতার নিন্দাসূচক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ম্যাকভেকে মার্কিন রক্ষণশীল গোষ্ঠীর যদি প্রতিনিধি বলতে হয়, একইভাবে জার্নায়েভ ভাইদের আখ্যায়িত করতে হয় মুসলমানদের প্রতিনিধি হিসেবে। অথচ দেখবার মতো বিষয় ম্যাকভের কর্মের জন্য মার্কিন রক্ষণশীলদের যখন দোষী ঠাওরানো হচ্ছে যা, ঠিক তখনই মার্কিন মুসলিমদের বলা হচ্ছে জার্নায়েভ ভাইদের বোমাবাজির দোষ মুসলমানরা এড়িয়ে যেতে পারেন না।
উগ্র সহিংসতার ঘটনায় মার্কিন দক্ষিণপন্থীদের জড়িত পাওয়া যায়- যতো বেশী সংখ্যায় মুসলমানদের সেখানে পাওয়া যায় খুব কম সংখ্যায়। ১৯৯৫-এর পর থেকে মার্কিন অভ্যন্তরীণ সহিংসতার ৫৬ শতাংশ ঘটনায় জড়িত থেকেছে মার্কিন উগ্র দক্ষিণপন্থীরা। মুসলিম উগ্রপন্থীর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মাত্র ১২ শতংশ। ইসলামের নমে সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান বরাবর নিন্দা জানিয়ে এসেছেন। ২০১১ সালের একটি জনমত জরিপে এই তথ্য স্পষ্ট প্রকাশ পায়। ৯/১১ ঘটনার ১০ বছর পর একশটির বেশি দেশে বিশেষত মুসলিম অধ্যুষিত দেশে জনমত জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, বেসামরিক জনগণের ওপর সন্ত্রাসী হামলার তারা ঘোরবিরোধী। ধর্মীয় আনুগত্যের প্রশ্নে কতিপয় সন্ত্রাসী মুসলিমের সঙ্গে নিজেদের অভিন্নতা অস্বীকার না করেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায় যাবতীয় সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রত্যাখ্যান করে চলেছেন।
লক্ষণীয় ধর্মীয় পরিচিতিতে যে হামলাগুলো ঘটানো হচ্ছে, ঘটনার পূর্বাপর বিশ্লেষণে প্রকাশ পায় যে, সহিংস সন্ত্রাসের সেই ঘটনাগুলোর মূলে রয়েছে রাজনৈতিক কারণ, ধর্মীয় নয়। বোস্টন বোমাবাহী ও দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে বৃটিশ সৈনিক উলউইচের হত্যাকা-ে জড়িত সন্ত্রাসীরা জীবনযাত্রায় সম্মুখীন বিভিন্ন সমস্যা ও তাদের ক্ষোভের-আক্রোশের কথা স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন। সন্ত্রাসী তৎপরতা সংঘটনকালে ধর্মীয় স্লোগানে তারা সোচ্চার হয় মূলত যে সাংস্কৃতিক পটভূমিতে তারা বড়ো হয়ে উঠেছেন, সেখানে জীবনের যাবতীয় কর্মকা-ে ধর্মের ভূমিকাকেই তারা প্রধান হিসেবে দেখে এসেছেন তারই জন্য। কিন্তু সন্ত্রাসী হামলার দিকে তারা তাড়িত হয় ধর্ম নয়, বরং তাদের সমকালীন জীবনে উদ্ভূত বিভিন্ন আর্থিক-রাজনৈতিক সমস্যার কারণে। তাদের জীবনে সৃষ্ট সমস্যাগুলোর নিরাকরণের কোনো উদ্যোগ উপস্থিত না দেখতে পেয়ে সন্ত্রাসের পথে এগিয়ে যেতে তারা তৎপর হন। দু’বছর আগে নরওয়েতে এন্ডার্স রেভিকের ঘটানো চাঞ্চল্যকর সন্ত্রাসের প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়। তার ঘোষণা ছিল ইউরোপে আরব সংখ্যা বৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান আরবী প্রভাবের দূরীকরণ করার জন্যই মর্মান্তিক হামলায় বহু লোকের জীবননাশের মধ্যদিয়ে সমস্যার দিকে দেশবাসীর সে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিল। ব্রেভিকের কৃতকর্মের জন্য নরওয়ের অমুসলিমদের দোষী ঠাওরানো হয়নি। মার্কিন মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে কিছু দলছুট মুসলমানের সন্ত্রাসী অপকর্মের জন্য কোনোভাবেই দোষী ঠাওরানো যায় না। সন্ত্রাসের দায় মার্কিন মুসলমানরা বরাবর প্রত্যাখ্যান করে এসেছেন। উগ্র মার্কিন দক্ষিণপন্থীদের সমর্থনে রিপাবলিকান পার্টি যে ভূমিকা নিয়ে থাকে, মুসলিম সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে মার্কিন মুসলিম সম্প্রদায় সে ভূমিকা কোনো সময়েই নেননি। আল-কায়েদার কার্যকলাপের নিন্দায় মার্কিন মুসলিমরা সবসময় সোচ্চার থেকেছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button