এক লাখ সিরীয়কে ইফতার করিয়েছে ইস্তাম্বুলভিত্তিক সাহায্য সংস্থা

syria-iftarইসলামের ইতিহাসে সিরিয়া এক বড় স্থান দখল করে আছে। মহানবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পৃথিবীতে আগমনের আগে ও পরে মক্কা ও এ অঞ্চলের লোকজন তাদের বিভিন্ন মালামাল সংগ্রহের জন্য সিরিয়ায় যেতেন। মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বয়স যখন মাত্র ১২ বছর তখন তিনি চাচা আবু তালিবের সাথে বাণিজ্য কাফেলার সঙ্গী হয়ে সিরিয়া যাবার জন্য জিদ ধরেন। প্রগাঢ় মমতার কারণে আবু তালিব আর নিষেধ করতে পারেননি। যাত্রাপথে বসরা পৌঁছার পর কাফেলাসহ আবু তালিব তাঁবু ফেললেন। সে সময় আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত রাজ্যের রাজধানী বসরা অনেক দিক দিয়ে সেরা ছিল। কথিত আছে, শহরটিতে জারজিস সামে এক খ্রিস্টান পাদ্রী ছিলেন যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি তার গির্জা থেকে বেরিয়ে এসে কাফেলার মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন। এ সময় তিনি বালক মুহাম্মদ (সঃ)-কে দেখে শেষ নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন। কারণ তিনি তার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে লক্ষ্য করেন যে, সব গাছপালা, পাথর এই বালকটিকে সেজদা করছে। তিনি স্বগতোক্তি করেন, ‘এতো সেই সাইয়েদুল মুরসালীন, অতীতের সমস্ত নবী যার আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন’। তিনি আবু তালিবকে মুহাম্মদকে সিরিয়ায় নিয়ে যেতে নিষেধ করেন; কারণ সেখানকার ইহুদীরা তার ক্ষতি করতে পারে। পাদ্রীর কথা শুনে মুহাম্মাদ (সঃ)-কে কয়েকজন ভৃত্যের মাধ্যমে মক্কায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।
মক্কার কাফেররা সিরিয়া থেকে রসদ সংগ্রহ করে ফেরার পথে তাদের বাধা দেবার প্রস্তুতির ঘটনা নিয়ে ইসলামের ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হয়। বিশিষ্ট সাহাবী মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু খলীফা হওয়ার পর সিরিয়া থেকে এক প্রকার লাল মোটা দানাবিশিষ্ট গম আমদানি করেন। এ সময় খুৎবা প্রদানকালে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করছি, সিরিয়ার গম এক মুদ আর মদীনার গম দুই মুদ সমান। অনুরূপ সিরিয়ার গম ‘এক সা’ আর মদীনার গম ‘দুই সা’ মূল্যের দিক দিয়ে সমান। বর্তমানে মদীনার বাজারে সিরিয়ার গম আমদানি করা হয়েছে। অতএব সিরিয়ার গম ‘আধা সা’ ফিতরা দিলে চলবে। একথা বলার সাথে সাথে হাজার হাজার জনতার মধ্য থেকে প্রবীণ সাহাবাগণ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) সরাসরি এর প্রতিবাদ করেন। এর মাধ্যমে ‘আধা সা’ ফিতরার চিন্তাভাবনার পরিসমাপ্তি ঘটে। বিশেষভাবে আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জুমার মসজিদে অসংখ্য লোকের মাঝে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি ‘আধা সা’ ফিতরার কথা কেন বললে? মুয়াবিয়া নিরুপায় হয়ে বলেছিলেন, ‘এটা আমার নিজস্ব মতামত’। (বুখারী ১ম খন্ড)।
মূলকথা, সিরিয়া অতি প্রাচীনকাল থেকেই একটি সমৃদ্ধ দেশ। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে দেশটি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। এক কোটিরও বেশি মানুষ বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হয়েছে। নিহত হয়েছেন লক্ষাধিক। আর যারা প্রচন্ড যুদ্ধের মাঝেও দেশের মাটি আঁকড়ে ধরে রয়েছেন তারা দিনাতিপাত করছেন নিদারুণ অভাবে। পবিত্র রমজান মাসে তাদের জন্য সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে অনেকেই।
ইস্তাম্বুলভিত্তিক একটি সাহায্য সংস্থা রমজানের শুরু থেকে ১ লাখ সিরীয়কে ইফতার করিয়েছে। সংস্থার কর্মকর্তারা একথা জানিয়েছেন। সিরিয়ায় হিউম্যানিটারিয়ান রিলিফ ফাউন্ডেশন (আইএইচএইচ)-এর গণমাধ্যম উপদেষ্টা সেলিম তসুন বলেন, রমজান জুড়ে ইদলিব, হামা, আলেপ্পো এবং লাটাকিয়ার অভাবী লোকগুলোর মধ্যে সংস্থার সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘রমজানের শুরু থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত তারা ১ লাখ সিরীয়র মধ্যে ইফতার বিতরণ করেছেন’।
আইএইচএইচ সিরিয়ায় তাদের ভ্রাম্যমাণ কিচেন ও ফুড ব্যাংকে ইফতার রান্না করে। এছাড়াও সংস্থা যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরীয় পরিবারগুলোর মাঝে প্যাকেজ খাবার ও কাপড় বিতরণ করছে বলেও জানান সংস্থার কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button